রাজশাহী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


আবরার হত্যা মামলার চার্জশিট এ সপ্তাহেই


প্রকাশিত:
২ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৩১

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ১২:৩৯

মনিরুল ইসলাম। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কার কী ভূমিকা ছিল তা নিরুপণ করা হচ্ছে। মামলার চার্জশিট নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দাখিল করা হবে।


এই তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) হলে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘আবরার হত্যাকাণ্ডের জন্য ছাত্র রাজনীতি না মূল্যবোধের অবক্ষয়, কোনটি দায়ী’-শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের পরিচয় যাই হোক মূলত তারা দুর্বৃত্ত ও অপরাধী। রাজনীতি থেকেও তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা এই মামলার চার্জশিট নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দাখিল করবো। সেখানে প্রাসঙ্গিক ডকুমেন্ট হিসেবে সিটিটিভি ফুজেটও দাখিল করা হবে।’

তিনি বলেন, কোনো ছাত্র সংগঠন অন্য ছাত্র বা সাধারণ কাউকে হত্যা বা মারধরের নির্দেশ দেয় না। বরং রাজনীতির প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে কেউ কেউ নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে থাকে। এটা রাজনীতির দায় নয়। বরং ওই সব অপরাধী দুর্বৃত্তের দায়।

আবরার হত্যার ঘটনায় ২১ আসামি গ্রেফতার হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরপরই পুলিশ ১০ জনকে আটক করে। পরে জানা যায় তারা সবাই ওই মামলার আসামি। হত্যা মামলায় ১৯ জন আসামির বাইরেও তদন্তে বেশ কয়েকজনকে জড়িত পাওয়া গেছে। ১৯ আসামি হলেও এখন পর্যন্ত আমরা গ্রেফতার করেছি ২১ জনকে। এদের মধ্যে অনেকেই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যার ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল সেটা আসামিরা বলেছে।’

আবরার হত্যার তদন্তে পুলিশ কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয়েছিল কিনা- জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সঠিক এবং উপযুক্ত তথ্যের প্রতিবন্ধকতা ছিল। এছাড়া অন্য কোনো ঝামেলা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার রাতে টহল পুলিশের দল কোনো মাধ্যমে তথ্য পেয়ে সেখানে যায়। কিন্তু অনুমতি ছাড়া কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে পুলিশ প্রবেশ করা যায় না এমন একটা নিয়ম ছিল। কিন্তু পুলিশ যদি ওই রাতে সঠিক তথ্যটি পেতো যে আবরার নামে কোনো ছাত্রকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করা হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই পুলিশ ওই নিয়মকে অমান্য করে ভেতরে প্রবেশ করত। কারণ তখন নিয়মের অপরাধ ঠেকানো বেশি জরুরি।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে ছায়া বিতর্কে অংশ নেন তেজগাঁও কলেজ ও সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেনও জানান, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আবরার হত্যার চার্জশিট জমা দেয়া হবে।

তিনি বলেন, বুয়েটে আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আমরা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অভিযোগপত্র দেয়ার কথা বলেছিলাম। আমরা এ লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের তদন্ত কাজ প্রায় সম্পন্ন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে।

হত্যাকাণ্ডের মোটিভের বিষয়ে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মোটিভ যাই থাকুক, কাউকে হত্যা করার অধিকার কারো নেই। আমরা এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি, শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদকে মারধর করা হয়েছিলো।

জড়িতদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজাহার বহির্ভুত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ২১ জনের মধ্যে ৭ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডস্থল বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ক্যান্টিন বয়, শিক্ষক, গার্ডসহ কয়েকজন ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার বস্তুগত সাক্ষ্য এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। মামলার তদন্তে যেসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করা দরকার, তা সম্পন্ন করা হয়েছে।

গ্রেফতার ২১ জনের বিরুদ্ধেই প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা বাতেন বলেন, তাদের নাম উল্লেখ করেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে ৫ অক্টোবর শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।

তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।

হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলিট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

 

আরপি/ এএস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top