রাজশাহী বুধবার, ১লা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১


দুনিয়ায় আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার ‘কন্যাসন্তান’


প্রকাশিত:
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৫৪

আপডেট:
১ মে ২০২৪ ১৪:৪৪

ফাইল ছবি

মেয়ে, মা, স্ত্রী— ইসলামে সবদিক থেকেই সম্মানিত মেয়েরা। নারীদের অনেক সম্মান দিয়েছে ইসলাম। কন্যা সন্তান পেয়ে গর্বিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। কন্যাসন্তান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার। তারা মা-বাবার জন্য জান্নাতের দাওয়াতনামা নিয়ে দুনিয়ায় আসে।

তাইতো পবিত্র কোরআনে কন্যাসন্তানের সংবাদকে ‘সুসংবাদ’ বলা হয়েছে। স্মর্তব্য যে, প্রকৃতপক্ষে সন্তান-সন্ততি (ছেলে-মেয়ে উভয়েই) আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত ও শ্রেষ্ঠ উপহার। ইসলাম উভয়কেই আলাদা সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে। কাউকে কারও থেকে ছোট করা হয়নি কিংবা অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়নি।

কন্যাসন্তানের মাধ্যমে আল্লাহ পরিবারে সুখ ও বরকত দান করেন। হাদিসে এমন কথা উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো অনেক পরিবারে কন্যাসন্তান জন্ম নিলে ইতিবাচক চোখে দেখা হয় না। অনেকে আবার কন্যাসন্তানের মায়ের ওপর নাখোশও হন। বিভিন্ন কায়দায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কন্যা সন্তান হলে অপছন্দ করা, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা এবং তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করা, ইসলামপূর্ব বর্বর জাহেলি যুগের কুপ্রথা। এমন কাজে আল্লাহ তাআলা ভীষণ অসন্তুষ্ট হন।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখ অন্ধকার হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সেভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে নাকি তাকে মাটির নিচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট। ’ (সুরা আন-নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)

রাসুল (সা.) মেয়েদের অনেক বেশি ভালোবাসতেন। মেয়েরা ছিল তার আদরের দুলালি। আজীবন তিনি কন্যাদের ভালোবেসেছেন এবং কন্যাসন্তান প্রতিপালনে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। কন্যাসন্তান লালন-পালনে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুটি কন্যাকে তারা সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করবে, কিয়ামতের দিন আমি এবং সে এ দুটি আঙ্গুলের মতো পাশাপাশি আসবো (অতঃপর তিনি তার আঙ্গুলগুলো মিলিত করে দেখালেন)’। (মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৩১, তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯১৪, মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং: ১২০৮৯, ইবনু আবি শাইবা, হাদিস নং: ২৫৯৪৮)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলনে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করনে, ‘যার ঘরে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করলো, অতঃপর সে ওই কন্যাকে কষ্ট দেয়নি, মেয়ের ওপর অসন্তুষ্টও হয়নি এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রধান্য দেয়নি, তাহলে ওই কন্যার কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবশে করাবেন। ’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং: ১/২২৩)

হযরত আবদুল্লাহ উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ওই নারী বরকতময়ী ও সৌভাগ্যবান, যার প্রথম সন্তান মেয়ে হয়। কেননা, (সন্তানদানের নেয়ামত বর্ণনা করার ক্ষেত্রে) আল্লাহ তায়ালা মেয়েকে আগে উল্লেখ করে বলেন, তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। ’ (কানযুল উম্মাল ১৬:৬১১)
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার কাছে এক নারী এলো। তার সঙ্গে তার দুই মেয়ে। আমার কাছে সে কিছু প্রার্থনা করলো। সে আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া কিছুই দেখতে পেলো না। আমি তাকে সেটি দিয়ে দিলাম। সে তা গ্রহণ করলো এবং তা দুই টুকরো করে তার দুই মেয়ের মাঝে ভাগ করে দিলো। তা থেকে সে নিজে কিছুই খেলেন না। তারপর নারীটি ও তার মেয়ে দুটি উঠে পড়লো এবং চলে গেল। এই সুযোগে আমার কাছে নবী (সা.) এলেন। আমি তার কাছে ওই নারীর কথা বললাম। নবী (সা.) বললেন, ‘যাকে কন্যা দিয়ে কোনো কিছুর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয় আর সে তাদের প্রতি যথাযথ আচরণ করে, তবে তা তার জন্য আগুন থেকে রক্ষাকারী হবে। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ৬৮৬২; মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং : ২৪৬১৬)

প্রসঙ্গত কন্যাসন্তান প্রতিপালনে শুধু বাবাকেই নয়; ভাইকেও উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বোনের কথাও বলা হয়েছে হাদিসে। যারা মনে করেন, মেয়ে বা বোনের পেছনে টাকা খরচ করলে ভবিষ্যতের তার কোনো প্রাপ্তি নেই, তারা মূলত ভুলের মধ্যে আছেন।

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কারও যদি তিনটি মেয়ে কিংবা বোন থাকে অথবা দুটি মেয়ে বা বোন থাকে, আর সে তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে এবং তাদের সঙ্গে সদাচার করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। ’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং : ১১৪০৪; আদাবুল মুফরাদ লিল-বুখারি: ৭৯)

কন্যাসন্তান প্রতিপালনে যেন বৈষম্য না করা হয় এবং বস্তুবাদী ব্যক্তিরা যেন হীনমন্যতায় না ভোগেন, তাই তাদের কন্যা প্রতিপালনে ধৈর্য ধরার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। শোনানো হয়েছে পরকালে বিশাল প্রাপ্তির সংবাদ।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার তিনটি কন্যাসন্তান থাকবে এবং সে তাদের কষ্ট-যাতনায় ধৈর্য ধরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুহাম্মদ ইবন ইউনূসের বর্ণনায় এ হাদিসে অতিরিক্ত অংশ হিসেবে এসেছে) একব্যক্তি প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহর রাসুল, যদি দু’জন হয়? উত্তরে তিনি বললেন, দু’জন হলেও। লোকটি আবার প্রশ্ন করলো, যদি একজন হয় হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, একজন হলেও। ’ (বাইহাকি, শুয়াবুল ঈমান : ৮৩১১)

আউফ বিন মালেক আশজায়ি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি মেয়ে রয়েছে, যাদের ওপর সে অর্থ খরচ করে বিয়ে দেওয়া অথবা মৃত্যু পর্যন্ত, তবে তারা তার জন্য আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। তখন এক নারী বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আর দুই মেয়ে হলে? তিনি বললেন, দুই মেয়ে হলেও। ’ (বাইহাকি, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং : ৮৩১৩)

আল্লাহর উপহার ভেবে এবং বাস্তবিক ভালোবেসে যারা কন্যাসন্তানদের প্রতিপালন করবে, সার্বিক তত্ত্বাবধান করবে, আল্লাহ তাআয়া তাদের উত্তম প্রতিদান দেবেন। আর যারা অবজ্ঞা করবে ও তাদের লালন-পালনে অবহেলা করবে, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি দেবেন। তাই কন্যাসন্তানকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসা উচিত। সেজন্য আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top