রাজশাহী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

আজ রাজশাহী হানাদার মুক্ত দিবস


প্রকাশিত:
১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:২২

আপডেট:
১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:৫১

ফাইল ছবি

আজ ১৮ ডিসেম্বর—রাজশাহী হানাদার মুক্ত দিবস। দু’দিন আগে দেশ স্বাধীন হলেও রাজশাহীতে বিজয়ের পতাকা উড়েছিল আজকের এই দিনে। সেই থেকে রাজশাহীবাসীর স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় হয়ে যায় দিনটি।

অবরুদ্ধ মানুষ এদিন নেমে এসেছিল রাজশাহীর মুক্ত বাতাসে। হারানো স্বজনদের খুঁজতে তারা ছুটে গিয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা হলে। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল নির্যাতিত অনেকের মরদেহ।

জানা যায়, সেই দিন মুক্তিকামী জনতার ঢল নামে রাজশাহীর প্রতিটি সড়কে। বিদেশি প্রতিনিধিদের পরিস্থিতি জানাতে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত পার হয়ে আসে। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী অঞ্চলকে নেওয়া হয় ৭ নম্বর সেক্টরে। ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা সাব সেক্টর ৪-এর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী বীর বিক্রম ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠের মঞ্চে উঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর আনুষ্ঠনিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে রাজশাহীকে শত্রুমুক্ত করার ঘোষণা দেন।

১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর শক্রমুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ হওয়ার পর হানাদার বাহিনী এসে জড়ো হতে থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা জোহা হলে। মুক্তিবাহিনী ১৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় রাজশাহীতে প্রবেশ করে। রাস্তায় নেমে আসে হাজারও উল্লসিত মানুষ। তখন পাকিস্তানি বাহিনী শহর ছেড়ে শহীদ শামসুজ্জোহা হলে গিয়ে সমবেত হয়।

ওইদিন রাতে শক্র বাহিনী জোহা হল ছেড়ে গোপনে নাটোরে গিয়ে সেখানেই যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরেরদিন ১৮ ডিসেম্বর বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হাজার হাজার জনতা রাজশাহীর মাদরাসা মাঠে সমবেত হন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ও গবেষক ওয়ালিউর রহমান বাবু বলেন, পাকিস্তানি সৈন্যরা দোসরদের মদদে বিভিন্ন কায়দায় লোকজনকে হত্যা করে পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে ঢুকে পড়তে থাকে। ২৫ নভেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর বাবলাবন চরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবন্ত অবস্থায় বালির মধ্যে পুঁতে হত্যা করে। সবকিছু সহ্য করে স্বাধীনতার দিন গুণতে থাকে মানুষ।

মিত্র বাহিনীর বিমানকে স্বাগত জানাতে সবাই তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। সে সময় পাক সেনারা বিমান বোমা ফেলতে থাকলো রাজশাহীতে। লালগোলা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও শেখপাড়া সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর রশিদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনাদের সাথে লড়াই করে মুক্ত করে ফেলে রাজশাহীর গ্রামাঞ্চল।

তিনি আরও জানান, মাহদিপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর রাজশাহী অ্যাডভান্সের পরিকল্পনা নেন। তিনি ১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহাই চরে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী রাজশাহীর দিকে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়। ১৬ ডিসেম্বর পরাজয় বরণের পর যৌথ বাহিনীর এই অগ্রগামী দল পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছ থেকে সাদা পাগড়ী ও আত্ম সমর্পণের চিঠি নিয়ে রাজশাহী শহরে বীর দর্পে প্রবেশ করে।

মহানগরীর সোনাদিঘীর মোড়ে সাংবাদিক মঞ্জুরুল হকের বাড়িতে তাদের চা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। নির্যাতিত মানুষেরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হল, জেলখানা ও বিভিন্ন বন্দিশালা থেকে একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে। স্বজন হারানোর কষ্ট আর স্বাধীনতার উল্লাসে গোলাপ পানি ফুলের পাপড়ী দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা-মিত্র বাহিনীকে বরণ করে নেয় রাজশাহীর মানুষ।

১৮ ডিসেম্বরের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ১৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়ে যায় রাজশাহী। জেলার ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে স্বাধীন বাংলার পতাকা তুলেন লাল গোলা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। এই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানি সৈন্য ও দোসরদের দ্বারা নির্যাতিত অনেকের কথা শুনে শিহরিত হয়ে উঠতে থাকলেন উপস্থিতরা। ৭ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর ৪ এর তৎকালীন কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে এই অঞ্চল পরিচালনার প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হলো। তৎকালীন পৌরসভা ভবনকে কন্ট্রোল রুম করে পরিচালিত হতে থাকলো প্রশাসন। শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে আহ্বান জানানো হলো।

এদিকে পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহী ছেড়ে চলে যায় নাটোরে। তাদের দোসররা এখানে সেখানে লুকিয়ে যায়। খাদ্য সংকট এড়াতে বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর জন্য খাবার সরবরাহ করা হয়। রাজশাহীর মানুষ আজকের দিন থেকে নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। রাজশাহী শত্রু মুক্ত হয় আজকের এই দিনেই।

 

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top