রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১

এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজশাহীর মেসভাড়া মওকুফের দাবি শিক্ষার্থীদের


প্রকাশিত:
২৯ এপ্রিল ২০২০ ০২:০২

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২০ ০৬:২৭

ছবি: ফয়সাল আহম্মেদ (রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থী)

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি হিসেবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমতো অবস্থায় স্কুল কলেজের শিক্ষাথীরা পড়েছেন বিপাকে। রাজশাহীতে পড়াশুনা করা শিক্ষার্থীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মেস ভাড়ার টাকা। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে-মেয়েদের অবস্থা একবোরেই নাকাল। তারা বলছেন যদি এ কঠিন সময়ে একটি টাকাও খরচ না হতো, কতোই না ভলো হতো।

রাজশাহীর মেসভাড়া মওকুফের দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রপও খুলেছেন শিক্ষার্থীরা।গ্রুপে সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কয়েক হাজার। তাদের দাবি মার্চের ২২ তারিখ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মেসভাড়া মওকুফ করা হোক।

একাধিক শিক্ষার্থী তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরছেন এ গ্রুপে। তারা জানান, তাদের এ পরিস্থিতিতে ঘরভাড়া দেবার মতো অবস্থা নাই। ঘরে খাবার যোগান দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে পরিবারের। পরিবারের আয় রোজগার বন্ধ। আমাদের যে অবস্থা, জীবন চলছে না। বাড়িভাড়ার ১২০০ টাকা হলে একমাস খেয়ে বাঁচতে পারতাম। রাজশাহীর ম্যাচমালিকগুলো যদি আমাদেও প্রতি একটু সদয় হতেন তাহলে খুবই ভালো হতো।

ফেসবুক গ্রুপের পোস্টটি পাঠকদের জন্য দেওয়া হলো:

বর্তমান সময়ের ব্যপারে আমরা সবাই অবগত।করোনা ভাইরাসের জন্য আমাদের দেশের যে বিশাল ক্ষতি হচ্ছে তা আমরা সবাই জানি।বিশেষ করে অর্থনৈতিক অবস্থায় চরম আঘাত হেনেছে। এমন অবস্থায় আমাদের দেশের মানুষের আর্থিক সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।কর্মসংস্থান না থাকায় আর্থিক অবস্থা দিন দিন আরও সংকটময় হয়ে উঠবে। আমাদের বর্তমান সরকার দেশের সকল জনগণের জন্য সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

আমাদের মত শিক্ষার্থীদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ আবেদন। আমরা যারা শিক্ষার্থী তাদের মধ্যে অনেকেই মেস বা হোস্টেল থাকি,এমন চরম অর্থনৈতিক সংকটে আমাদের মত শিক্ষার্থীদের মেসের বা হোস্টেলের ভাড়া মেটানো যথেষ্ট কষ্ট সাধ্য ব্যপার।আজ গণমাধ্যমে দেখলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার আহবান জানিয়েছেন। এমন অবস্থায় আমাদের মতো হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের নিজ গৃহে অবস্থান করতে হচ্ছে। আমরা কেউই মেস বা হোস্টেলে থাকছি না।এই সময় আমাদের মেসের বা হোস্টেলের কোনো সুযোগ সুবিধা নিচ্ছি না।এখন এই মার্চের ২২ তারিখ থেকে সেপ্টেম্বর মাস এর ভাড়া মেস মালিক বা হোস্টেল কর্ম কর্তাদের দেওয়া কতটা যুক্তি যুক্ত বলে মনে করছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?

আমরা এটাও বুঝতে পারছি যে মেস মালিক ও হোস্টেল কর্ম কর্তাদের একটা বিশাল ক্ষতি হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের সকল মেসে ও হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ভাড়া মওকুফ করে মেস মালিক ও হোস্টেল কর্ম কর্তাদের সরকারি সহায়তা করা হোক।আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ আবেদন। আমরা নতুন প্রজন্ম হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই সহায়তা কামনা করছি।

বাংলাদেশের সকল মেসে ও হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই গ্রুপ খোলা।

বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ নাটোর জেলা শাখার সভাপতি রাজু আহম্মেদের দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন,  মেস ভাড়া মওকুফ করা জরুরি এবং সময়ের দাবী। উপরোক্ত সকল মহোদয়গনের নিকট বিনিত অনুরোধ করছি বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন।

 

রাজশাহী কলেজ উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ জানান, এমতাবস্থায় যে সকল শিক্ষার্থী টিউশনি করে তাদের মেস ভাড়া দিতো তার ঘোর বিপদের মধ্যে আছে। কারন করোনা পরিস্থিতির জন্য তাদের টিউশনি বন্ধ। এ অবস্থায় তারা কি করে তাদের মেস ভাড়া পরিশোধ করবে এ দুশ্চিন্তায় তারা দিন পার করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা রাজশাহীর সকল শিক্ষার্থীরা একটা দাবি জানায় যাতে করে করোনা পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত যাতে মেস মালিক গন তাদের ভাড়াটিয়াদের কাছ হতে কোন প্রকার টাকা না নেয়। এটা সকল শিক্ষার্থীর দাবি।

রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক আসলাম হোসেন টিপু বলেন, আমি গত ২৭ শে মার্চ ১ম দফায় ও ১১ এপ্রিল ২য় দফায়, ১৯ শে এপ্রিল ৩য়,দফায় আর আজ ২৮ শে এপ্রিল ৪র্থ দফায়, ভাড়া মওকুফ এর জন্য রাজশাহীস্থ নওগাঁ জেলা ও মান্দা উপজেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করে আসছি।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহনগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ শিক্ষাথীদের আশ্বস্ত করে বলেন, আমি আমার জায়গা থেকে আমি ও আমার সাধারণ সম্পাদক দুই জন মিলে আমাদের রাজশাহী বাসীর অভিভাবক মাননীয় মেয়র মহাদয় জননেতা এ,এইচ,এম খায়রুজ্জামান লিটন ভাই সহ আমাদের জেলা প্রশাসক মহাদয় ও পুলিশ কমিশনার মহাদয়ের কাছে গিয়ে আপনাদের বিষয়টি তুলে ধরবো এবং বাড়ি ভাড়া যেন মওকুফ করা যায় এই বিষয়ে তিনাদের কাছে সহযোগীতা চাইবো। আমার বিশ্বাস ভালো কিছু একটা ফল পাওয়া যাবে, আপনারা কেউ দয়া করে হতাশ হবেন না সবাই ধৈর্য্য ধরুন আমরা আছি সবর্দা আপনাদের পাশে। 

তবে এ পরিস্থিতির মধ্যেও ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, লম্বা সময় সবাই বাসায় থাকায় সেভাবে ভাড়া দিতে চাচ্ছে না। তবে মওকুফের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে। অন্তত দুই পক্ষেরই সুবিধাজনক কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top