রাজশাহী বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত চান নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধার শতবর্ষী মা লক্ষীরাণী


প্রকাশিত:
১১ অক্টোবর ২০২০ ০৫:০৩

আপডেট:
৮ মে ২০২৪ ২৩:২৮

লক্ষীরাণী। ছবি: প্রতিনিধি

শেষ জীবনে আর কোন চাওয়া নেই। ছেলে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করে ছিলেন। দেশ স্বাধীন দেশ হওয়ার পরও ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে তাঁর বাড়িতে প্রকাশ্যে আগুন দিয়ে তান্ডব ও লুটপাট চালায়। এখন মুক্তিযোদ্ধা স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায়, তাই এই শতবর্ষী নির্যাতিত নারীর আর্তনাত শেষ বারের মত একবার প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত চাই। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে খোলা চিঠি লিখেছেন।

শতবর্ষী শ্রীমতি লক্ষীরাণী উপজেলার ঝাঁলুকা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী মৃত দশরথ চন্দ্র কবিরাজ (মাষ্টার)। তাঁর বড় ছেলে মৃত ধীরেন্দ্রনাথ করিরাজ উপজেলার তালিকা ভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রেমিক এই বৃদ্ধা আট সন্তানের এখন শতবর্ষী মা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর বয়স এখন ১শ ৩ বছর।

শতবর্ষী লক্ষরাণী বলেন, আমার জীবনের সব থেকে বড় কষ্টের মুহূর্ত ছিল, যেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। কিন্তু আমার সৌভাগ্য হয়েছে খুনিদের ফাঁসি দেখতে পেয়েছি। আওয়ামী লীগের সংগ্রামের ইতিহাসের সাথে আমার পরিবার মিশে আছে। আমার বড় ছেলে মৃত ধীরেন্দ্রনাথ কবিরাজ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করার কারণে বহু নির্যাতন আমাদের সইতে হয়েছে। তবু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে এখনো টিকে আছি। ঝাঁলুকা গ্রামের সংখ্যালঘু আওয়ামী লীগ করা একমাত্র পরিবারই আমার। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ এই আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ২০০০ সালের শেষের দিকে তৎকালীন বিএনপি জামায়াত সরকারের এমপি নাদিম মোস্তফার সন্ত্রাসী বাহিনী আমার বাড়িতে হামলা চালায়।

তিনি বলেন, আমিও আমার স্বামী দশরথ চন্দ্র কবিরাজ ও ছেলে মেয়েরা মারাত্মকভাবে আহত হয়। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয় আমাদের বসতবাড়ি। প্রাণভয়ে পালিয়ে যাই বাড়ি থেকে। বিনা চিকিৎসায় স্বামীকে নিয়ে পালিয়ে থাকি বছরের পর বছর। ওই ঘটনা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পেলে আরো ক্ষিপ্ত হন তৎকালীন এমপি নাদিম মোস্তফা। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনের পর সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মি নির্যাতনের নীল নকশা তৈরি করে ছিল। সেই তালিকায় দুর্গাপুর উপজেলায় প্রথমেই আমার পরিবারের নাম ছিল। দ্বিতীয় দফায় বাড়িতে ফিরে সেই ভাঙা বাড়িতে থাকতে শুরু করি। ৪ অক্টোবর ২০০১ সাল। বিএনপি জামায়াত সরকারের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় অবশিষ্ট বাড়ির সম্পূর্ণ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় আমার পরিবারের সবাইকে মারধোর করা হয়। এমনকি তাদের হাত থেকে রক্ষা পায় নি নিরীহ পশুপাখিও।

মুক্তিযোদ্ধার মা লক্ষরাণী বলেন, তৎকালীন বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসীরা বাড়িতে আগুন দিয়ে ক্ষান্ত হন নি। সব কিছু লুট করে নিয়ে যায় তাঁরা। একে একে দখল করে নেয় বসত বাড়ির ভিটামাটি। সে সময় সাথে প্রাণভয় আমি আমার সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন দিকে চলে যাই। আজও সন্তানরা প্রাণভয়ে বিভিন্ন জায়াগায় বসাবস করে। তাদের এখনোও একত্রিত করতে পারি নি। ২০০১ সালের ৪ অক্টোবরের পর আমি আর আমার আহত অসুস্থ স্বামী দশরথ চন্দ্র কবিরাজ এক কাপড়ে নিজ বাড়ি ত্যাগ করি। বিনা চিকিৎসায় লুকিয়ে লুকিয়ে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান করি। পালিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় অর্থ ও খাদ্য সংকট দেখা দেয়। সেই সাথে তাঁর স্বামীরও শারীরিক অবস্থারও খারাপ হতে থাকে। পরে সে বিনা চিকিৎসায় সে মারা যান। আমার পরিবারের এই করুণ পরিণতির কথা তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। নির্যাতনের খবর প্রকাশ হলে দেখা করার সুযোগ হয় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে। তিনি আমাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনেন ও সময় হলে বিচারের আশ্বাস দেন। নিজ হাতে আমাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেন এবং আশ্বাস দেন সময় সুযোগ এলে কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী দশরথ চন্দ্র কবিরাজের পরিবারের নির্যাতনের কথা ভুলে যাননি। এখন আমার জীবন শেষের দিকে, জানিনা কখন মারা যাবো। তবে জীবনে কিছু অপ্রকাশিত কথা আছে, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বলতে চাই। জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরুণে তিনি এই সুযোগটুক দিবেন।

শতবর্ষী জননীর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান সুকুমার রায় বলেন, মায়ের শেষ ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করা। সেই ইচ্ছা পূরণের আশায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর তাঁর হয়ে খোলা চিঠি লিখেছি। জানিনা সেটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাবে কিনা তার সাথে দেখা হবে কিনা। মমতাময়ী শেখ হাসিনা,পর্যন্ত এই চিঠি পৌঁছালে নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমাদের দেখা হবে। আওয়ামী লীগ করার কারণে কত নির্যাতন আমাদের সইতে হয়েছে সেটি দেশবাসীর সামনে আবার আসবে। আমিও সেই নির্যাতনের চিহ্ন সহ এখনো কাতরাচ্ছি। সকলের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, তাঁর মা একবারের জন্য হলেও প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে পারেন।

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top