রাজশাহী রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ৩ হাজার মামলা, জরিমানা ৪২ লাখ


প্রকাশিত:
১৪ জুন ২০২০ ১৯:৪৬

আপডেট:
১৪ জুন ২০২০ ২২:৩৩

 

রাজশাহী জেলাতে প্রতিদিনই নতুন নতুন করোনা রোগী সনাক্ত হচ্ছে। রিতিমত হটস্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে রাজশাহী নগরী। এদিকে, বিভাগে বর্তমানে ২ হাজারের উপরে করোনা পজেটিভ রোগী। কিন্তু এর পরও মানুষকে কোনভাবেই যেন সচেতন করা যাচ্ছেই না। সবখানেই উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালাচ্ছে, মামলা করছে, জরিমানা আদায় করছে প্রশাসন। কিন্তু অবস্থার যেন কোন উন্নতিই হচ্ছে না। মানুষের চলাফেরা দেখে সচেতন মানুষ রিতিমত আতঙ্কিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, করোনা মোকাবেলায় গত তিন মাসে মামলা করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার। পাশাপাশি বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। গত মার্চ মাস থেকে জুন পর্যন্ত গত তিন মাসে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টের অভিযানে মামলা করা হয়েছে ২,৯৮০ টি। এসব মামলায় ২ হাজার ৯৯৩ জনকে জরিমানা করা হয় ৪২ লাখ ৬৮ হাজার ২৭০ টাকা। এসব মামলার বেশিরভাগই ধারাঃ দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৮৮, ২৬৯ ও ২৭১, সংক্রামক রোগ আইন। রাজশাহী জেলায় ২৬ টি মোবাইল কোর্ট টিম কাজ করছে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে।

গত বৃহস্পতিবারও মাস্ক না পরার অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধে জেলায় মামলা হয়েছে ১৬৫ টি, এতে জরিমানা করা হয় ১ লাখ ২৫হাজার ৪৫০ টাকা। সেই সাথে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে ৭,৫৬০ টি। শুক্রবারও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ৪৪ টি মামলায় ৪৪ জনকে জরিমানা করা হয় ১৭ হজার ৭০০টাকা। পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে ১,৫৪১ টি। শনিবারও এ ধারা অব্যাহত ছিলো। এদিন রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অভিযানে ১৮৭জনকে অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে। এসময় ৬৪হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১৮৭টি। একই দিন অস্বচ্ছলদের মাঝে ১হাজার ৩৪৭টি মাস্ক বিতরণ করা হয়।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুরো জেলায় হাট বাজার, রাস্তা ঘাটে মাস্ক বা মুখাবরন পরার উপরে বাড়তি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে গত কয়েক সপ্তাহ থেকে। মাস্ক না পরলে জরিমানা যেমন করা হচ্ছে, তেমনি নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণও করছে জেলা প্রশাসন। সামর্থ্যবানরা মাস্ক না পরলে মোবাইল কোর্ট এ জরিমানা করা হচ্ছে আর অস্বচ্ছলদের জন্য ফ্রি মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। তবে এত সব কিছুর পরও রাজশাহীতে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না মাস্ক ব্যবহার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যাত্রীবাহী অটো রিক্সাগুলোতে হাজার হাজার মানুষ চলাফেরা করছে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই। একই অটো রিক্সায় ঘেঁষাঘেঁষি করে চলাচল করছে। একই অটোতে ৬জনও চলছে। কারো মুখে মাস্ক থাকছে কারোবা উন্মুক্ত। কেউ আবার মাস্ক ঝুলিয়ে রাখছেন কানে।

কাঁচা বাজার, প্রধান সড়ক, অলিতে গলিতে কোন জায়গাতেনই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না শতভাগ মাস্ক ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি মানা বা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা। রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকায় মাস্ক ছাড়া চলাচল করছিলেন আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, অনেক গরম। সকাল থেকে বাজার করে ঘেমে গেছি। তাই একটু খুলে রেখেছি। পকেটেই আছে। তবে বাড়ি যাবার আগে পরে নিবো।

মাস্টারপাড়া কাঁচা বাজার এলাকার দোকানি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ি অনেক দূরে সেখান থেকে যাওয়া আসার জন্য মাস্ক ব্যবহার করি। তবে আগে তো কখনও এসব ব্যবহার করিনি তাই একটু খারাপ লাগে। এজন্য সামান্য একটু খুলে রাখি। সাহেব বাজারে অটো চালক আবদুল কাদের বলেন, আমার মাস্ক আজ আনতে ভুলে গেছি। সামনে কোন দোকান পেলেই কিনে নিবো। তবে অন্যান্য দিন আমি ঠিকই পরি। নিয়ম মেনেই গাড়ি চালাই।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, এই মুহুর্তে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা ও সচেতনতা ছাড়া আর কিছু করার নেই। মানুষ যদি নিজে সচেতন না হয় নিজের জীবনের মূল্য যদি নিজে না বুঝে এ কারণগুলোর জন্যতো জেলে নেয়া ঠিক হবে না। জরিমানা হচ্ছে, জরিমানা হওয়ার পরও সচেতন হচ্ছে না আসলে।

তিনি বলেন, মানুষ এটিকে কোন গুরুত্ব দিচ্ছেনা খুব বেশি। আমাদের কর্মতৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে আরকি। আমরা কোন কিছু বন্ধ করছি না। আরও উদ্যোম নিয়ে নতুন ভাবে মানুষকে মাস্ক পরানো ও সামাজিক দূরত্বটা নিশ্চিত করা এই মুহুর্তে আমাদের কাজ এই দুইটিই। এবিষয়ে আমরা আরও কঠোর হবো হয়তো। যদি দেখি মানুষ না মানে। সচেতন না হয়। এই মূহুর্তে হয়তো জরিমানার পরিমানটা আরও বাড়াবো। আমরা চেষ্টা করছি বেশি সংখ্যক মানুষকে শাস্তির আওতায় আনা। জমিরানাটা একটু কম হোক কিন্তু মামলার সংখ্যা বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যত বেশি আনবো তত বেশি সচেতন হবে। আমরা প্রতিটি উপজেলায় টার্গেট বেঁধে দিয়েছি। যেখানে যেখানে জনসমাগম হবে প্রতিটি উপজেলায় সর্বনিম্ন ৩০ টি মামলার টার্গেট দেয়া হয়েছে। তাহলে অনেক বেশি প্রচার হবে। তবে জরিমানা আরও বাড়নোর পরিকল্পনা রয়েছে, জানান তিনি।

রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহীতে বর্তমানে ১২৪জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজশাহী শহরের রোগী ৪৫জন। বাকিগুলো জেলার ৯ উপজেলার। জেলায় ৩জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সুস্থ্য হয়েছেন ৩৩জন। করোনা রোগীর এ সংখ্যা দেশের অন্য এলাকার তুলনায় খুব বেশি না হলেও গত কয়েকদিন ধরে যেভাবে রোগী বাড়ছে তাতে ভীতি ছড়াচ্ছে সচেতন মানুষের মনে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top