রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

রাসিক নির্বাচন

রাজশাহী সিটিতে বেড়েছে ব্যবসায়ী ও কোটিপতি প্রার্থী


প্রকাশিত:
১৮ জুন ২০২৩ ০১:৪০

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ১৩:৫৫

ছবি: সংবাদ সম্মেলন

গত ২০১৮ সালের তুলনায় এবারের রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বেড়েছে শিক্ষিত ও ব্যবসায়ী প্রার্থীর সংখ্যা। গত নির্বাচনে কোনো কোটিপতি প্রার্থী না থাকলেও এবার তিনজন কোটিপতি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে রাজশাহী নগরীর একটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার।

আসন্ন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে সুজনের রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

দিলীপ সরকার বলেন, ২০১৮ সালের রাসিক নির্বাচনের তুলনায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর (এসএসসি ও তার নিচে) হার কমেছে। ২০১৮ সালে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার ছিল ৫৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা এবার নেমে এসেছে ৫২ দশমিক ৩৭ শতাংশে। অপরদিকে উচ্চ শিক্ষিত (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী) প্রার্থীর হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের ২৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে। স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার হ্রাস পাওয়া এবং উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থীর হার বৃদ্ধি পাওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।

প্রার্থীদের পেশাগত বিশ্লেষণে দিলীপ সরকার বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীর হার ছিল ৪৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ; এবারের নির্বাচনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ দশমিক ৬৪ শতাংশে।

বিশ্লেষণে অন্যান্য নির্বাচনের মত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ করা যাচ্ছে। এই প্রবণতা নির্বাচনে অর্থের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষণ বলে অনেকে মনে করেন। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়ীদের আধিক্য এবং অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিত্ব হ্রাস পাওয়া ইতিবাচক নয়। একইসাথে তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যও মঙ্গলজনক নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রার্থীদের আয়ের প্রসঙ্গ টেনে সুজনের সমন্বয়কারী বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে স্বল্প আয়ের প্রার্থীর হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৮২ দশমিক ০২ শতাংশ, এই নির্বাচনে তা হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৭৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে কোটি টাকার অধিক উপার্জনকারী কোনো প্রার্থী না থাকলেও এবারের নির্বাচনে ৩ জন (১.৮৫%) কোটিপতি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্বল্প আয়ের প্রার্থীদের অংশগ্রহণ হ্রাস পাচ্ছে এবং পাশাপাশি অধিক আয়ের প্রার্থীদের অংশগ্রহণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থ্যাৎ ধীরে ধীরে টাকাওয়ালাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে ফৌজদারি মামলা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান মামলার হার হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বর্তমান মামলা ছিল ৩১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, এবারের নির্বাচনে তা কমে নেমেছে ২৭ দশমিক ১৬ শতাংশে। তবে এবারের নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে অতীত মামলা সংশ্লিষ্টতা হার বিগত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের চেয়ে অধিক। ২০১৮ সালে অতীত মামলার হার ছিল ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ; কিন্তু এবারে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ১৬ শতাংশে।

দিলীপ সরকার বলেন, যেহেতু বিএনপিসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আসছে না, তাই এই নির্বাচন তেমন প্রতিযোগিতা সম্পূর্ণ হবে না। সব দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের যে প্রত্যাশা আমাদের ছিল, তা পূরণ না হলেও যে সকল প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন, সকলেই যেন নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছে সম-সুযোগ ও সম-আচরণ পান। অর্থাৎ এই নির্বাচনে যেন একটি লেভেল প্লেইং ফিল্ড দৃশ্যমান হয়।

একই সাথে নির্বাচন কমিশন, সরকার, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন স্ব স্ব অবস্থান থেকে স্ব স্ব ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করে এই নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করবেন এটাই প্রত্যাশা করেন সুজনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়কারী।

সুজনের রাজশাহী জেলা সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মহানগর সুজনের সভাপতি পিয়ার বখশ্, জেলা সুজনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম, সুজনের সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, আগামী ২১ জুন ইভিএম পদ্ধতিতে রাসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। নগরীর মোট ১৫২টি ভোটকেন্দ্রের এক হাজার ১৭৩টি কক্ষে একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ জন। আর নারী ভোটার এক লাখ ৮০ হাজার ৯৭২ জন। এবার নতুন ভোটার রয়েছেন ৩০ হাজার ১৫৭ জন।

 

 

আরপি/এসআর-০৩



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top