মৃত কিশোরীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক; ডোমের সহযোগী গ্রেপ্তার
ময়নাতদন্তের জন্য লাশ আসত রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোরীদের লাশের সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পক করতো ডোমের সহযোগী মুন্না ভক্ত। এমন অভিযোগেই ২০ বছর বয়সী এই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মুন্না ভক্তকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আজ শুক্রবার ঘটনাটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে তারা। মুন্নার বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের জুরান মোল্লার পাড়ায়। তিনি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের কোনো কর্মচারী নন। হাসপাতালের ডোম শ্রী যতন কুমারের ভাগনে হওয়ার সুবাদে তিনি সেখানে কাজ করতেন। মর্গের চাবি তার কাছে থাকত। মর্গে আসা মরদেহগুলো তিনি গ্রহণ করতেন, ময়নাতদন্তের সময় ডাক্তারদের সাহায্য করতেন এবং ময়নাতদন্ত শেষে লাশগুলো স্বজনদের বুঝিয়ে দিতেন।
সিআইডি বলছে, গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত মুন্না অন্তত পাঁচজন মৃত কিশোরীর লাশ ধর্ষণ করেছেন বলে তারা প্রমাণ পেয়েছে। মৃত এই কিশোরীদের বয়স ছিল ১১ থেকে ১৭ বছর। আত্মহত্যার পর তাদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছিল।
এই ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলায় সিআইডির পরিদর্শক মো. জেহাদ হোসেন বলেছেন, মৃত্যুর আগে ওই কিশোরীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কি না, তা জানতে ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার মরদেহের ‘হাই ভেজাইনাল সোয়াব (এইচভিএস) ’ সিআইডির ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছিলেন। পরীক্ষায় এই এইচভিএসগুলোতে পুরুষের শুক্রাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। শুক্রাণুর ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচিং করে সেটি একই ব্যক্তির বলে নিশ্চিত হন পরীক্ষকেরা। অথচ এই মরদেহগুলোর সুরতহালে বলপ্রয়োগজনিত কোনো আঘাতের চিহ্ন বা ধর্ষণের চিহ্নের কথা উল্লেখ ছিল না। এই পাঁচ তরুণীর লাশই যেদিন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল, তার পরদিন ময়নাতদন্ত করা হয়।
জেহাদ হোসেন জানান, যেহেতু লাশগুলোর সুরতহাল প্রতিবেদনে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, তাই তরুণীদের লাশ হাসপাতালে আসার পর কিছু একটা ঘটেছে বলে তারা ধরে নেন। তখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডোম ও তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তারা। বিষয়টি টের পেয়ে মুন্না হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে বাবুবাজার সেতু থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গটি কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অধীনে পরিচালিত হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সেলিম রেজা জানান, ছেলেটা মানসিকভাবে অসুস্থ। কোনো সুস্থ ব্যক্তির দ্বারা এটা সম্ভব না। এই যৌন বিকৃতিকে নেক্রোফিলিয়া বলা হয়।
হাসপাতালের কর্মচারী না হওয়া সত্ত্বেও সেখানে এই যুবকের কাজ করার বিষয়ে সেলিম রেজা বলেন, কোনো প্রশিক্ষিত ‘মর্চুয়ারি অ্যাসিসটেন্ট’ নেই। বিষয়টিকে কেউ গুরুত্বের সঙ্গে দেখে না। ব্রিটিশ আমল থেকে যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তারাই বংশগতভাবে এটি করে যাচ্ছেন। এ কারণে যিনি ডোম হিসেবে নিয়োগ পান, তিনিই তার সহযোগী হিসেবে আত্মীয়স্বজনের কয়েকজনকে নিয়ে আসেন।
সেলিম রেজা মনে করেন, একজন প্রশিক্ষিত মর্চুয়ারি অ্যাসিসটেন্ট কখনো এই কাজ করতেন না। মর্গ, ময়নাতদন্তের দিকে সংশ্লিষ্টদের আরও নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও উদ্যোগী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরপি/ এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: