রাজশাহী সোমবার, ১৭ই মার্চ ২০২৫, ৪ঠা চৈত্র ১৪৩১


অমর একুশে ফেব্রুয়ারি


প্রকাশিত:
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:০৭

আপডেট:
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:২৭

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের এক অনন্য,চেতনাদীপ্ত,অমর অক্ষয় অধ্যায় হল ২১ শে ফেব্রুয়ারি। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় চেতনার একটি উর্বর উৎস। রক্তে রঞ্জিত এই ২১ শে ফেব্রুয়ারিতেই মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে বাংলার কিছু তরুণ তাজা প্রাণ অকাতরে আত্মোৎসর্গ করে বাংলার ইতিহাস লাভ করেছে অমরত্ব। তাই এই দিনটি বাঙালী জাতীয়তাবোধের নবজন্মের দিন।এই দিনটির সাথে নির্যাতিত, শোষিত ও বঞ্চিত বাঙালি জাতির এক বিষাদ বিধুর ইতিহাস জড়িত। প্রতিবছর ভাষা আন্দোলনের বেদনা-বিধুর স্মৃতি ও সংগ্রামী চেতনার অমিয় ধারাকে বহন করে একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের দ্বারে ফিরে আসে। জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটাবার ক্ষেত্রে এর তাৎপর্য অপরিসীম।

কবি শামসুর রহমান বলেছেন- "আবার ফুটেছে দ্যাখ কৃষ্ণচূড়া থারে থারে শহরের পথে কেবল নিবিড় হয়ে কখনও মিছিল কখনও বা একা হেঁটে যেতে মনে হয়,ফুল নয় ওরা শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদবুদ, স্মৃতির-গল্পের ভরপুর।"

একুশের ইতিহাস : একুশে ফেব্রুয়ারি খুবই বেদনাবহ বাঙালী জাতীয় জীবনে ১৯৫২ এর ফেব্রুয়ারি এক ক্রান্তিলগ্ন। তখন পাকিস্তান শাসনামল ১৯৪৮ সালে ২১ শে মার্চ পাকিস্তানের জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় ঘোষণা করেন- " Urdu only, and urdu shall we the state language of Pakistan." এর তিনদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্জন হলে এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে একই কথা জোরের সঙ্গে ঘোষণা করলে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে, কিন্তু শত প্রতিবাদ স্বত্তেও জিন্নাহ এতে কোনো কর্ণপাত করেননি।

একুশের স্মৃতি : এই ঘটনার প্রতিবাদে ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। সমগ্র পূর্ব বাংলায় ২১ শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের কর্মসূচি প্রদান করলে ছাত্র জনতার মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া জাগে। ২০ শে ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে কিন্তু ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে হাজার হাজার ছাত্রজনতা অংশ নেয়, যা কিছু সময়ের মধ্যেই জনসমুদ্রে রুপ নেয়। মিছিলের এ অবস্থা দেখে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নরুল আমিন আন্দোলনকারীদের উপর গুলি বর্ষনের নির্দেশ দেন। গুলিতে শহীদ হয় বরকত, সালাম, রফিক, জব্বার,সফিউর সহ আরো অনেকে। এতে সারা বাংলায় প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ওঠে। অবশেষে রাজশক্তি মেনে নেয় বাঙালির প্রাণের দাবি। বাংলা স্বীকৃতি পায় অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। কবি লিখেছেন -

"তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে, কী থাকে আমার ?
উনিশ শো’ বাহন্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি" একুশের তাৎপর্য : একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য শুধু শহীদ দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং তা জাতীয় জীবনে সর্বত্র প্রচন্ডভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। একুশের আন্দোলন শুধু একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছিল না এর তীব্রতা ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক মন্ডলে। একুশ থেকে আমরা পাই গণতন্ত্রের চেতনা,সাম্যের চেতনা। একুশ আমাদের শিখিয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিকার প্রতিষ্ঠার লাড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে। একুশ আমাদের সবার মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচনা করে,ভাষার মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। মাথা নত না করার শিক্ষা দিয়েছে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি।

"একুশ আমার প্রাণ/একুশ করেছে দান
একুশ মোদের পাথেয়/একুশ কে করো নাকো হেয়।" একুশ আমার অহংকার : একুশ কে নিয়ে আমরা যে কারণে অহংকার করতে পারি তার একটি হলো স্বাধীনতা অর্জন এবং অন্যটি হল রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে বাংলাকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠা করা। যুদ্ধ করে মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জন ও রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদার রক্ষা এই দুটিকোন জাতির পক্ষেই একসাথে করা সম্ভব হয়নি। তাই একুশ আমাদের অহংকার। ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস কথাটিতেই আমাদের গর্বে বুক করে ওঠে।

উপসংহার : ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার রাজপথে যারা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য তাদের জন্যই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ইতিহাস শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যৎকেও গর্ভে ধরে রাখে তার এক জ্বলজ্বল নজির রেখে গেছেন আমাদের ভাষা শহীদেরা। সমগ্র বিশ্বের মানুষ তাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে। তাদের আত্মত্যাগকে কেন্দ্র করেই আমরা মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করি। "ওরা না থাকলে ভাষা হইতো না বাংলা পেতাম না স্বাধীনতা"

 

আনিকা ইসলাম মুন্নি
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top