রাজশাহী মঙ্গলবার, ১৫ই অক্টোবর ২০২৪, ১লা কার্তিক ১৪৩১


স্বামী স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য


প্রকাশিত:
১৭ জুলাই ২০২০ ১৭:৩৬

আপডেট:
১৫ অক্টোবর ২০২৪ ১১:৪২

ছবি: প্রতীকী

সমাজজীবনের প্রথম ভিত্তি হলো পরিবার। আদি পিতা আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.)-এর মাধ্যম পারিবারিক জীবনের শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তা বিকাশ লাভ করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং যেথা ইচ্ছা আহার করো; কিন্তু এই গাছের ধারে কাছেও যেয়ো না। তাহলে তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৯)

পরিবারের প্রথম বিন্যাস হয়েছিল স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে। তারপর ধীরে ধীরে তা বিস্তৃতি লাভ করে। এক আদম (আ.) থেকে অজস্র পরিবার হয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে। তারপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে-ই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক পরহেজগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব খবর রাখেন।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)

ইসলামের সামাজিক ব্যবস্থায় পরিবার অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মৌলিক সংগঠন। ইসলামী সমাজ কাঠামোতে মানুষ পরিবার, বিয়ে, তালাক ইত্যাদি বিষয়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। মানুষ সৃষ্টির আদর্শবিধি বা এর গোপন রহস্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর প্রত্যেক বস্তু থেকে আমি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। আশা করা যায়, তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৪৯)

নারী-পুরুষ নিয়েই পরিবার। পুরুষের মধ্যে বেশ কিছু সহজাত ক্ষমতা, দক্ষতা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে, যার কারণে তার ওপর পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন পুরুষকে আল্লাহ সহজাতভাবে এমন নেয়ামত দান করেছেন, যাতে সে পরিবারকে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং পরিবারের জন্য জীবিকা উপার্জন করার উদ্যোগ নিতে পারে। তবে নারীদের ওপর পুরুষের এই দায়িত্ব বণ্টন কোনোভাবেই নিরঙ্কুশ নয়। পুরুষের এই দায়িত্ব পালন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সীমিত।

অন্যদিকে সংসার পরিচালনা, সন্তান-সন্ততির যত্ন নেওয়া ইত্যাদি কাজে পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়ে। একজন পুরুষের মূল দায়িত্ব হলো পরিবার তথা স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতির ভরণপোষণ এবং জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজন নিশ্চিত করা। আর তার স্ত্রী এবং সন্তান-সন্তুতি তাকে সহযোগিতা করবে, যতক্ষণ না সে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর অবাধ্য হওয়ার মতো কোনো আদেশ দেন।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক এ কারণে যে আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হেফাজতকারিণী ওই বিষয়ের, যা আল্লাহ হেফাজত করেছেন।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ৩৪)

ইসলাম পরিবারকে এমনভাবে গঠনের উপদেশ দিয়েছে, যেখানে পরিবারের পরিচালক ও পরিচালিতদের সম্পর্ক কখনো প্রভু ও দাসের মতো হবে না। ইসলামে সামাজিক কাঠামো কোরআনের আলোকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যা ন্যায়পরায়ণতা, কল্যাণকামিতা ও সমঝোতার মহিমায় ভাস্বর। এ জন্য ইসলাম সামাজিক প্রয়োজনে কৌমার্যব্রতকে অস্বীকার করেছে এবং বিবাহকে ধর্মীয় ও নৈতিকভাবে বৈধ করেছে। একটি সুন্দর, মহিমান্বিত, সুখময় ও কল্যাণকর সমাজ বির্নিমাণের জন্য ইসলাম বিবাহকে একটি অপরিহার্য বিধান হিসেবে ঘোষণা করেছে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক ও সাবেক ডিএমডি, ইসলামী ব্যাংক

 

আরপি/এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top