রাজশাহী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় বাঘা পদ্মার চরে গরু পালনকারীদের লোকসানের আশঙ্কা


প্রকাশিত:
১২ জুলাই ২০২০ ২৩:৩৮

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:১৯

ছবি: পদ্মার চরে গরু পালনকারী

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর চরে করোনার কারনে গরু পালনকারীরা এবার লোকসানের আশঙ্কা করছেন। পদ্মার মধ্যে ১৫টি চরের আয়তন ৪৬ কিলোমিটার। জনসংখ্যা রয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার। জমির পরিমান ৬ হাজার একর। পতিত জমি রয়েছে ১ হাজার ২০০ একর। এই চরে মানুষের বসবাস প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। চরে প্রত্যেক পরিবারে সর্বনিন্ম ২টা থেকে ১৫টি পর্যন্ত গরু রয়েছে। তারা সকাল হলেই পাল বেধে পতিত জমিতে গরু চরাই।

এসব গরু তারা রাজশাহী সিটিহাট, রুস্তমপুরহাট, কাকনহাট, তেবাড়িয়াহাট থেকে ক্রয় করে নিয়ে আসে। তারা একটি গরু ৯-১০ মাস লালন পালন করে কোরবানির ঈদের এক মাস আগে প্রস্তুত করে। একটি গরু প্রতি খরচ হয় প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। ফলে গরু উৎপাদন খরচ বাড়লেও করোনা কারণে কমে গেছে দাম। এবার করোনার কারণে লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা গরু পালনকারীরা। তারা আশঙ্কা করছেন প্রতিটি গরু প্রতি লোকসান হবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

তারা অনেকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু ক্রয় করে পালন করে। লোকসান হলে একদিকে ঋণের কিস্তি অন্যদিকে পালনকারীরা পড়বে বেকায়দায়। তারা নেপালি, অস্ট্রেলিয়ান, ফিজিয়ান, হরিয়ানাসহ নানা জাতের গরু পালন করে। গরু পালনে লাভজনক হওয়ায় বসতবাড়িতে এগুলো পালন করা তাদের প্রধান কাজ। সারা বছর গরু পালনের পর কোরবানির ঈদের আগে কাঙ্ক্ষিত বিক্রির সময়। কোরবানির চাহিদা লক্ষ্য করেই শেষ মুহূর্তে পরিচর্যা ব্যস্ত। তবে স্বপ্নের গরু বিক্রির টাকায় মিটবে পরিবারের চাহিদা। এছাড়া বাড়তি অর্থ দিয়ে আবারও নতুন গরু কেনার লক্ষ্য রয়েছে প্রতিটি পরিবারের। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরা থেকে যাবার আশঙ্কা প্রতিটি গরু পালনকারীদের।

পদ্মার মধ্যে কালিদাসখালী চরের গরু পালনকারী আসলাম উদ্দিন বলেন, চরের একেকটি বাড়ি যেন একেকটি খামার। পরিবার প্রধান নারী-পুরুষ মিলে গরুর পরিচর্যা করে। গরুগুলো পরম যত্নে নিজের সন্তানের মতই আদর করা হয়। এই গরুগুলো যেন বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। কোরবানির পশু হাটে নায্যমূল্য নিশ্চিত হলে তারা এবারও লাভবান হবেন। কিন্তু করোনার কারণে এবার লোকসান হবে। আমি সিটি হাট থেকে গত কোরবানির ঈদের এক মাস পর তিনটি গরু ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে করে লালন পালন করছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। ঈদের আর মাত্র তিন সপ্তাহের মতো আছে, কিন্তু কোন বেপারি এখন পর্যন্ত আসেনি। এটা নিয়ে চিন্তায় আছি।

এদিকে সোহেল রানা স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি গরু ক্রয় করে পালন করছে। যে খরচ হয়েছে, সেটা বাদ দিয়ে গরু বিক্রি করা হলেও তেমন কোন লাভ হবে না। এবার করোনার কারনে গরুর চাহিদা না থাকায় ঋণ পরিশোধ নিয়ে সঙ্কায় রয়েছে।

আবদুল মান্নান বলেন, গত কোরবানির পর ৮০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি বাছুর গরু কেনা হয়। লালন পালনে খরচ গেছে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে গরুটির দাম উঠেছে এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা। তাই তিনি সরকারিভাবে গরু পালনকারীদের জন্য প্রণোদনা দাবি করেন।

গুলবার আলী ঈদকে সামনে রেখে ৩টি গরু প্রস্তুত করেছেন। খাদ্যসহ উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে ব্যয় বেড়েছে। করোনার কারণে এবার ক্রেতাদের কোনো সাড়া মিলছে না। তবে এবার অনেক গরু পালনকারীরা পুঁজি হারিয়ে ফেলবে। গত কোরবানির ঈদে বেপারিরা চরের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরুর দাম করে বায়না করতেন। কিন্তু এবার করোনার কারণে ক্রেতা না আসায় চিন্তায় রয়েছি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, করোনার কারনে গরু ক্রেতাদের মধ্যে আগ্রহ কম। তারপর এ্যাপ্সের মাধ্যমে ঈদের দেড়-দুই সপ্তাহ আগে থেকে বেচাকেনা শুরু হবে। আশা করছি কোরবানির পশু কিনবেন ক্রেতারা। এছাড়া প্রতিটি গরু-মহিষ পালনকারীদের প্রত্যায়ন দেয়া হয়েছে, তারা যেন ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিতে পারে। উপজেলায় ২০ কোটি টাকা গরু-মহিষ পালনকারীদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে, তারা ইচ্ছা করলে এই ঋণ নিতে পারবে।

 

আরপি/আআ-১২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top