রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

চারঘাটের ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলছে রমরমা প্রতারণা


প্রকাশিত:
২০ অক্টোবর ২০২০ ০১:১৫

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২:০০

প্রতীকী ছবি

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডানে-বায়ে যেদিকেই চোখ যায়- দেখা মেলে নানা রঙের আলোয় আলোকিত-সুসজ্জিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানে সেবার নামে চলে টেস্ট বাণিজ্য, জালিয়াতি, প্রতারণা, হয়রানি। সেবার ছিটেফোঁটাও পায় না রোগীরা।

বেসরকারি এসব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দালাল হিসেবে কাজ করে স্থানীয় কিছু যুবক-যুবতী ও সরকারি হাসপাতালেরই নার্স-আয়া-ক্লিনাররা। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে এখানে নিয়ে আসে তারা। বিনিময়ে নেয় মোটা অংকের কমিশন। অথচ প্রয়োজনীয় সেবা পায় না রোগীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশেরই অনুমোদন নেই। যেগুলোর অনুমোদন আছে সেগুলোর সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনুমোদনের অনেক শর্তই পূরণ করেনি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো, নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র, পর্যাপ্ত জনবল। দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ঘিঞ্জি-দুর্গন্ধময় পরিবেশ, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট দিয়ে দেদারছে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

আরো জানা গেছে, অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, ল্যাবরেটরি, প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান। এ কারণে রোগীদের কাছ থেকে স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দিচ্ছে কিছু প্রতিষ্ঠান। কাজটি নিখুতভাবে করতে আগেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাডে ল্যাব টেকনিশিয়ান ও ডাক্তারের স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হচ্ছে। পরে ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জালিয়াতরা।

তথ্য মতে, কোনো এলাকায় ক্লিনিক পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়। আর এ রেজিষ্ট্রেশন প্রতি বছর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে নবায়ন করতে হয়। এ জন্য পাকা এবং ছাদ ঢালায় বিশিষ্ঠ ঘর দেখানো সহ ওই ক্লিনিকে সার্বক্ষনিক ৩ জন ডাক্তার , ৬ জন ডিপ্লোমা নার্স ,৬ জন আয়া এবং আগুন নেভানো ম্যাশিন সহ পুরো ক্লিনিক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, জেনারেটর ব্যবস্থা এবং ব্লাড সংরক্ষনের সু-ব্যবস্থা চালু রাখা-সহ নির্ভর যোগ্য (এসি)ওটি ব্যবস্থা থাকতে হয়। কিন্তু এসব শর্ত পূরণের কোনই ব্যবস্থা নেই এখানকার ক্লিনিক গুলোয়। একই অবস্থা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

স্থানীয় সমাজসেবক সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, এখানে যে সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে তারা রোগী আনার জন্য এক ধরনের দালাল নিয়োগ-সহ প্রতিদিন মাইকিং করে যাচ্ছে। বড়-বড় ডাক্তারের নাম ভাঙিয়ে তারা রোগী নিয়ে আসে। এমন ও লক্ষ করা যাচ্ছে ,একই ব্যক্তি প্রসূতি মা’দের ইনজেকশান দেয়া সহ অপারেশন করছে। এতে অনেক সময় রোগী মারা যাচ্ছে। এরা সরকারী কোন নিয়ম-নীতি মানছে না।

চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আশিকুর রহমান বলেন, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উপজেলার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছি আপডেট কাগজ-পত্র কারোরই নেই। সেজন্য সকল প্রতিষ্ঠানকে কাগজপত্র ঠিক করতে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল, তবে আলটিমেটামের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান গুলো হলো- দি মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফাতেমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চারঘাট ডায়াগনস্টিক সেন্টার, গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যারাগন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রাজ ক্লিনিক, স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক, বিএম ক্লিনিক, মিম কমিউনিটি হাসপাতাল।

তিনি বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আবারও প্রতিষ্ঠান গুলোর কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করা হবে। এবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া না গেলে সেগুলো সিলগালা করে দেওয়াসহ কঠিন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন,‘ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সেটি যদি প্রমানিত হয় তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top