রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

বাজারে অতিরিক্ত মূল্য

রাজশাহীতে কৃষকের সার নিয়ে গুদাম কর্মকর্তার বাণিজ্য


প্রকাশিত:
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০২

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:৫৯

রাজশাহীতে কৃষকের সার নিয়ে ব্যাপক বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জিম্মি ডিলাররা সার বিত্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন গুদামেই। সেই সার চলে যাচ্ছে অন্য জেলায়। এরপর সেগুলো বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। বিশেষ করে কাফকো ইউরিয়া সার নিয়ে চলছে এ বাণিজ্য বেশি হারে। রাজশাহীর বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম আক্তার ও বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলা সাধারণ সম্পাদক ও বিসিআইসি’র সার ডিলার রবিউল ইসলাম এ বাণিজ্যে জড়িত বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর ফলে প্রতি মাসে সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া কৃষকের ইউরিয়া সার বাণিজ্য করে তাঁরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর এ বাণিজ্যের কারণে কৃষকপর্যায়ে এক বস্তা ইউরিয়া সার বিক্রি হচ্ছে ৮২০-৮৫০ টাকা দামে। যেটি সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করার কথা বলা হয়েছে। গুদাম কর্মকর্তার বাণিজ্যের কারণে ডিলাররা ইউরিয়া সার ঠিকমতো উত্তোলন না করায় বাজারে তৈরী হচ্ছে কৃতিম সঙ্কট। এই অবস্থায় রাজশাহীর বাজারে বিসিআইসির নরমাল ইউরিয়ায়ও ৮১০-৮২০ টাকা বস্তা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।

এদিকে গোডাউন কর্মকর্তা ও ডিলার নেতার এসব অনিয়ম নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান (বিসিআইসি), দুদক, রাজশাহী জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক বার লিখিত অভিযোগও করেছেন ডিলাররা। এ নিয়ে তদন্তের পরে রাজশাহীর বাফার গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম আক্তারকে সম্প্রতি ঢাকায় ৩৪ বাফার গুদাম প্রকল্পে বদলি করা হয়। কিন্তু অদ্যবধি ক্ষমতার জোরে টিকে রয়েছেন এ কর্মকর্তা। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সার ডিলারদের মাঝে।

সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবঞ্জ মিলে ১৭৫ জন ডিলারের আওতায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর থেকে ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই সার বরাদ্দ পাওয়ার পরে সরকারি কোষাগারে নির্ধারিত মূল্য জমা দেন ডিলাররা। এরপর সেই সার রাজশাহীর বাফার গুদাম থেকে সংগ্রহ করতে হয় ডিলারদের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাজশাহীর ডিলার নেতা রবিউল ইসলাম ও গুদাম কর্মকর্তা শামীম আক্তারের কাছে আমরা জিম্মি। আমরা সার নিতে গেলেই ১-২ টনের বেশি কাফকো সার দেওয়া হয় না। কিন্তু রবিউলের কাছে বরাদ্দপত্র বিক্রি করে দিলে তাকে ঠিকই অধিকাংশ পরিমাণ কাফকো সারই দেওয়া হয়। এ কারণে কোনো কোনো ডিলাররা নরমাল ইউরিয়া উত্তোলন না করে বরাদ্দ বিক্রি করে দিচ্ছেন রবিউলের কাছে। ফলে বাজারে সারের কৃতিম সঙ্কটও তৈরী হয় কখনো কখনো।’

রাজশাহীর বাফার গুদাম থেকে সরবরাহকৃত সারের চালানপত্রের মধ্যে একই দিনে একাধিক চালানে ডিলার রবিউল ইসলামের প্রতিনিধি (ম্যানেজার) রিপনের স্বাক্ষর দেখা গেছে। রবিউল ইসলামের নামেই ওইসব স্যার উত্তোলন করেছেন তার প্রতিনিধি রিপন। যেটি তিনি করতে পারেন না। আবার একই মাসে শত শত টন ইউরিয়াও উত্তোলন করেছেন এই রিপন। অভিযোগে সার কারসাজির সঙ্গে জড়িত হিসেবে রিপনের নামও উল্লেখ রয়েছে।

জানতে চাইলে রাজশাহীর বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম আক্তার বলেন, ‘এসব অভিযোগ ঠিক নয়। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নয়। কোনো ডিলারের প্রতিনিধি হিসেবে যে কেউ সার উত্তোলন করতে পারে। কিন্তু একজন ডিলারের একজনই প্রতিনিধি থাকেন।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘একই ব্যক্তি কিভাবে একই মাসে একাধিক ডিলালের সার উত্তোলন করেছেন-তা বলতে পারব না। তবে কোনো অনিয়ম হয়নি। অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রমাণ কেউ পাননি।’

আর পি /এম আই 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top