রাজশাহী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১

দিনমজুর রাব্বির জিপিএ-৫ চমক, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা


প্রকাশিত:
৩১ জুলাই ২০২৩ ০৬:৫০

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ০৫:১৬

ফাইল ছবি

কখনও বাবার ওয়ান টাইম থালা-গ্লাসের দোকানে, আবার কখনও অন্যের দোকানে পার্ট টাইম কাজেই মগ্ন কিশোর। এর মাঝে যেটুকু সুযোগ, তাতেই বই হাতে চোখ বুলিয়েছেন। আবার বাবার ছোট্ট চাকরির কাজটাও সামাল দিতে হয়েছে কখনও কখনও। এভাবেই কাজের মাঝে পড়াশোনা করে এবার এসএসসির প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছে দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাব্বি মন্ডল। 

রাব্বি বাঘা পৌরসভার মর্শিদপুর গ্রামের আব্দুল খালেক ও রুবিনা দম্পতির একমাত্র ছেলে। মৃদু শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুল খালেক বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনে ইডিএমসি (রানার) পদে মাস্টার রোলে চাকরি করেন। সামান্য উপার্জনে ৫ সদস্যের সংসারে টানাপোড়ন চলায় অন্যত্র কাজেও যেতে হয় তাকে। আর তখনই চাকরি ও ছোট্ট ব্যবসার দেখাশুনা করতে হয় ছেলে রাব্বিকে।

চলতি বছর বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইসলামী একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয় কারিগরি কৃষি কলেজ থেকে জেনারেল ইলেকট্রনিক ওয়ার্ক বিভাগে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। এর আগে পিইসি, জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে নিজের আলোয় আলোকিত হয় রাব্বি। তার একমাত্র বোন তানজিম খাতুনও (মৃদু প্রতিবন্ধী) বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করে।

জানতে চাইলে বাবা আব্দুল খালেক বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ যোগান দিতে পারিনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে বেতনের টাকায় আর ছোট্ট ব্যবসায় সংসারই চলে না। তাই কখনও কখনও কামলা দিতে যেতে হয়। তখন ছেলেটাকে কখনও নিজের দোকানে কখনও অন্যের দোকানে পার্ট টাইম কাজ করতে হয়। আবার আমার অনুপস্থিতে চাকরিটাও সামাল দিতে হয় ছেলেকে। এভাবেই নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে পড়ালেখার খরচ যুগিয়েছে রাব্বি। তার স্ত্রী রুবিনা বেগম বাড়িতে হাতের কাজ আর মুরগি পালন করে কোন রকমে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছে। তাতেও সামাল দিতে না পেরে মেয়েকে ভালো কলেজে ভর্তির জন্য গত মাসে ২১ দিন বাইরে কামলা দিতে হয়েছে।

মা রুবিনা বেগম জানান, অভাব অনটনের সংসারে লেখাপড়ার খরচ তো দূরের কথা ভালো খাবার কিংবা পোষাকও দিতে পারেননি। সে নিজের প্রচেষ্টায় সাফল্য বয়ে এনেছে। মেয়েটাকে বিয়ে দিতে চেয়েও মেয়েকে রাজি করাতে পারি নি। মেয়ে বলছে লেখাপড়া করবো। এখন কিভাবে তাদের শহরের কলেজে পড়াবো? তা নিয়ে দুঃচিন্তা চেপে ধরেছে। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল ছেলে-মেয়ে। মেয়ে তানজিম খাতুন এ বছর এইচএসসি পাশ করে ঈশ্বরদী কলেজে অর্নাসে ভর্তি হয়েছে।

রাব্বি মন্ডল বলেন, আমি অন্ধকার থেকে আলোতে এসেছি নানা রকমের বাঁধা পেরিয়ে। জীবনের লক্ষ্য নিয়ে ভালো কোনো কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নিব। সুযোগ পেলে দেশ ও মানুষের কল্যাণে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করতে চাই। যদিও পরিবারের আর্থিক অনটন সেই স্বপ্নের অভিযাত্রায় বাঁধ সাধবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। তারপরও স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে চান এ কিশোর।

ইসলামী একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কৃষি কলেজের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ জানান, রাব্বি মন্ডল আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তার বোনও প্রতিবন্ধকতা জয় করে সমাজকে দেখিয়ে দিয়েছে ভাল রেজাল্ট। আমি আশা করি, সেও ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে।

 

 

আরপি/এসআর-০৩



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top