রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীর

বাঘায় থামছেই না পুকুর খনন!


প্রকাশিত:
৮ মে ২০২০ ০২:২৪

আপডেট:
৮ মে ২০২০ ০২:২৪

রাজশাহীর বাঘায় লোকচক্ষুর অন্তরালে রাতের বেলায় চলছে পুকুর খনন। পুকুর খনন বন্ধে জেলা প্রশাসকের ফেসবুক আইডি থেকে কঠোর হুঁশিয়ারির পর দিনে বন্ধ রেখে রাতের আঁধারে চলছে পুকুর খনন। ফজর নামাজের পর থেকে শুরু করে সকাল ৯/১০ টার মধ্যে শেষ করা হয় খনন কাজ।

একই নিয়মে আবার শুরু করা হয়। কোন কোন জায়গায় কৌশল অবলম্বন করে মাটি খনন মেশিন খনন যন্ত্র(ভ্যাকুর) এর পরিবর্তে শ্রমিক দিয়ে পুকুর খননের কাজ করা হচ্ছে। তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননের মহাউৎসব চলছে যতত্রত-বাঘা-চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানিয়েছেন প্রশাসনকে অবহিত করা হলে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সবকিছু ম্যানেজ করেই নাকি চলছে খনন কাজ। অনেকের কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাই যদি না হয়,তা নাহলে পুকুর খনন কাজ বন্ধ করতে গলদ কোথায়? তবে অভিযান চালিয়ে দু’একজনকে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের মৃত ভাদু মন্ডলের ছেলে অসিত মন্ডল হাবাসপুর বিলের মধ্যে কাঁচুর ডিপ টিউবয়েলের পাশে প্রায় ১৫ বিঘা ৩ ফসলী জমিতে পুকুর কাটার কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে মাটি কাটার মেশিন খনন যন্ত্র(ভ্যাকু) দিয়ে অর্ধেক জমিতে পুকুর কাটা হয়েছে। রাতে মাটি কেটে সেই খনন যন্ত্রটি(ভ্যাকু) অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

পুকুরের মাটিবাহি ট্রাক্টর চলাচলের কারণে একদিকে রাস্তা নষ্ট হয়েছে, অপরদিকে বায়ুদুষণ ঘটছে। কিন্তু সেদিকে নজর পড়েনি প্রশাসনের। এমনকি স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরাও নির্বিকার। শুধু বিনোদপুর গ্রামের অসিত মন্ডলই নয়,তার মতো অনেকেই সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছেন।

উপজেলার চাকিপাড়ার উত্তরে ৪বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন বানিয়া পাড়ার মন্টুসহ তাপস হোসেন ২ বিঘা জমিতে পুকুর খননের কাজ করছেন। এর পাশে ফিরোজ হোসেনের ২ বিঘা, রতন আলীর ৩ বিঘা, লিটন হোসেনের ৩ বিঘা, বাবুল হোসেনের ৪ বিঘা, মাসুদ আলীর ৪ বিঘা, বাদশা হোসেনের ১ বিঘা জমিতে পুকুর খননের কাজ চলছে।

নিশ্চিন্তপুর এলাকার বিলে আপেল মাহমুদ ও আব্দুল মতিন ৩ বিঘা জমিতে পুকুর খননের কাজ শুরু করেছেন। করোনা ভাইরাস জনিত কারণে লকডাইনের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে পুকুর কাটার মহাউৎসব দেখা গেছে আমোদপুর গ্রামের দেলজান আলীর পাড়ির পাশেও।

স্থানীয় অনেককেই বলতে শোনা গেছে,যোগাযোগ রক্ষা ছাড়া কিভাবে দিনের পর দিন পুকুর খননের মাটি কাটার কাজ করা যায়। সম্ভবতঃ কারণেই প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের নজরদারি থাকলে কখনোই এভাবে কাজ করতে পারেনা। রাতের বেলায় পুকুর কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে অসিত মন্ডলসহ পুকুর খননকারিদের অনেকেই জানান, আমি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পুকুর কাটছি।

সরকারের নিষেধাজ্ঞা পরেও পুকুর খনন কাজ করছেন কেন, এমন প্রশ্ন করা হলে অসিত মন্ডল কোনো উত্তর দেয়নি। বাঘা-লালপুর থানার বিল পুরুদ্ধার,পুকুর ও খাল খনন বন্ধসহ জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির সাধারন সম্পাদক প্রভাষক হীরেন্দ্রনাথ জানান,পুকুর খননকারিদের কেউ আইন মানছেননা।

নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় যেভাবে ফসলি জমিতে পুকুর কাটছে,তাতে করে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। আইনী প্রক্রিয়ায় কাজ বন্ধ করে তিন ফসলি জমি ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট রক্ষা করার দাবি জানান তিনি। বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা জানান, পুকুর খননের খবর পেয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) পাঠিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেই সময় ঘটনাস্থলে কোন শ্রমিক কিংবা মালিককে পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

 

 

আরপি / এমবি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top