এক যুগ পর চালু হচ্ছে ‘রাজ তিলক’
শিক্ষা নগরী খ্যাত রাজশাহীতে আশির দশক থেকেই ছিল সাতটি সিনেমা হল। দর্শকের চাহিদা পূরণে রাজশাহীতে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এসব সিনেমা হল। তারই অংশ হিসেবে সিনেমাপ্রেমীদের বাড়তি ভিড় থাকতো হলগুলোতে। নগরীর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের পরিচয় এখনও রয়েছে সেসব হলের নামেই।
চলচ্চিত্রের বেহাল দশার কারণে ২০১০ সাল থেকে একে একে বন্ধ হতে থাকে সিনেমা হলগুলো। সবশেষ ২০১৮ সালের অক্টোবরে বন্ধ হয়ে যায় রাজশাহীর ‘উপহার’ সিনেমা হল। সেই থেকে কার্যত সিনেমা হলশূন্য ছিল রাজশাহী। পরিবার-পরিজন কিংবা প্রিয় মানুষের পাশে বসে সিনেমা দেখা থেকে বঞ্চিত হতে থাকেন রাজশাহীবাসী।
দীর্ঘ চার বছরেরও অধিক সময় পর ভিন্ন আঙ্গিকে অপেক্ষার সিনেমা হলের অপেক্ষার অবসান ঘটে নগরবাসীর। গত ১৩ জানুয়ারি রাজশাহী নগরীর আই বাঁধ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে নির্মিত অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্সের যাত্রা শুরু হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এর উদ্বোধন করেন। বরাবরের মতো নান্দনিক পরিবেশ, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত সাউন্ড সিস্টেম, জায়ান্ট স্ক্রিনসহ বিশ্বমানের সিনেমা হলের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সিনেপ্লেক্স যাত্রা শুরু করলেও শূন্যতা থেকেই গিয়েছিল সাংস্কৃতিকমনাদের হৃদয়ে।
তবে এবার সেই শূন্যতাও ঘুচতে চলেছে রাজশাহীবাসীর। দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময় বন্ধ থাকার পর চালু হচ্ছে ‘রাজ তিলক’ সিনেমা হল। নগরীর অদূরে পবা উপজেলার কাটাখালি পৌরসভায় সিনেমা হলটির অবস্থান। শুক্রবার (১৭ মার্চ) বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর কথা রয়েছে। উদ্বোধনী দিনে বিকেল সাড়ে তিনটায় ‘হাওয়া’ সিনেমা সম্প্রচারের মাধ্যমে রাজ তিলকের পর্দা উঠবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
তথ্যমতে, ২০১২ সালে ‘কমন জেন্ডার’ সিনেমা চলাকালে হলটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন রুম্মান নামের এক ব্যক্তি হলটি কিনে নেন। কিন্তু চেষ্টা করেও তিনি হলটি চালু করতে পারেন নি। পরে দীর্ঘ দিন বেহাল অবস্থায় পড়ে ছিল সিনেমা হলটি। এবার তার কাছ থেকে হলটি নিয়ে চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন চলচ্চিত্রের প্রডাকশন ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন সাগর। দর্শকের নজরে আনতে নতুন করে রঙ ও বসার চেয়ার স্থাপনও করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে প্রডাকশন ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন সাগর বলেন, ইতোমধ্যে হলে সিনেমা চালাতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। উদ্বোধন উপলক্ষে সাজ-সজ্জার কাজও শেষ হয়েছে। শুক্রবার (১৭ মার্চ) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়েই চালু হবে রাজ তিলক।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন চারটি শো নির্ধারণ করা হয়েছে। সপ্তাহের শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুপুর ১২টা, বিকেল ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৯টায় শো চলবে। আর প্রতি শুক্রবারে সকাল সাড়ে ১০টা, বিকেল ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৯টায় শো চলবে। তবে উদ্বোধনী দিনে সকালের শো চলবে না, বিকেল থেকে চালু হবে। তিন শ্রেণির আসনে ৭০ টাকা, ১০০ টাকা ও ১৫০ টাকা টিকিট ফি নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে দীর্ঘদিন সিনেমা হল না থাকার কষ্ট ঘোচায় উচ্ছ্বসিত রাজশাহীবাসী। সিনেপ্লেক্সটি সিনেমা হলের শূন্যতা পূরণে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী সাংস্কৃতিক ও বিনোদনপ্রেমীরা। তবে দর্শকের চাহিদা পূরণের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের চিন্তায় রাখা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।
জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওলিউর রহমান বাবু বলেন, সিনেমা হল একটা জাতির সংস্কৃতিকে বহন করে। কোনো জাতির পরবর্তী প্রজন্মকে দেশ ও জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে সিনেমা হল অপরিহার্য ভূমিকা রাখতে পারে। রাজশাহীতে আশির দশক থেকেই জনপ্রিয় সিনেমা হলগুলো সচল থাকলেও গত এক যুগে সবগুলো বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন সিনেমা হল শূন্য থাকতে হয়েছে আমাদের। আশা করি এই রাজ তিলক সেই চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে।
আরপি/এসআর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: