রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


বিশ্বমানের হচ্ছে রাজশাহী কলেজ মাঠ


প্রকাশিত:
৫ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৩৯

আপডেট:
৫ এপ্রিল ২০২১ ১১:৩২

রাজশাহী কলেজ মাঠ

ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ রাজশাহী কলেজ আপন বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীনে টানা চারবার সেরা কলেজটির রয়েছে সুসজ্জিত ক্যাম্পাস।

দেশসেরা কলেজটিতে এবার যুক্ত হচ্ছে বিশ্বমানের খেলার মাঠ। আর এর জন্য আর্থিক অনুদান দেবে ভারত সরকার। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সরকারের মাঝে স্বাক্ষরিত পাঁচ সমঝোতা স্মারক চুক্তি সম্পন্ন হয়। এগুলোর অন্যতম প্রকল্প রাজশাহী কলেজের খেলার মাঠের উন্নয়ন।

জানা গেছে, রাজশাহী কলেজ মাঠকে বিশ্বমানের তৈরিতে শুরু হতে যাচ্ছে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব স্পোর্টস ফ্যাসিলিটিজ অ্যান্ড রাজশাহী কলেজ ফিল্ড সারাউন্ডিংস এরিয়া’ প্রকল্প। এর জন্য ৫ কোটি ৯৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭ টাকা অনুদান দেবে ভারত সরকার।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী কলেজ মাঠ ভরাটকরণ, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিতকরণ, পুনরায় সবুজায়ন, গ্রীণ গ্যালারি নির্মাণ, ফ্ল্যাড-লাইট স্থাপন, আন্ডার-গ্রাউন্ড ড্রেন সংযোগ, অত্যাধুনিক স্যানিটেশন, উন্মুক্ত জিমনেসিয়াম, ওয়াকওয়ে, কলেজ প্রশাসন ভবনের আদলে খেলোয়াড়দের দুটি ড্রেসিং রুম নির্মাণ, রেস্ট রুম, সুইমিংপুল, ১টি করে টেনিস ও ব্যাডমিন্টন গ্রাউন্ড নির্মাণসহ বেশ কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।

এছাড়াও কলেজের মহারাণী হেমন্তকুমারী ছাত্রাবাসে নতুন ৬ তলা ভবন নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জিব কুমার ভাটি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৬ মার্চ ঢাকা সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরদিন ২৭ মার্চ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী।

স্বাক্ষরিত চুক্তির মধ্যে একটি প্রকল্প ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব স্পোর্টস ফ্যাসিলিটিজ অ্যান্ড রাজশাহী কলেজ ফিল্ড সারাউন্ডিংস এরিয়া’। প্রকল্পটির প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন রাজশাহী কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বারিক মৃধা।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১৯ সালে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের উদ্যোগে রাজশাহী কলেজ মাঠে পঞ্চম আন্তর্জাতিক ইয়োগা দিবস পালন করা হয়। তখনই সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জিব কুমার ভাটি মহোদয় রাজশাহী কলেজের মাঠকে ঘিরে বিনিয়োগ করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

কলেজের মাঠটি অনেক সুন্দর হলেও বর্ষাকালে পানিতে ডুবে যায়। বিভিন্নস্থানে পানি জমে থাকে। দিনে খেলার ব্যবস্থা থাকলেও লাইটিং না থাকায় রাতে খেলাধুলা করা যায় না। এসব জেনে তিনি একটি প্রস্তাবনা দিতে বলেন।

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারের কথায় প্রকৌশলী দিয়ে প্ল্যান করিয়ে একটি প্রস্তাবনা সাবমিট করা হয়। এর এক বছরের অধিক সময় পরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবশেষে প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। কলেজের অবকাঠামোগত কোন ক্ষতি না করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী উজ্জল কুমার রায় জানান, দুই সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তবে বাস্তবায়নের জন্য আনুসঙ্গিক যে কাজগুলো রয়েছে সেগুলো এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রকল্পটির সবকিছু খসড়া করা আছে। স্থান পরিদর্শন শেষে চূড়ান্ত করে সেগুলো উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।

এ ব্যাপারে কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান বলেন, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে ভারত সরকার যে প্রকল্প অনুদান প্রদান করবে তার মধ্যে রাজশাহী কলেজের একটি। এটি অবশ্যই রাজশাহী কলেজসহ রাজশাহীবাসীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যেসকল উন্নত অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে তা রাজশাহী কলেজকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারত সরকার, রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার সঞ্জিব কুমার ভাটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার তাঁর সরকারের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছেন।

তিনি রাজশাহী কলেজের সার্বিক কর্মযজ্ঞে মুগ্ধ হয়ে কলেজের মাঠ সংস্কারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সে মোতাবেক পরবর্তীতে একটি প্রকল্প জমা দেয়া হয়। নগরবাসীর অভিভাবক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মহোদয় প্রকল্পটি প্রণয়নে একাধিকবার খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন এবং খোঁজখবর নেওয়ায় অবশেষে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।

এজন্য রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত সকলকেই ধন্যবাদ জানান তিনি। এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক বলেন, রাজশাহী কলেজের জন্য এই প্রকল্প একটি মাইলফলক বটে।

এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কলেজের সৌন্দর্য আরো বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আমরা যতটা কল্পনা করছি তার চেয়েও সুন্দর হয়ে উঠবে কলেজ ক্যাম্পাস। কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সমগ্র রাজশাহীবাসী এর মাধ্যমে উপকৃত হবে।

সেখানে খেলাধুলার মাধ্যমে তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রাখতে পারবে। এজন্য কলেজের শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক, বারিক মৃধা, আনিসুজ্জামান মানিক, মনিরুল ইসলামসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি। 

আরপি / এমবি-২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top