রাজশাহী বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

বাঘায় পদ্মা চরে

পানিবন্দী ১৮শ’ পরিবার, গৃহহীন দেড় শতাধিক, পৌঁছেনি ত্রাণ


প্রকাশিত:
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২০:৫৯

আপডেট:
৮ মে ২০২৪ ২২:১২

পানিবন্দী পদ্মা চরের মানুষ।

রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার ১৫টি চরের প্রায় ১ হাজার ৮০০ পরিবার এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত পরিবারগুলোর মাঝে কোনো ত্রাণসামগ্রী দেয়া হয়নি। ফলে ত্রাণের অপেক্ষায় তারা প্রহর গুনছেন। ইতোমধ্যে ভাঙ্গনে দেড় শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছেন। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।

অন্যদিকে, উপজেলা প্রশাসন বলছে, এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ত্রাণের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বরাদ্দ পেলে তাৎক্ষণিক সহযোগিতা করা হবে।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, দিয়াড়কাদিরপুর একটি চর। এই চরে শরিফুল ইসলাম, করিম মোল্লা, জাহাঙ্গীর হোসেন, হাফিজুর রহমান, সাবিরুল ইসলাম, আবেদ আলী, আজিজুল ইসলাম, কালাম মোল্লা, কাদের মোল্লা, আনিসুর মোল্লা, আবু সামা, আবদুর রাজ্জাক, কালাম হোসেন, সিদ্দিক হোসেনসহ ২৩টি পরিবার বসবাস করে। এক সপ্তাহ যাবত তারা পানিবন্দী হয়ে আছেন। তাদের মতো আরো ১৪টি চরের একই অবস্থা। তাদের বের হওয়ার কোন পথ নেই। তারা এক বাড়ি থেকে পাশের বাড়ি যেতে পারে না। টিন দিয়ে তৈরী করা হয়েছে ডিঙ্গি নৌকা। এই নৌকায় এক জনের বেশি উঠা যায় না। এভাবে তারা চলছে এক সপ্তাহ যাবৎ। আশেপাশে বাজারও নেই। বাজার অনেক দূর, যেতে হলেও একইভাবে যায়। তাদের আয়ের উৎস কৃষি কাজ।

বর্তমানে চারদিকে পানি। বাড়িসহ সব জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। পানি উঠার কারনে তাদের কোন কাজ নেই। তবে এরমধ্যে কেউ কেউ মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। পদ্মার ১৫টি চরে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস করে। পরিবার রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬০০টি। এরমধ্যে দিয়াড়কাদিপুর চরে ২৩টি পরিবারে জনসংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। তারা প্রায় প্রতিটি পরিবারই অন্যের জমি বাৎসরিক ভাড়া নিয়ে বাড়ি করে বসবাস করেন। ২০ কাঠা জমি এক বছরের জন্য সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা।
এই চরে বসবাস করে চকরাজাপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জালাল উদ্দিন। মেম্বারের বাড়িতে পানি উঠায় তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন।
এই চরের সাবিরুল ইসলাম বলেন, আমি, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে অন্যের কাছে থেকে জমি ভাড়া নিয়ে দুটি ঘর তৈরী করে বসবাস করছি। তারপর পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানি উঠেছে। বর্তমানে দুটি ছালগ ও দুটি গুরু নিয়ে বিপদে আছি। তার স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, ঘরে চাল ছিল না। এখন পানি উঠায় কৃষি কাজ নেই। তাই কোন কোন সময়ে জাল দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে। যে টাকা হয় এই দিয়ে কোন রকম সংসার চলছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জালাল উদ্দিন বলেন, আমি ২০১৬ সালে মেম্বার নির্বাচিত হয়েছি। চলতি বছরে সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা পায়নি। পদ্মার চরের মধ্যে দিয়ারকাদিরপুর, টিকটিকিপাড়া চরসহ চকরাজাপুর ও কালিদাসখালির কিছু অংশ নিয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এই ওয়ার্ডে পরিবার রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক। ভোটার রয়েছে এক হাজার ৩৫ জন। চরের মধ্যে আমার ওয়ার্ড অধিকাংশ ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।
এছাড়া পূর্ব চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙ্গনের ফলে অন্যাত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। লক্ষীনগর ও চরকালিদাসখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মার ভাঙ্গনে হুমকির মধ্যে রয়েছে। এদু’টি স্কুলও যেকোনো সময় পদ্মা গর্ভে বিলীন হবে।

এদিকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কালিদাসখালি চরের মেম্বার আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার প্রায় ১০ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরমধ্যে তিন বিঘা জমির উপর আম বাগান পদ্মা গিলেছে। আমার ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৮০০। পরিবার রয়েছে ২৬৫টি। তাদের অধিকাংশ বাড়িতে পানি উঠেছে। তারা এখন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিযুল আযম বলেন, পদ্মার চরের ৩ হাজার ৬০০টি পরিবার রয়েছে। এরমধ্যে ৫০ ভাগ বাড়িতে পানি উঠেছে। ফলে তারা এখন পানিবন্দী রয়েছে। চরের অধিকাংশ বাড়ির পাশে পানি এসেছে। কিছু কিছু বাড়ি ডুবেও গেছে। এছাড়া সিংহভাগ জমির ফসল পানির নিচে। ভাঙ্গনের কারনে চরের দেড় শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছে। তারা অন্যাত্র আশ্রয় নিয়েছে। এরমধ্যে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। কিন্তু তাদের জন্য কোন সরকারিভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়নি। ফলে তারা গরু-ছাগল নিয়ে মানবেতর জীনন যাবন করছেন।

উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিন রেজা বলেন, বৃহস্পতিবার পদ্মার চর এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ত্রাণের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। বরাদ্দ পেলে তাৎক্ষনিক সহযোগিতা করা হবে।

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top