বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেলে ভর্তি: আবেদন নেওয়া হলেও পরীক্ষা অনিশ্চিত
এক বছর ধরে বন্ধ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে খোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় তৈরি হয়েছে শঙ্কা। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরীক্ষা বন্ধের সুপারিশ এসেছে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্য কার্যক্রমের সঙ্গে নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষাগুলোও যথাসময়ে নেওয়া সম্ভব হবে কি না, সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। ২ এপ্রিল মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নির্ধারিত আছে। এর মাধ্যমে এবারের মৌসুমের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর সোমবার বলেন, ভর্তি পরীক্ষার দুটি অংশ। একটি হচ্ছে আবেদন গ্রহণ, অপরটি পরীক্ষা। ভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি হলেও ব্যক্তি পর্যায়ে আবেদন নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেননা সব ধরনের আবেদনই অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে। এখন হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবেদন নিয়ে রাখবে। এরপর উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়টি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
সরকার এবার প্রথমবারের মতো বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। দেশে বর্তমানে এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় ৪৭টি। এছাড়া আছে ৯৬টি চালু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১০৫টি সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ। প্রায় অর্ধশত ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিট (সরকারি মেডিকেল কলেজের সঙ্গে) আছে। মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তিও অভিন্ন পরীক্ষায় করা হয়ে থাকে। একই প্রক্রিয়ায় ভর্তি করছে দেশের ডেন্টাল কলেজগুলো। পাবলিক ৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও অনার্স প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি নিচ্ছে ৩৯টি। এর মধ্যে এবার গুচ্ছবদ্ধ হয়ে ভর্তি করছে ৩০টি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভর্তির জন্য এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ভিড় থাকবে বেশি। কেননা একদিকে এবার শতভাগ শিক্ষার্থী এইচএসসি পাশ করেছে, অপরদিকে গত বছর ভর্তিবঞ্চিত শিক্ষার্থী আছে। ভর্তি-ইচ্ছুক বা আবেদনকারী যে বেশি হবে, ইতোমধ্যে সেই প্রমাণ মিলেছে। গত বছর মেডিকেল কলেজে আবেদনকারী ছিল ৭২ হাজার। আর এবার এমবিবিএসে ভর্তি পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদন করেছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৪ জন। অর্থাৎ, আবেদনকারী বেড়েছে ১৫২ শতাংশ। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই আবেদন নেয়।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২০১৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশ করেছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ শিক্ষার্থী। ওই বছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও স্নাতক কলেজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল ৭ লাখ ৮২ হাজার ৬১৬ জন। এদের মধ্যে অন্তত ১ লাখ শিক্ষার্থী আগের বছর এইচএসসি পাশ করা। অন্যদিকে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পাশ করেছে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ শিক্ষার্থী।
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) গ্রুপের ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনে ন্যূনতম যোগ্যতা ধরেছে এসএসসি বা এইচএসসির যে কোনো একটিতে ন্যূনতম জিপিএ ৩ এবং উভয়টি মিলিয়ে সাড়ে ৬ পেতে হবে। এই হিসাবে জিপিএ ৫ থেকে জিপিএ ৩ পাওয়া ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৬১। এই হিসাবে প্রতীয়মান হচ্ছে-গতবছরের তুলনায় ভর্তি-ইচ্ছুক বাড়বে প্রায় ৪ লাখ। এতসংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য চলাচল করলে স্বাভাবিক কারণেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
আবেদন ও ভর্তি প্রক্রিয়া পরিস্থিতি : মেডিকেল কলেজগুলোয় আবেদন নেওয়া শেষে পরীক্ষা নির্ধারিত আছে ২ এপ্রিল। ডেন্টাল কলেজগুলোয় ভর্তির আবেদন নেওয়া শুরু হবে ২৭ মার্চ আর শেষ হবে ১৫ এপ্রিল। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এ সংক্রান্ত সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে।
তবে মূল ভর্তিলড়াই শুরু হবে মে মাসের শেষের দিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। ২১ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি ভর্তি পরীক্ষা নেবে। ৭ মার্চ রাজশাহী এবং ৮ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে আবেদন নিচ্ছে। ১৮ মার্চ রাজশাহী এবং ৩১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন নেওয়া শেষ করবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ৫ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আবেদন নেবে। এগুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২১ মে থেকে পরীক্ষা নেবে। ৫ জুন ভর্তি পরীক্ষা শেষ হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ থেকে ১৬ জুন হবে পরীক্ষা আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ জুন থেকে ৮ জুলাইয়ের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করা আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখনো আবেদন নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করেনি। তবে মে মাসে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয় ৬ জুন থেকে ২০ জুনের মধ্যে পরীক্ষা নেবে বলে ইতোমধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম জানিয়েছেন। বুয়েট ভর্তির আবেদন ফর্ম বিতরণ শুরু করেনি। ১০ জুন দেশসেরা এই প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষা নেবে বলে জানা গেছে।
সরকার এবার প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের অনুরোধ জানিয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়েছে ৩০টি। যে ৯টি গুচ্ছের বাইরে আছে সেগুলোর মধ্যে উল্লিখিত ৫টি আছে। আরও আছে, বাংলাদেশ টেক্সাইল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি পরীক্ষা নেবে ১৮ জুন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ জুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে ৪ ও ৫ জুন পরীক্ষা এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ভর্তি পরীক্ষা ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের বৈঠকে নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই তারিখের এক থেকে দেড় মাস আগে ভর্তির আবেদন নেওয়ার কথা আছে। শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের আরেকটি জায়গা হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত চার শতাধিক কলেজ। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অনলাইন আবেদন নেওয়া হবে ৮ জুন থেকে ২২ জুন। আর ২৮ জুলাই প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত আছে। এছাড়া ১ম বর্ষ প্রফেশনাল কোর্সের অনলাইন আবেদন নেওয়া হবে ২৩ জুন থেকে ১১ জুলাই। ১২ আগস্ট থেকে প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাস শুরু হবে।
এবারও কৃষি এবং কৃষি সমগোত্রীয় সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছে পরীক্ষা নেবে, যা ৩১ জুলাই হতে পারে। বুয়েট বাদে বাকি তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েট, চুয়েট ও রুয়েট একই গুচ্ছে পরীক্ষা নিচ্ছে ১২ জুন। এর আগে এটিও ফর্ম বিতরণ করবে। সূত্র জানিয়েছে, রোজার মধ্যে এই গুচ্ছে আবেদন নেওয়া হতে পারে।
গুচ্ছবদ্ধ সবচেয়ে বড় গ্রুপ হচ্ছে জিএসটি বা সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই গ্রুপে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। জুনের শেষ দুই শনিবার এবং জুলাইয়ের প্রথম দুই শনিবার বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার পরীক্ষা হবে এই গ্রুপের।
আরপি/ এসআই-৮
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: