রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


ক্রমেই আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস


প্রকাশিত:
১ জুন ২০২১ ২০:০৬

আপডেট:
১ জুন ২০২১ ২০:২৭

প্রতিকী ছবি

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পর বাংলাদেশেও চিকিৎসা চলছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ দেখা যাওয়া কয়েকজন রোগীর। এছাড়াও দেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া এক রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপস্থিতি ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। দেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী সন্দেহ হওয়ায় বাড়ছে দুশ্চিন্তাও। এই নিয়ে চিন্তিত রাজশাহীর চিকিৎসকরাও।

কথা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের সাথে। তারা জানান, এই ছত্রাক পরিবেশেই আছে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. পার্থ মণি ভট্রাচার্য বলেন, ‘যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকে, তাদের ঝুঁকি বেশি। আবার স্টেরয়েড গ্রহণ করা কোনো কোনো ব্যক্তিও এতে আক্রান্ত হতে পারেন।মিউকোরমাইকোসিস ছোঁয়াচে নয়। শরীরের যে কোনো স্থানে এর সংক্রমণ হতে পারে। নাকের আশপাশে ও চোখে সংক্রমণ বেশি হয়। চোখে সংক্রমণ হলে তা দ্রুত মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্ত এলাকায় রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার ফলে ওই এলাকা কালো হয়ে যায়। তাই একে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ বলা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই রোগ প্রতিরোধে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণসহ স্টেরয়েড গ্রহণে খুব সচেতন হতে হবে।

রামেক হাসপাতালের আরো কয়েকজন বিশেষজ্ঞ জানান, যারা করোনায় সংক্রমিত হন, তাদের সুস্থ করতে স্টেরয়েড চিকিৎসার সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমণের যোগসূত্র রয়েছে। এছাড়াও যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের এই ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।

তারা আরও জানান, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার ১২ থেকে ১৮ দিনের মধ্যেই এর সংক্রমণ দেখা দেয়। এটি প্রতিরোধে এখনই সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ এমনিতেই ভারতীয় ভেরিয়েন্ট পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে ধরা পড়েছে। এর সাথে করোনার সংক্রমণ খুব বেশি।

তারা জানান, এই সময় অন্য সংক্রমণ এড়াতে সচেতন হওয়া ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকতে হবে। এছাড়াও পরিষ্কার মাস্ক ব্যবহার, ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অক্সিজেন পরিষ্কার রাখার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে আরো নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘যারা বয়স্ক, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, তাদের এই বিষয়ে বেশি সতর্ক হতে হবে। আমি ইতোমধ্যে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের সাথে কথা বলেছি। এই বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সচেতন থাকা। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নেওয়া। করোনা রোগীর মাঝে অন্য ডিজিজ থাকলে ফাঙ্গাস দ্রুত আক্রান্ত করার চেষ্টা করবে। তাই চিকিৎসকের বাইরে এই রোগের সেবা নেওয়া যাবে না। হাসপাতালে করোনায় ভর্তিরত রোগী-স্বজনদের আমরা এই বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছি।

রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার জানান, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এটা এক ধরনের ফাঙ্গাস যা আগেও ছিলো। তবে আগে মানুষের রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বেশি ছিলো তাই কম মারা গিয়েছে। এখন রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা কমেছে তাই মানুষ অনেক সময় মারা যায়। শুধু এই বিষয়টি লক্ষণ রাখতে হবে। এরকম কোনো লক্ষণ হলে সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সেবা নিলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু প্রথম অবস্থায় মানুষের অবহেলার কারণে পরে সমস্যা হয়।

তিনি আরও জানান, ঢাকায় দুইজনের শরীরে এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ সন্দেহ করা হয়েছে। রাজশাহীতে এই ধরনের কোনো কিছু আমরা এখন পর্যন্ত লক্ষ করিনি। সরকারিভাবে আমাদের এই বিষয়ে কিছু অবহিতও করা হয়নি।

তিনি আরও জানান, মেডিসিন ও চর্ম বিভাগের চিকিৎসকরা এই বিষয়ে কাজ করে। রাজশাহীতে যদি এমনটি হয় তারাই বিষয়টি দেখবে। এই ফাঙ্গাস শুধু যাদের রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তাই এই রকম কোন লক্ষণ দেখা মাত্রই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া চিকিৎসা নিলে তাদের ক্ষেত্রে এই ফাঙ্গাসটি সমস্যা সৃষ্টি করবে।

 

 

 

আরপি/এসআর-০৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top