রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


এখনও জমে উঠেনি নগরীর ঈদ কেনাকাটা


প্রকাশিত:
২০ এপ্রিল ২০২২ ০৩:০৪

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩৯

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর আসতে বাকি আর ১৫ দিন। অন্য বছরগুলোতে ঈদকে ঘিরে নানা আয়োজন থাকলেও এখনও জমেনি রাজশাহীর ঈদ বাজার। অর্ধেক রোজা পেরোলেও ক্রেতাশূন্য বসে রয়েছেন বেশির ভাগ কাপড় বিক্রেতা।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) নগরীর সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেট, নিউ মার্কেট, গণকপাড়ার আশপাশের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, অলস সময় পার করছেন দোকানীরা। করোনার হানার পর ঈদুল ফিতরকে ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছিলেন তারা। সাধ্যমতো পুঁজি খাটিয়ে দোকানও সাজিয়েছেন প্রায় সকলেই। ক্রেতা চাপকে মাথায় রেখে নিয়োগ দিয়েছেন বাড়তি কর্মচারীও।

তবে এতো আয়োজনের মাঝেও ফিকে হতে চলেছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। অর্ধেক রোজা পেরোলেও বেচা বিক্রি না বাড়ায় মাথায় হাত উঠার অপেক্ষা বিক্রেতাদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই টানাটানি সাধারণ মানুষের, সেখানে এবারের ঈদে ভাগ্য খুলবে এমন ভাবনাও ভাবতে পারছেন না ব্যবসায়ী নেতারা।

সোমবার রাজশাহী নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কাপড়ের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, অনেকটাই অলস সময় পার করছেন দোকানীরা। বেচা বিক্রিতে এগিয়ে থাকা নগরীর আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে বসে থাকলেও ক্রেতা সমাগম অনেকটাই কম। শেষ দশকে বিক্রি কিছুটা বাড়বে বলে আশায় দিন গুনলেও ভরসা পাচ্ছেন না কেউই। দোকানের চারদিক থরে থরে কাপড় সাজালেও দোকান মালিকদের কপালে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ।

এ বিষয়ে আরডিএ মার্কেটের ৩য় তলার আরএস ফ্যাশনের বিক্রেতা হৃদয় হাসান সনি বলেন, ঈদকে ঘিরে সব রকমের কালেকশন আনা হয়েছে। লোকজনও আসা শুরু করেছে। তবে অন্য বারের মতো ক্রেতা আগমন নেই বললেই চলে।

হতাশা ভরা চাহনিতে একই মার্কেটের স্টুডেন্ট চয়েস’র মালিক মিন্টু বলেন, কাপড় ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই খারাপ। দোকান ভর্তি মাল থাকলেও কেনার লোক নেই। লোকজন যারা আসছে ঘুরে ফিরে চলে যাচ্ছে। অধিক বিক্রির আশায় অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দিলেও লাভের পরিবর্তে লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও জানান তিনি।

একই মার্কেটের নিচ তলায় মিলেছে ভিন্ন চিত্র। ক্রেতা চাপ থাকলেও সন্তুষ্ট নন বিক্রেতারা। দোকানের সামনে ভিড় জমালেও নাম গন্ধ নেই কাপড় কেনার। জানতে চাইলে জুয়েল বস্ত্রালয়ের দোকানী শাকিল জানান, ঈদের আগেই বেচা-বিক্রি বেশি হতো। এখন ক্রেতা আগমন বাড়লেও বিক্রি আগের মতোই আছে। আগামীতে হয়তো বাড়তে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

লকডাউন খুললেও বেচা-বিক্রিতে খুব একটা পরিবর্তন হয় নি বলে দাবি করেন এই মার্কেটের রাজধানী ফ্যাশনের দোকানী তন্ময়। দু চারজন ক্রেতা আসলেও আগ্রহ নেই কারোই। কেনার চেয়ে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরছেন বেশি বলেও জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকান মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্রেতাদের হাতে টাকা নেই। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বগতি। নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। মানুষজনের তো আয় রোজগার বাড়ছে না। তাহলে ক্রেতারা কিনবে কিভাবে?

তিনি আরও বলেন, সর্বত্রই চাঁদাবাজির মহোৎসব। ঢাকা থেকে কাপড় আনতে কয়েক জায়গায় টাকা দিতে হয়। এছাড়াও গাড়ি ভাড়া, ইমপোর্ট খরচ সবকিছু বাড়ছে। ফলে বাধ্য হয়ে কাপড়ের দামও বেশি মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে।

৫ বছরের শিশুকে নিয়ে শপিং করতে এসেছিলেন মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসেরই দাম চড়া। পিছিয়ে নেই কাপড়ের ক্ষেত্রেও। এসবের মাঝেই কিনতে হবে। ছেলের জন্য একটি পাঞ্জাবী ও একটি প্যান্ট কিনেছেন বলেও জানান তিনি।

এছাড়াও নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, গণকপাড়া, রানীবাজার ও নিউ মার্কেটের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, বেলা গড়িয়ে দুপুরে পা দিলেও অনেকে শুরুই করতে পারেন নি বিক্রির খাতা। ক্রেতারা আসলেও দাম শোনার পর কেনার আগ্রহ পাচ্ছেন না কেউই।

নিউ মার্কেটের টিহা শাড়ি ঘরে গিয়ে দেখা যায়, দোকানজুড়ে কোনোই ক্রেতা নেই। দোকানী রুমেল বলেন, টুকটাক বেচা-বিক্রি হচ্ছে বললেও ভুল হবে। সব জিনিসের দাম বেশি। সর্বনিম্ন কিছু কিনতে হলেও আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা লাগবে। তাই ক্রেতাদের আগ্রহ কম।

নিউ মার্কেট বাজার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন বলেন, করোনার রেশ কাটিয়ে এবার রমজানের আগে থেকেই আশায় ছিলেন বিক্রেতারা। কিন্তু সেরকম ব্যবসা এখনও জমে নি। শেষ সপ্তাহেও বিক্রি বাড়বে কি না বলা মুশকিল। তবে বিক্রি করতে না পারলে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে ব্যবসায়ীদের।

তিনি আরও বলেন, করোনার ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয় নি। সবাই ক্ষতি কাটানোর জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ ও ধার করে বিনিয়োগ করেছে। এবারের ঈদেও বিক্রি না হলে অন্ধকার দেখতে হবে। এছাড়াও করোনাকালীন লভ্যাংশ, ব্যাংক ঋণের মুনাফা কোনো কিছুই মওকুফ করা হয় নি। প্রনোদনার টাকা যারা পেয়েছে তাদের লাভের থেকে লোকসানই বেশি হয়েছে।

জানতে চাইলে রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বলেন, রোজার শেষ সপ্তাহেই মূলত ক্রেতা সমাগম বেশি থাকে। প্রথম দিকে দর্জির কাপড়চোপড়ে একটু চাপ থাকে। এছাড়াও চাকরিজীবীরা বেতন-বোনাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত দুই বছর মানুষজন লকডাউনে ঘরবন্দী ছিলেন। করোনার কারণে তারা খুব বেশি কেনাকাটাও করতে পারে নি। ২০ এপ্রিলের পর ঈদের বেচা-বিক্রি শুরু হতে পারে। সব মিলিয়ে এবার ভালো বেচা-বিক্রি হবে বলে আশা করছি। 

 

 

 

আরপি/এসআর-০২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top