কুরবানির আগে দিশেহারা রাজশাহীর গো-খামারিরা
ডলারের মূল্যবৃদ্ধি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে দাম বেড়েছে সব রকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের। আর এই তালিকায় থেমে নেই ভোগ্য পণ্য বা পশু খাদ্যের ক্ষেত্রেও। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন এই ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর পশু পালনকারীরা। নিরুপায় হয়ে খামারের পরিসর কমিয়েছেন অনেকেই।
খামারিদের দাবি, গত ৪/৫ বছরে শুধু গোখাদ্যের দামই বেড়েছে তিন থেকে চার গুণ পর্যন্ত। সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় চিকিৎসা ও ঔষধ ব্যয়ও বেড়েছে অনেকাংশেই। আর তাই খামারে গরুর সংখ্যা কমাতে বাধ্য হয়েছেন বেশিরভাগ খামারি।
নগরীর অদূরে পবা উপজেলার হরিয়ানের রনহাটে ২০১৫ সালে ১০-১৫টি গরু নিয়ে শাহী অর্গানিক ফার্মের যাত্রা শুরু করেন তরুণ উদ্যোক্তা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। সেই গরু বিক্রির লাভের টাকায় বাড়াতে থাকেন খামারের পরিসর। গরুর সংখ্যাও গিয়ে ঠেকে একশোর কাছাকাছি। তবে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়েছে তার খামারে। গরুর সংখ্যা কমে নেমেছে অর্ধশতে।
জানতে চাইলে জাহিদ বলেন, আজকে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। আজ থেকে ৪/৫ বছর আগে যে গরুর দাম ছিল, সেই তুলনায় এখন গরুর দামও অনেক কম। কিন্তু ৪/৫ বছর আগে গোখাদ্যের যে দাম ছিল তার থেকে এখন দু-তিন গুণ বাড়তি। সে কারণে প্রত্যেক খামারি ভাই এখন ঠিক মতো গরু লালন-পালন করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আশানুরূপ দামে গরু বেচতে পারছেন না, খামার দিন দিন কমে আসছে। সরকারের কাছে অনুরোধ করবো যেন গোখাদ্যের দামটা নিয়ন্ত্রণে আনেন। তাহলে সব খামারি ভাইয়েরা বাড়িতে গরু লালনপালন করতে পারবেন।
তবে সব রকমের খরচ বাড়লেও আসন্ন কুরবানির ঈদে ভালো দামের আশায় খামারিরা। ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধ করা গেলে একদিকে যেমন দেশীয় গরুর চাহিদা থাকবে, তেমনই লাভবান হবেন খামারিরা। পাশাপাশি খামারিদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসা সহায়তা দিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়নের জাগিরপাড়া গ্রামের মতলেব মন্ডল বলেন, চার মাসে দুইটা মহিষে আমার এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। ভুসি, খেসারি, বুট, গমসহ সব রকমের জিনিসের দাম বাড়তি। কিন্তু সেই অনুযায়ী আমরা তো দাম পাচ্ছি না। অথচ ঠিকই ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি করে মহিষের মাংস বিক্রি করছে। লাভ যা করার কসাই আর দালালরা করছে। সাধারণ মানুষেরও লাভ হচ্ছে না, আর আমাদের খামারিদেরও লাখ হচ্ছে না। তবে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমাদের যদি কিছু চিকিৎসা সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হয় তাহলে আমরা একটু উপকৃত হতাম।
এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কুরবানিকে ঘিরে রাজশাহীতে এ বছর ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ৮৩ হাজার ৩৬৫টি গরু, ৩ হাজার ৭৬৯টি মহিষ ও ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি ছাগল। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে পশু।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্য যখন বাড়বে উৎপাদনে কিছুটা প্রভাব তো অবশ্যই পড়বে। তবে রাজশাহী জেলার যে তথ্য, গত বছরের যে কুরবানির পশুর চাহিদা ছিল তার থেকে উদ্বৃত্ত আছে, কোনো সমস্যা হবে না। উৎপাদন বা গোখাদ্যের দাম যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে মাংসের দামও বাড়বে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দিন বলেন, এক সময় পতিত জমি বা চরাঞ্চলের পরিত্যক্ত জমিতে ব্যাপক গোখাদ্য উৎপাদন হতো। কিন্তু দিনকে দিন এসবের পরিসর ছোট হয়ে আসছে। কিন্তু উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মানুষকে অধিক মূল্য দিয়ে পশু কিনতে হবে। অনেক শিক্ষিত যুব সমাজ গো খামারে এগিয়ে আসছিলেন, তারা এখন পিছিয়ে যাবে। তবে অবিলম্বে এসব থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে হবে, সেই খোঁজার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দপ্তরের।
আরপি/আআ
বিষয়: গো-খামারিরা রাজশাহী
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: