রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


‘ভাগ্যে মোগো সুখ নাই’, সুখের লাইগ্গা ধার কইরা মুরগির ফার্ম করছি’


প্রকাশিত:
৬ জুলাই ২০২০ ০৩:১৭

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:৩৬

ছবি: সংগৃহীত

করোনার শুরু থেকেই দীর্ঘ লকডাউনের প্রভাব পড়েছে পোল্ট্রি শিল্পে।অনেক খামারি ব্যবসা ছেড়ে বসে আছেন হাত গুটিয়ে। ‘ভাগ্যে মোগো সুখ নাই’, সুখের লাইগ্গা ধার কইরা চার লাখ টাকায় মুরগির ফার্ম করছি। সব শেষ, লসের পর লস। সুখের দ্যাহা পাইলামনা মোরা’, এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নাওভাঙ্গা গ্রামের সিকদার বাড়ির তাইয়্যেব সিকদার।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে তিন শতাধিক খামার গড়ে উঠলেও করোনা মহামারীর কারণে অধিকাংশ খামার বন্ধ হতে বসেছে। এরই মধ্যে অসংখ্য খামার বন্ধও করে দিয়েছে খামারিরা। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন খামার সংশ্লিষ্ট শত শত শ্রমিক।

সরেজমিন দেখা গেছে, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে শিক্ষিত বেকার যুবকরা গড়ে তুলেছিল কোয়েল, কবুতর, পোলট্রিসহ বিভিন্ন খামার। করোনার বিরূপ প্রভাবে তারা এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব। ঋণের জালে আটকা পড়েছে বেশির ভাগ খামারি।

হ্যাচারি, কোয়েল ও দেশী মুরগির খামারি মাহবুবুল আলম নাঈম জানান, কলাপাড়া উপজেলার প্রায় প্রতিটি স্থানে কোয়েল পাখির ডিম সরবরাহ করতেন তিনি। প্রতিদিন উৎপাদন হতো এক হাজার থেকে ১২ শ’ ডিম। করোনা পরিস্থিতিতে সরকার স্কুল কলেজ ছুটি ঘোষণা করায় ডিমের চাহিদা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। অথচ ১৫০০ পাখির প্রতিদিনের খাবার ব্যয় প্রায় দুই হাজার টাকা। প্রতিদিনের ডিম বিক্রি না হওয়ায় ধারদেনা করে পাখির খাবার কিনতে আর কুলিয়ে উঠতে না পেরে অর্ধেকেরও কমমূল্যে ডিমপাড়া অবস্থায় সব পাখি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। ব্যাংক ও এনজিওর কিস্তি কিভাবে পরিশোধ করব সে চিন্তা মাথায় নিয়ে দিন পার করছি।

তরুণ উদ্যোক্তা নাঈম জানান, হ্যাচারি, কোয়েল খামার, মুরগির খামার মিলিয়ে লোকসানের পরিমাণ ৩ লাখ টাকারও বেশি। সরকার ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনা বা সহজ শর্তে ঋণ না পেলে তার পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর আর কোনো উপায় নেই বলে জানান তিনি।

টিয়াখালির খামারি আহসান হাবিব জানান, দেশী মুরগির বাচ্চা তুলেছিলাম করোনার ১৫ দিন আগে। খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে ঠিকভাবে খাবার খাওয়াতে পারিনি। ডিমের মুরগি করার চিন্তা থাকলেও দুই মাস বয়সেই বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি সে সব বাচ্চা। বাজারে ক্রেতা কম থাকায় পানির দরে বিক্রি করায় লোকসানের পরিমাণ প্রায় এক লাখ টাকার মতো। তা ছাড়া হাসের ডিমের বাজার মন্দা থাকায় দিন দিন খামারিদের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বেশি দিন আর টিকে থাকতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘তামান্না মুরগি খামার’ এর স্বত্বাধিকারী উম্মেহানি তামান্না জানান, যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন তুলে মুরগির খামার শুরু করলেও করোনার কারণে আজ তিনি নিঃস্ব। ব্যাংকের একটি কিস্তিও পরিশোধ না করার আগেই করোনা তার সব কেড়ে নিয়েছে।

খান এগ্রো অ্যান্ড ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো: ইকবাল খান বলেন, চার হাজর মুরগি ছিল আমার খামারে। অনেক স্বপ্ন ছিল এই খামার নিয়ে কিন্তু করোনার কারণে সব শেষ। এখন সব থেকে বড় চিন্তা ব্যাংক খুললে কিভাবে কিস্তি পরিশোধ করব তা নিয়ে।
কলাপাড়া উপজেলার ফিড ব্যবসায়ী ও বাচ্চা সরবরাহকারী মো: মনির আকন বলেন, করোনার কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ব্যবসা নেই। বকেয়া টাকাও উঠছে না। সব মিলিয়ে অভাব আর দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

 

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top