রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


অন্যরকম বিয়ে


প্রকাশিত:
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:৩৬

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৩

ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের বিরলে বৈদ্যনাথ দেবশর্মা (৯২) ও পঞ্চবালা (৮২) জুটির বিয়ে হয়েছিল প্রায় ৭৪ বছর আগে। পরিবারের মঙ্গলের জন্য এই বয়সে আবার তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। তাদের এই পুনর্বিবাহে মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ পাঁচ প্রজন্মের উত্তরসূরিরা অংশগ্রহণ করেন।

রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) ধর্মীয় রীতি মেনে এই জুটির বিয়ে দিলেন বংশের অনুজ উত্তরসূরিরা। তাদের বাড়ি বিরল উপজেলার দক্ষিণ মেরাগাও এলাকায়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৈদ্যনাথ দেবশর্মার বয়স যখন ১৮ তখন তার বাবা স্বর্গীয় ভেলশু দেবশর্মা একই এলাকার স্বর্গীয় বিদ্যামন্ডল দেবশর্মার হাতে ১৩ টাকা পণ দিয়ে ঘরে তুলে আনেন তার ৮ বছর বয়সী কন্যা পঞ্চবালা দেবশর্মাকে। সেদিনের বালিকা নববধূ পঞ্চবালা আজ বিয়ের ৭৪ বছরে পা দিয়েছেন।

এই ৭৪ বছরে তাদের একমাত্র মেয়ের বিয়ের পর সন্তান, নাতি-নাতনি এবং তাদের ঘরের সন্তান মিলে পাঁচ প্রজন্ম পেরিয়েছে। তাদের বংশের রেওয়াজ আছে যদি কারও পাঁচ সিঁড়ি দেখার সৌভাগ্য হয় তাহলে ভগবানের তুষ্টির জন্য পুনর্বিবাহের আয়োজন করতে হয়। আর সেই অনুযায়ী গত এক মাস ধরেই চলছিল এই প্রবীণ জুটির পুনর্বিবাহের আয়োজন।

বৈদ্যনাথ-পঞ্চবালার একমাত্র মেয়ে ঝিলকো বালার তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। তাদের প্রত্যেকের ঘরে ছেলে মেয়ে শুধু নয়, নাতি-পুতিও আছে। বৈদ্যনাথ-পঞ্চবালার সৌভাগ্য পাঁচ প্রজন্মের উত্তরসূরি দেখে ফেলেছেন তারা। আর তাতেই একটি রীতি সামনে এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে।

দেবশর্মাদের লৌকিক রীতি অনুসারে যদি কেউ প্রজন্মের পাঁচ সিঁড়ি দেখে ফেলেন তাহলে তাদের আবার বিয়ে করতে হবে। এই রীতি মেনে তাই আবারও বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তারা। বৈদ্যনাথ ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্যও ছিলেন। এখন তার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৫৪ জন।

বিয়ের পর বর বৈদ্যনাথ দেবশর্মা বলেন, ১৩ টাকা পণ দিয়ে পঞ্চবালার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আমার। ব্রিটিশদের সময়ে ধুমধাম ছিল না। এই বিয়েতে যে আনন্দ হলো তা বলার মতো না। বিয়ের এত বছরেও আমার স্ত্রীর গায়ে একবার ছাড়া কখনও হাত তুলিনি। একবার হাত তুলেছিলাম, তখন মায়ের হাতে আমাকে মার খেতে হয়েছিল। এরপর কখনও আমি তাকে একদিনের জন্যও ছাড়িনি। আমি গয়া, কাশি, বৃন্দাবন, আগ্রা, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন তীর্থস্থানে গিয়েছি তাকে নিয়ে।

স্ত্রী পঞ্চবালা দেবশর্মা বলেন, আমার যখন বিয়ে হয়েছে তখন আমি কিছুই বলতে পারি না। এখন আবার নাতিপুতিরা বিয়ে দিল। আমার স্বামী আমাকে অনেক ভালোবাসে, তাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না, আমাকে ছাড়াও সে থাকতে পারে না।

বাবা-মায়ের আবারও বিয়ে দিতে পেরে খুশি তাদের একমাত্র মেয়ে ঝিলকো বালা। তিনি বলেন, এই আয়োজনে আমরা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। সবাই এসেছেন। এটা মূলত মঙ্গল ও পরিবারের ভালোর জন্য করেছি। আমরা যেন ভালোভাবে থাকতে পারি, ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা।

বিয়ের আয়োজক নাতি ফটিক চন্দ্র সরকার বলেন, এক মাস আগে এই আলোচনা করি। পরে পরিবারের সদস্যরা একমত হলে এই বিয়ের আয়োজন করি। এর আগে আমরা ধর্মীয় রীতিনীতির বিষয়গুলো নিয়ে পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার দাদুর পাঁচ সিঁড়ি পার হয়ে গেছে। আমরা তার নাতি, আবার আমাদেরও নাতি হয়েছে। বিয়েতে অনেক লোকসমাগম হয়েছিল।

এই বিয়েতে বর ও কনের সন্তান, তাদের নাতি-নাতনি মিলে ৪ প্রজন্মের আত্মীয়-স্বজনসহ অংশগ্রহণ করেন আশপাশের প্রতিবেশীরাও। আবার বৃদ্ধ-বৃদ্ধার বিয়ে বলে আনন্দের কমতি ছিল না নতুন প্রজন্মের কাছে।

বিবাহ কাজে পুরোহিতের দায়িত্বে ছিলেন মহাদেব ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এর আগে এমন বিয়ে দেখিনি। তবে তারা যে আয়োজন করেছেন তা সত্যিই আনন্দের। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে তারা যে আয়োজন করেছে তাতে বোঝাই যায় তাদের পরিবারের মধ্যে ভালোবাসা কতখানি রয়েছে।

আরপি / এমবি-৩



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top