বৈশাখ নয় ঈদ ঘিরেই স্বপ্ন ব্যবসায়ীদের
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ফেলে আসা অতীতের ব্যর্থতা ও হতাশার গ্লানি মুছে সাফল্যের বার্তা ও নতুন উদ্যমে বাঁচার প্রেরণা নিয়ে প্রতি বছর হাজির হয় পহেলা বৈশাখ। নতুন শপথে দীপ্ত প্রত্যয়ে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেতনায় উদ্ভাসিত করে নতুন বছরের প্রথম দিন। রঙ বেরঙের পোশাকে বাহারি সাজে দিনটি উপভোগ করে সকলেই।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিতে বাঙালি মেতে ওঠে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। লাল-সাদা রঙিন পোশাকে সাজে যুবক-যুবতীরা। পিছিয়ে থাকে না শিশুরাও। সকাল থেকেই বাজতে থাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত সেই পঙক্তি, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’। ঢাকার রমনা বটমূল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেরোয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। পান্তা-ইলিশ আর পেঁয়াজ-মরিচ মুখে পুরে সাংস্কৃতিক আয়োজনে মেতে উঠে বাঙালি সমাজ। দোকানে দোকানে হিড়িক পড়ে প্রাচীন ঐতিহ্য হালখাতার। ধুম পড়ে পুরাতন হিসেবের জের ঘুচিয়ে নতুন খাতা উন্মোচনের।
তবে এবারের সেই আয়োজন অনেকটাই ফিকে হতে চলেছে। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র মাস মাহে রমজানে বৈশাখ হওয়ায় বাদ পড়ে যাচ্ছে অনেক আয়োজনই। আর ঈদের আগ মুহুর্তে হওয়ায় মন চাইলেও অনেক কিছুতেই তাল মেলাতে পারছেন না অনেকেই। বন্ধু-বান্ধব কিংবা প্রিয় জনের সাথে পান্তা-ইলিশ খাওয়া, হালখাতা ও একে অপরের বাড়ি দাওয়াসহ অনেক কিছুই বাদ যাবে এবারের উৎসবে।
আর তাই তো পহেলা বৈশাখ নিয়ে খুব একটা ভাবনা ছিল না রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের মনে। প্রতি বছর বৈশাখ ঘিরে পোশাকের নানা আয়োজন থাকলেও এবার ঈদ নিয়েই ব্যস্ত বিক্রেতারা। ঈদের প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে নববর্ষ হওয়ায় আগ্রহ ছিল না কারোরই। তবে আগামী বছরের নববর্ষ থেকে উৎসব ও বিক্রি দুটোই জমবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, গণকপাড়া, আরডিএ মার্কেট ও নিউ মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখের নাম-গন্ধই নেই দোকানে। এবারের পহেলা বৈশাখ নিয়ে ভাবনাও নেই অনেকের। সবাই ব্যস্ত ঈদ কালেকশন দিয়ে দোকান সাজাতে।
এ বিষয়ে নগরীর আরডিএ মার্কেটের বিসমিল্লাহ পাঞ্জাবি হাউজের দোকান মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বৈশাখের একেবারেই অর্ডার ছিল না। আর ঈদের কারণে আমরাও কোনো কালেকশন আনি নি। রোজা না হলে আনা হতো। এবার বৈশাখের কোনো ভাবগাভই নাই, কাস্টমারদেরও চাহিদা নেই। সবাই ঈদ নিয়ে ব্যস্ত। গতবারেও রমজানে বৈশাখ ছিল তবুও কিছুটা বিক্রি হয়েছে। সাধারণত এসব জিনিস ছাত্ররাই তো কিনে, কিন্তু এবার সবাই বাসায়।’
খান ফ্যাশনের দোকানি সুমন হোসেন বলেন, ‘রোজার মাসে বৈশাখ কে পালন করবো? সেজন্য কালেকশন রাখি নি। আগে বৈশাখের সময় এমনও হয়েছে তিন দিনে দেড় লাখ টাকার পাঞ্জাবি বিক্রি করেছি। আর গত কয়েক বছর ধরে বৈশাখও পালন করা যায় নি, বেচাবিক্রিও হয় নি।’
একই মার্কেটের স্নেহা শাড়ি ঘরের বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বৈশাখের কোনো কালেকশন রাখি নি। ঈদেরই বেচাকেনা নেই আর বৈশাখ নিয়ে বিপদে পড়বো? একেবারেই যে চাহিদা নেই তা না, টুকটাক চাহিদা আছে। তবে আমরা মাল তুলি নি। ঈদের বেচাবিক্রি মোটামুটি চলছে তবে ঠিক নেই। একবেলা বিক্রি হলে আরেক বেলা বসে থাকতে হচ্ছে। সবকিছুর দাম বাড়তি, ৮০০/৯০০ টাকার শাড়ির দাম বেড়ে ১৩০০/১৪০০ টাকা হয়েছে। তাই লোকজনও কমেছে।
এদিকে জেবি প্লাজার তিলোত্তমা ফ্যাশনের বিক্রেতা ফাহিম বলেন, ক্রেতা যারা আসছে সবাই ঈদের জন্যই আসছে। বৈশাখের ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। বৈশাখ উপলক্ষে কালেকশন ছিল তবে ক্রেতা নেই।
রংকুঠির দোকানী অনিক মাহমুদ বলেন, ক্রেতার চাহিদা ছিল কিন্তু কালেকশন নেই। ঈদের কারণে রাখা হয় নি। আপাতত ঈদের দিকেই ফোকাস রাখছি, কালেকশন মোটামুটি এসেছে। বেচাবিক্রি অনেক ভালো হচ্ছে। আমরা অন্যদের থেকে ব্যতিক্রমী কিছু রাখি যে জন্য চাহিদা বেশি থাকে।
জানতে চাইলে নগরীর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন বলেন, বৈশাখের নতুন কোনো কালেকশন এবার কেউই রাখে নি। মোটামুটি শাড়ি আর পাঞ্জাবির কালেকশন তো সারা বছরই থাকে। তবে বৈশাখ উপলক্ষে নতুন করে কিছু আনা হয় নি।
সবাই ঈদের মার্কেট ধরতে ব্যস্ত হয়েছে। তবে সেই ঈদের বিক্রিও খুব একটা নেই। খুবই খারাপ অবস্থা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের। করোনার পরের বছরগুলোতে মোটামুটি একরকম বিক্রি ছিল। এবার সেটাও নেই। মার্কেটে লোকজন না থাকলে কিনবে কে? সব সময় প্রায় অর্ধেক দোকান ফাঁকা থাকছে। সবাই বৈশাখের আশা বাদ দিয়ে ঈদে ফোকাস করছিল, কিন্তু সেটাতেও তো লাভ হচ্ছে না বলেও জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।
আরপি/এসআর-১৭
বিষয়: পহেলা বৈশাখ কেনাকাটা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: