বিলুপ্তির পথে চারঘাটের ঐতিহ্যবাহী খয়ের শিল্প, পড়েছে করোনার প্রভাব

রাজশাহীর চারঘাটে ঐতিহ্যবাহী খয়ের শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এক সময় এ পেশার সাথে জড়িত ছিলেন প্রায় ২ লাখ মানুষ।
এখন তা ২ হাজারের কোটায় নেমে এসেছে। বার বার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন চারঘাটের খয়ের চাষীরা। কিন্তু খয়ের শিল্পে নতুন ভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। করোনার কারনে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে ঢ়াকা, রংপুর, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জায়গার খয়েরের বাজার। তাছড়া খয়ের তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচা মালসহ বিভিন্ন উপকরণ গুলো পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এক সময় ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটি দেশ থেকে খুব দ্রুতই হারিয়ে যাবে।
১৯৫২ সালে রাজশাহীর চারঘাটের গোপালপুর গ্রামে খয়ের শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। এরপর পঞ্চাশের দশকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা বিহারিদের মাধ্যমে এই শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসার ঘটে। সে সময় স্থানীয়রা ব্যাপকভাবে এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে পড়েন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখনো বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছেন কিছু মানুষ।
১৫ বছর বয়সি গাছ খয়ের উৎপাদনের জন্য উপযোগি হয়। খয়ের গাছের উপরের সাদা অংশ তুলে ফেলে ভেতরের লাল বর্ণের শাস কুচি কুচি করে কেটে তা মাটির পাতিলে বিশেষ পদ্ধতিতে তাপ দিতে হয়। সেই তাপে শাস থেকে লাল রস বের হয়। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শক্ত খাটি খয়েরে রুপ নেয়।
খয়ের শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রাচীন উৎপাদন পদ্ধতি ও আমদানিকৃত বিদেশি খয়েরের সাথে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ, করোনার সময়ে খয়ের তৈরির উপকরণের সহজলভ্যতা ও খয়েরের বাজার চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন চাষীরা।
এদিকে ঐতিহ্যবাহী এই খয়ের গাছ লাগানোর জন্য সরকারিভাবে তেমন কোন উদ্যোগও চোখে পড়ে না। এছাড়া যে পরিমান গাছ রয়েছে সেগুলোও পর্যায়ক্রমে কেটে ফেলায় খয়ের বাগান দিনে দিনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টি, বিদেশে রফতানির ব্যবস্থা, করোনা বিপর্যয় কেটে গেলে এবং বিদেশি খয়ের আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে চারঘাটের ঐতিহ্যবাহী খয়ের শিল্পের সুদিন আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরপি/আআ-০২
বিষয়: খয়ের শিল্প বিলুপ্তি চারঘাট করোনা ভাইরাস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: