রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

চারঘাটের সংগ্রামী ও আত্মপ্রত্যয়ী এক নারীর নাম মুনজেরা


প্রকাশিত:
১ অক্টোবর ২০২০ ০২:৫১

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:১৯

মুনজেরা খাতুন। ছবি: প্রতিনিধি

সমাজে নারীরা অসহায় না, নিজে ইচ্ছা করলে করতে পারেন অনেক কিছু। বাঁচতে পারেন সম্মান নিয়ে। এমন একজন জীবন সংগ্রামী মানুষ হলেন রাজশাহীর চারঘাট বাজারের মুরগি বিক্রেতা মুনজেরা খাতুন।

স্বামীর মৃত্যুর পর জীবন সংগ্রাম হিসেবে বেছে নিয়েছেন স্বামী আব্দুল মান্নানের পেশা মুরগি বিক্রি। জীবিকার তাগিদ ও মেয়েদের ভবিষৎ গড়তে হয়ে যান গৃহবধূ থেকে বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী। শুরুতে অনেকে অনেক কটু কথা শোনালেও সকল বাঁধা-বিপত্তি উপক্ষো করে নিজের মতো করে এগিয়ে গেছেন।

প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয় তার জীবনযুদ্ধ। বিভিন্ন খামার থেকে মুরগি সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসেন। আর সারাদিন মুরগি বিক্রি করে সন্ধার পরে শেষ হয় তার কর্মযজ্ঞ।

বিয়ের আগে বা পরে মুনজেরা খাতুন চিনতেন না চারঘাট বাজারসহ আশপাশ এলাকা। কিন্তু তার স্বামীর মৃত্যুর পর সংসার ও তিন মেয়ের ভবিষৎ গড়তে স্বামীর পেশা মুরগির ব্যবসাকেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেন। একা মানুষ হওয়ায় ব্যবসা শুরুর প্রথম থেকে অনেক সমস্যায় পড়েছেন। তবে এখন স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে তার ব্যবসা ও সংসার।

মুনজেরা খাতুন চারঘাট পৌরসভা এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের স্ত্রী। তার নিজস্ব বলতে কিছু নেই। শুধু বাড়ির জমিটুকুই সম্বল। ২০০৪ সালে তার স্বামী আব্দুল মান্নানের মৃত্যু হয়। এরপর যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে মুনজেরার। দিশেহারা হয়ে পড়েন তিন মেয়ের ভবিষৎ ও সংসার চালানো নিয়ে। একপর্যায়ে স্বামীর পেশাকেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেন এবং আর দশজন পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে মুরগি ব্যবসায় মনযোগী হোন।


নারী বিক্রেতা হিসেবে চারঘাট কাঁচা বাজারে তিনি একা। আগে মুরগি বিক্রেতা বলে অনেকেই তাকে কটু কথা শোনাত। তবে এসবে পাত্তা না দিয়ে আপন মহিমায় এগিয়ে চলেছেন মুনজেরা খাতুন। এখন আর কেউ তার পেশা নিয়ে বাজে মন্তব্য করে না। মেয়েদের নিয়ে ভালোই আছেন তিনি।

মুনজেরা বেগম বলেন, তার স্বামী মারা যাবার পর সংসারের খরচ জোগাতে মুরগির ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে মেয়েদের জন্য নাস্তা তৈরি করে মুরগি সংগ্রহে খামারে যেতেন। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত মুরগি বিক্রি শেষে বাজার সদাই করে বাসায় ফিরে আসেন। এর মাঝেই তিন মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন। তাদের মধ্যে বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে এখনো পড়াশোনা করছে। বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা নাজুক, তবুও সংসার চলছে ভালই। কারও কাছে হাত পাততে হয় না। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটাই- তার মেয়েরা যেনো সুখ থাকে। আর নিজে যেন আত্নসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারেন।

চারঘাট বাজারের অন্য মুরগি বিক্রেতারা বলেন, আব্দুল মান্নানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী মুনজেরা যেভাবে তার মুরগি বিক্রির পেশাকে নিজের পেশা হিসেবে নিয়েছেন, তা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। তাদের (পুরুষ) মতো করেই খামার থেকে মুরগি সংগ্রহ করে আবার সেগুলো সারাদিন বিক্রিও করেন। নারী হিসেবে সমাজের কাছে তিনি একজন দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে বোঝা যায় নারীরা সবই পারে।


স্থানীয় সমাজকর্মী সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন , ‘নারীকে শুধু নারী না, মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে এবং নারীরা ইচ্ছা করলে পুরুষের মতো স্বাবলম্বী হতে পারেন। এর প্রকৃত উদাহরণ হচ্ছে বাজারে মুরগি বিক্রেতা মুনজেরা খাতুন। তার স্বামীর মৃত্যুর পর মুরগি ব্যবসার হাল ধরেন এবং নিজেই বিক্রি শুরু করেন। এতে অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও সব বাঁধাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন। সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের উচিত তাকে অনুপ্রেরণা দেয়া।’

চারঘাট উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজমিরা খাতুন বলেন, নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। মুনজেরা খাতুন তাদের মধ্যে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুরগি বিক্রি করে সংসার পরিচালনা ও সন্তান মানুষ করছেন। আমি একজন নারী নেত্রী হিসাবে তাকে অভিনন্দন জানাই। জীবন সংগ্রামে একজন সফল নারী মুনজেরা খাতুন।

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top