রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

ভাইবোনের দ্বন্দ্ব মেটাতে গিয়ে বিপদে এসআই!


প্রকাশিত:
২৫ জুলাই ২০২০ ২০:৪৫

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ১৩:০১

এসআই শাহিনুর ইসলাম শাহীন

ভাইবোনের দ্বন্দ্ব মেটাতে গিয়ে বিপদে পড়েছেন রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) কর্ণহার থানার এসআই শাহিনুর ইসলাম শাহীন। ধস্তাধস্তিতে কাদাতে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন কর্ণহার থানার তেতুলিয়া উত্তরপাড়া গ্রামের জহরুল ইসলাম (৪৮)।

গত ১২ জুনের এই ঘটনায় উল্টো পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিপেটার অভিযোগ উঠেছে। পরে এনিয়ে গণমাধ্যমে খবর বেরুলে শাস্তির মুখে পড়েন এসআই শাহীন। এ ঘটনায় এসআই শাহীনকে নগরীর বেলপুকুর থানায় বদলি করা হয়।

তবে সেদিন পুলিশ কাউকে পেটাননি বলে জানিয়েছেন তেতুলিয়া উত্তরপাড়া গ্রাম প্রধান ছেহের আলী। তার ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে বসতবাড়ি নিয়ে বোন তাজলেমার সাথে জহরুলের বিরোধ চলে আসছিলো।

পরে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও থানার ওসি স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে জমি মাপজোখ করে সীমানা নির্ধারণ করে দেন। সেই সীমানার মধ্যে বাড়ি নির্মাণ করেন তাজলেমা।

গত ১২ জুলাই বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মানের কাজ করাচ্ছিলেন। কিন্তু জহরুল তাতে বাধা দেন। বোনকে মারধরও করেন তিনি। খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে যান থানার এসআই শাহীন।

জহরুলকে ছেলে নূরুলসহ তাকে আটক করে থানায় নিচ্ছিলো পুলিশ। ওই সময় অন্য দুই বোন জহরুলকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের সাথে ধস্তাধাস্তি শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে কাদায় পড়ে যান জহরুল।

ছেহের আলী আরও বলেন, তিনি নিজেই জহরুলকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই সময় চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, হৃদরোগি হওয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে বিষয়টি জটিল কিছু নয়। পরে কতিপয় লোকজন এই ঘটনাকে পুঁজি করে পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নামে।

ভুক্তভোগী তাজলেমা বলেন, ওই দিন তার ভাইয়ের নির্দেশ তার উপর হামলা চালান তার মা রুপবান, বোন রঞ্জিলা ও সুরজেনা এবং ভাবি নূরবানু।

ওই সময় তার ১১ বছর বয়সি ছেলে জীবন পুরো ঘটনা পাশে থেকে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলো। তা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে জহরুলের ছেলে নূরুল জীবকে মাথায় তুলে আছাড় দেয়। আছড়ে ভেঙ্গে দেয় ফোন। তার উপরও দফায় দফায় চলে নির্যাতন। খবর পেয়ে পরে পুলিশ পৌঁছায়। পরে পুলিশ তার ভাই জহরুল ও তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে জহরুল ভয়ে জ্ঞান হারান।

তাজলেমার ভাষ্য, স্বামী না থাকায় ভাইদের বাড়ির পাশেই বাড়ি করে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে তিনি বসবাস করে আসছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তার ভাই ও স্বামী পরিত্যক্ত আরো দুই বোন তার উপর নানাভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। পরিবারের কথা চিন্তা করে তিনি এখনো আইনী ব্যবস্থা নেননি।

জানতে চাইলে এসআই শাহীন বলেন, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। মুল অভিযুক্ত জহরুলকে তিনি হেফাজতে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকে ছিনিয়ে নিতে পরিবারের নারী সদস্যরা ধস্তাধস্তি শুরু করেন। এরই এক পর্যায়ে জহরুল পড়ে যান। তাকে মারধরের অভিযোগ সঠিক না। তার দাবি, পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কর্ণহার থানার ওসি আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, কাউকে মারধর করা তো দূরের কথা, কাউকে নির্যাতন করা যাবে না। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, গণমাধ্যমের খবরের সূত্র ধরেই এসআই শহীনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ যেন বিপদে না পড়ে সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন নগর ডিসি (সদর দপ্তর) রশিদুল হাসান।

 

আরপি / এমবি-৯



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top