রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

মায়ানমার একটার পর একটা উস্কানী দিয়ে যাচ্ছে: রাসিক মেয়র


প্রকাশিত:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:১২

আপডেট:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৩১

সংগৃহিত

মায়ানমার একটার পর একটা আমাদের উস্কানী দিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, ‘মায়ানমারের গোলা এসে পড়ছে বাংলাদেশের মাটিতে। একজন মারাই গেলেন, আরেকজনের পা উড়ে গেল।’

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।

বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম রাবির শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে ‘শেখ হাসিনার বৈশ্বিক ভাবমূর্তি ‘প্রসঙ্গ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে।

খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি তাই বলে। আমরা সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শক্রতা নয়। এটি বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়ে গিয়েছিলেন। তাই আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘এতো উস্কানীর মধ্যেও বাংলাদেশ কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখেছে। বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না।’ মায়ানমার কী আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চায়? তারা কি এমন অবস্থা তৈরি করতে চায়? যাতে আমরা যুদ্ধ করতে বাধ্য হই। না এরমধ্যে আরও কোন পরাশক্তির ইন্ধন রয়েছে। নিশ্চয় এটি ভেবে দেখবার বিষয় আছে।’

মায়ানমার প্রসঙ্গে রাসিক মেয়র আরও বলেন, ‘মায়ানমারের ভেতরে যে ঘটনাগুলো ঘটছে। এটি তাদের বিষয় হলেও আমাদের কথা বলতে হচ্ছে, এই কারণে যে সেটি আমাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্থ করছে। মায়ানমার থেকে ১২ লাখ মানুষ বাংলাদেশে এসেছে, সেটি সংখ্যায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে। তারা বিয়ে করছে, তাদের সন্তান হচ্ছে। তাদেরকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাসানচরে চমৎকার পরিবেশে প্রায় ১ লাখ মানুষের থাকবার মতো করে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে উন্নত বিশ্বের তাদের যে বক্তব্য, যে কর্মকাণ্ড আমরা খুব একটা কার্যকরী হতে দেখছি না। জাতিসংঘ কিছু তৎপরতা চালিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের যেখানে গেছেন, সেখানেই এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন এবং সবাই বলেছেন, আমরা আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা চেষ্টা করবো, আমরা বলছি, আমরা চাপ সৃষ্টি করছি। কিন্তু এই পর্যন্ত কাউকে আমরা সেই রকম জায়গায় যেতে দেখিনি।’

খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে কেন আরও সোচ্চার হচ্ছেন না? শুধু লোক দেখানো একদিন বাংলাদেশ এলেন। বাংলাদেশে এসে কক্সবাজারে গেলেন। সরকার আপনাদের সমস্ত ব্যবস্থা করলো থাকবার, খাবার, নিরাপত্তা, ঘুরবার। আপনারা সাক্ষাৎকার নিলেন, সেখান থেকে ঢাকায় ঘুরে এসে বললেন যে, আমরা দেখে এলাম, আমরা এটি যথাযথ জায়গায় তুলব এবং আমরা আরও চাপ প্রয়োগ করব। এটা কোন চাপ? যে চাপে কোন কাজ হচ্ছে না।

আমরা সবাই বলি গোটা পৃথিবী একটা গ্লোবাল ভিলেজ। ওইখানে একটা কিছু হলে এখানে অনুভব করা যায়। কাজেই একটা যদি সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকে যে, না এইটা চলতে দেয়া যায় না। তাহলে মায়ানমারের পক্ষে এটা স্ট্যান্ড করা খুব একটা বেশি সম্ভব নয়। এখানেই ফাঁক আছে। কেউ কেউ আমাদের সামনে হয়তো বলছেন, কিন্তু মন থেকে বলছেন না, সেটা করছেন না। তাই কার্যকর কিছু হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আমাদের যারা পরীক্ষিত বন্ধু, যারা এখন পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। সে সমস্ত পরীক্ষিত বন্ধুদের মধ্যে যারা বৃহৎ রাষ্ট্র বা ক্ষমতাধর রাষ্ট্র, ইনক্লুডিং আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত সহ তাদেরকে নিয়ে এই বিষয়টি সুরহা করার জন্য একটা কিছু করা দরকার বলেও জানান তিনি।

রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ আজম, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম, রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম।

সংগঠনের সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের নিজস্ব সমস্যা না। এটা বৈশ্বিকসমস্যা, এটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সমস্যা। এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ফলে আরও অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এই সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আহ্বান করছি।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক ও কলাম লেখক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) হাসান মোঃ শামসুদ্দীন।

তিনি বলেন, গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা সংকট পাঁচ বছর পূর্ণ হয়ে ছয় বছরে পড়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন স্টেট থেকে নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা নিরাশ্রয় রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ এখন এক নিরাপদ আবাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপন্ন রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়ে তাঁর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। সেই সাথে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে সোচ্চার কণ্ঠে নিজের মতামত ব্যক্ত করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন এবং রেখে যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের অর্থনীতিতে আঞ্চলিক অনেক দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। তাঁদের বিনিয়োগ এবং চলমান বাণিজ্য সহযোগিতা মিয়ানমারকে পশ্চিমা বিশ্বের অবরোধ ও চাপ থেকে রক্ষা করছে এবং এর ফলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান প্রলম্বিত হচ্ছে। এই দেশগুলোর মাধ্যমে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি ও প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্যচাপ প্রয়োগ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান ও থাইল্যান্ডে অবস্থানকারী অভিবাসী রোহিঙ্গাদের এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও এ বিষয়ে সক্রিয় হতে হবে। আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে চীন, জাপান, কোরিয়া, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারত, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক ও মানবিক সাহায্য প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। আসিয়ান দেশগুলোর সাথে ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে মিয়ানমারকে সুসম্পর্ক রাখতেই হবে, তাই এই দেশগুলো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং চলমান মানবিক সংকট মোকাবেলায় আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে।

এদিকে, বিকেলে আইবিএস সেমিনার রুমে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের আয়োজনে কলাম লেখার রীতি-নীতি, কৌশল, লিখন ও অনুশীলন শীর্ষক ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়।

আরপি/ এসএইচ 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top