রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

শখের ‘গ্লাডিওলাস’ ফুল চাষে স্বাবলম্বী যুবক


প্রকাশিত:
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০০:০২

আপডেট:
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০০:০৬

ছবি প্রতিনিধি

মাস্টার্স পাশের আগে, শখের বসে বাড়ির পাশের পতিত ৩ শতক জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেন সোহেল রানা। প্রথমবার ফুল চাষ করেই লাভবান হয়েছেন তিনি। মাত্র তিন হাজার টাকা খরচ করে তাঁর সেই জমিতে ফুল বিক্রি করেছেন ৮ হাজার টাকার। ফুল চাষে সাফল্য দেখে উৎসাহ বাড়তে থাকে তার। সেই থেকে ফুল চাষের পরিকল্পনা নেন।

শখের সেই গ্লাডিওলাস ফুল এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন। আর বেকার জীবনে ফুলের চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবক সোহেল রানা। তার বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার হামিদকুড়া গ্রামে। অভাব এখন আর তাঁর দুয়ারে হানা দিতে পারে না।

বর্তমানে ২০ শতক জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেছেন। খরচ বাদে ফুল বিক্রি করে তাঁর ৩ মাসে আয় হয়, ২ লক্ষ টাকা। আধা পাকা বাড়ি নির্মাণে তার বাবা শাহাবাজ আলীকে সহযোগিতা করেছেন ফুল চাষের আয় থেকে। এ ছাড়া জমি ইজারা নিয়ে অন্য আবাদও করছেন।

বুধবার (১৭-০২-২০২১) সরেজমিন দেখা গেছে, সোহেল রানার বাড়ির পূর্ব দিকে ফুলের বাগান। সেই বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সোহেল রানা। তার বাগানে ২জন শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাঁর সরবরাহ করা ফুল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন, স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ীরা। নিজ জেলার বাইরে নাটোর, ঈশ্বরদীর দোকানে ফুল সরবরাহ করছেন। এই বছর ডিসেম্বরে অর্ধেক ফুল বিক্রি করেছেন ৮০ হাজার টাকার। আরও অধিক টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন।


তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বিভিন্ন জাতীয় দিবসের আগে ফুল সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তাই আগামী বছর জমি লীজ নিয়ে আরও ২ বিঘা জমিতে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। গ্লাডিওলাস ফুলের পাশাপশি গাঁদা ও গোলাপ ফুল চাষের পরিকল্পনা নিয়েছেন।

সোহেল রানা জানান , সম্পদ বলতে ছিল বসতভিটাসহ তিন বিঘা জমি। বাবার আয় বলতে জমিই ছিল ভরসা। সেই জমির ফসল আবাদে সার, ডিজেল ও চাষাবাদের খরচ বাদ দিয়ে সংসারের খরচ হতো না। বাবার দিন মজুরির আয় আর জমির উৎপাদিত ফসল মিলে কোনোমতে চলতো চার সদস্যের সংসার ।
উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ২০১৫ সালে বাড়ির পাশের ৩ শতক পতিত জমিতে সাদা, হলুদ ও গোলাপি রঙের গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেন। যশোরের ঝিকরগাছা থেকে ফুলের বীজ সংগ্রহ করেন। প্রথম বছর প্রতিটি ফুলের স্টিক বিক্রি করেছেন ৭ থেকে ৮ টাকায়। ফুল চাষে বাড়তি আয়ের, চিন্তা থেকে পরের বছরে ৯ শতক জমিতে ফুলের চাষ করেন। সেই ফুল বিক্রি করে খরচ বাদে লাভ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর ফুল চাষের পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। দামও তুলনামূলক বেশি থাকে।

সোহেল রানা বলেন, ২০১৭ সালে মাস্টার্স পাশ করে কোন চাকুরি পাননি। বেকার জীবনে বাড়তি আয়ের জন্য বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ শুরু করেন। বর্তমান বাজারে প্রতিটি ফুলের স্টিক ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুল ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিটি ফুলের স্টিক বিক্রি করেন ১২ থেকে ১৪ টাকায় ।
বাঘা পৌর সদরে আড়ানি রোডের রায়হান ফুল সমাহারের স্বত্বাধিকারী আবু রায়হান ও রফিক ফুলের স্বত্বাধিকারী রফিক আলম বলেন, শহর থেকে ফুল আনতেই শুকিয়ে যেত, খরচও বেশি পড়ত। এখন গ্রাম থেকে কিনে বিক্রি করতে পারছেন। শহর থেকে কেনার তুলনায় লাভও বেশি হচ্ছে। পাশাপাশি কম দামে তাজা ফুল পাচ্ছেন ক্রেতারা ।


কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে,উপজেলায় এই প্রথম হামিদকুড়া গ্রামে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করা হয়েছে। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে এ ফুলের চারা রোপণ করতে হয়। ৩ মাসের মধ্যে ফুল পাওয়া যায়। ফুল বিক্রি করে সেই জমিতে আবার বোরো চাষ করা যাবে। উপজেলা কৃষি অফিসার, কৃষিবিদ শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, পরীক্ষামূলক গ্লাডিওলাস চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। কৃষকদের ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাঁদের বীজ দিয়ে সহায়তা দেওয়া হবে। ফুল বিক্রির পর কৃষকেরা বীজও বিক্রি করতে পারবেন। তিন শতক জমি থেকে অন্তত ১০ হাজার টাকার চারা বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। অল্প জমিতে স্বল্প সময়ে এই ফুল চাষ করে অধিক উপার্জন করা সম্ভব।

আরপি/ এসআই-৬



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top