রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

তীব্র তাপদাহ রাজশাহীতে ঝরেছে ৩০ শতাংশ আমের গুটি


প্রকাশিত:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৫৮

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:২২

রাজশাহী পোস্ট

টানা খরা আর পোকার কবলে পড়ে দিশেহারা রাজশাহীর আম চাষিরা। কয়েক দিনের তীব্র তাপদাহে শুকিয়ে গেছে বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠ-ঘাট ও পুকুর-জলাশয়। আর তাই বোঁটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি ও লিচু। বৃষ্টির অভাবে সৃষ্ট পোকা দমনে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না একটুও। দু ফোঁটা বৃষ্টির জন্য আকাশ পানে তাকিয়ে আছেন আম সংশ্লিষ্টরা।

আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের দাবি, চলতি বছর জেলার আম গাছগুলোতে মুকুলের পরিমাণ ছিল অনেক কম। এছাড়া একদিকে যেমন বৃষ্টির দেখা নেই দীর্ঘদিন, আবার তীব্র তাপদাহও রয়েছে অব্যাহতভাবে। বাতাসের আর্দ্রতা কমায় শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে ফসলের মাঠ। আম-ধানসহ অন্য ফসলের ক্ষেতেও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ বাগানেই ঝরেছে প্রায় ৩০ ভাগ আমের গুটি। পানির সেচসহ নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেও ঠেকানো যাচ্ছে না পোকার উৎপাত।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এটি গত বছরের চেয়ে ২৪ হেক্টর বেশি। চলতি বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ টন ধরা হয়েছে। কিন্তু আশঙ্কাজনক হারে আমের গুটি ঝরে পড়ায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা চাষিদের।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, সাধারণত দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকলে তাকে মৃদু তাপদাহ বলা হয়। আর ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতর থাকলে তাকে মাঝারি তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে ধরা হয় তীব্র তাপদাহ হিসেবে। এই হিসেবে রাজশাহীতে প্রায় ১০ দিন ধরে অব্যাহত আছে তীব্র তাপপ্রবাহ। বৃহস্পতিবার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত ২০ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রেকর্ড গড়ে রাজশাহীর তাপমাত্রা।


রাজশাহীর আমের বড় একটি অংশ উৎপাদন হয় জেলার বাঘা ও চারঘাট উপজেলায়। বাঘা উপজেলার বানিয়া পাড়ার আম চাষি আব্দুল খালেক বলেন, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এ বছর পোকামাকড়ের আবির্ভাব বেশি। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে যতটা ক্ষতি হচ্ছে তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হচ্ছে পোকামাকড়ের কারণে। যদি বৃষ্টি হতো তবে পোকামাকড় আম বা অন্য ফসলে এতো আক্রমণ করতে পারতো না, এতো ক্ষতিও হতো না। পোকামাকড়ের আক্রমণের কারণে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে।

একই উপজেলার চন্ডিপুরের আম চাষি আব্দুল হামেদ বলেন, এখানে প্রচুর পরিমাণে আম উৎপাদন হয়। বাঘায় বেশির ভাগ গাছই ফাঁকা, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হতাশ। যেটুকু হয়েছিল মাস কয়েক আগে শিলাবৃষ্টি আর বজ্রবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। আমের যাতে সুফল বয়ে আসে, আমের দাম ও বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি করে দেশের মানুষের উন্নতি হয়। আমের ভালো ফলন পায় সেদিকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণও করেন তিনি।


রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন যে পরিমাণ গুটি আছে সেগুলো টিকলেও হয়। কিন্তু এই তাপদাহ কয়দিন যাবে সেটাই বলা যাবে না। দু-চার দিন পরে যে বৃষ্টি হবে এমন লক্ষণ নেই। এই তাপদাহ শুধু আম না লিচুতেও সমস্যা তৈরি করছে। সবজি আর ফল যাই হোক, সেটা উৎপাদনের জন্য দরকার পানি। পানির যদি ঘাটতি হয় তবে সবগুলোই ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোছা. উম্মে সালমা বলেন, আমাদের যেটা পর্যবেক্ষণ, তাপমাত্রাটা গত বারের মতোই বেশি। আমের তো গুটি বিভিন্ন কারণেই ঝরে, একটা গোটায় যদি দু-চারটার বেশি আম থাকে তবে সেই আমটা ছোট হবে, মানও ভালো হবে না। একটা গোটায় ৩০টাও আম থাকতে পারে, তো সেই আমটা তো ঝরবেই। তেমন কোনো ঝড়-বৃষ্টি নেই, ঝড়-বৃষ্টি হলে প্রচুর আম ঝরে যায়। ছোট গাছগুলোতে পর্যাপ্ত আম ধরেছে, বড় গাছে একটু কম। তবে গুটি যেটা ঝরছে এটা স্বাভাবিক। যারা পরিচর্যা করতে পারছে না তাদের হয়তো একটু বেশি ঝরছে।

 

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top