রাজশাহী সোমবার, ২১শে এপ্রিল ২০২৫, ৮ই বৈশাখ ১৪৩২

শ্রাবণের বর্ষণে কাটলো শঙ্কা, খুশি চাষীরা


প্রকাশিত:
৪ আগস্ট ২০২২ ২৩:২৫

আপডেট:
২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:৫৫

ছবি: সংগৃহিত

রাজশাহীতে ঋতুচক্রে বর্ষার আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণের মাঝামাঝিতে এসে বহুল প্রত্যাশিত বৃষ্টির দেখা মিলেছে। শ্রাবণের বর্ষণে প্রাণ-প্রকৃতিতে ফিরেছে সজীবতা। মৌসুমভিত্তিক আবাদের ছন্দপতনের আবসানও ঘটালো এই বর্ষণে। কৃষকের প্রাণে ফিরলো স্বস্তি। মুখে ফিরেছে হাসি। আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণের মধ্যভাগে এসে বহুল আকাঙ্খিত বৃষ্টির দেখা মিলেছে। শ্রাবণের বর্ষণে প্রাণ-প্রকৃতিতে ফিরেছে সজীবতা। শ্রাবণের এই বর্ষণে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছেন রাজশাহীর কৃষকরা।

রাজশাহী নগরীসহ পাশ্ববর্তী পবা উপজেলা ঘুরে এবং অন্যান্য উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষার আষাঢ়ে এবার তেমন কোন বৃষ্টি না হওয়ায় হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়। পানির অভাবে অনেকে জমি পতিত রাখতেও বাধ্য হয়েছে। তবে শ্রাবণের ভারি বর্ষণের প্রথম দিনেই চাষীদের মুখে হাসি ফিরেছে। কৃষকদের সকালে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে জমিতে কাজ করতেও দেখা গেছে।

চাষীরা বলছেন, সকল চাষী বৃষ্টির জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন। কেননা অনেকেই পানির কারণে ধানসহ অর্থকরি ফসল লাগাতে পারছিলেন না। এতো দিনে পাট কাটা শেষ হয়ে অন্য ফসল জমিতে থাকার কথা। কিন্তু এখনো অনেকে পাট কাটতেই পারেন নি। ধান আবাদে এমনিতেই বেশি পানি লাগে। অধিকাংশ চাষী যারা ধান লাগিয়েছেন- তারাও শঙ্কার মধ্যে ছিলেন। তবে বৃষ্টি হওয়ায় সেই শঙ্কা এবার কাটলো। কৃষকদের প্রত্যাশা শ্রাবণের বাকি সময়টাতেও বৃষ্টি হবে।

তারা বলছেন, বৃষ্টি এতোটা দেরিতে হওয়ায় অনেকেরই আবাদে বিলম্ব হয়েছে। অনেকে এখনো লাগান নি। তারা বৃষ্টি হওয়ার পর জমি প্রস্তুতের কাজ করছেন। এতে আবাদের ক্ষেত্রে মৌসুমি যে স্বাভাবিক সময় থাকে; সেখানে ছন্দপতন হয়েছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারীপুর এলাকার চাষী সাইমুর রহমান জানান, একদিকে পুরো আষাঢ়সহ শ্রাবণের অর্ধেক মাসজুড়ে বৃষ্টির দেখা না পাওয়া; অন্যদিকে তার জমির পাশের গভীর নলকূপটি দীর্ঘ সময় ধরে নষ্ট থাকার কারণে জমি পতিত রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। আকাশের বৃষ্টির অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ও ছিলো না। এখন বৃষ্টি হয়েছে জমি প্রস্তুতে কয়েকদিন সময় লাগবে। বৃষ্টির পানির ভরসাতেই তিনি আমন আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

গোদাগাড়ি এলাকার চাষী আনসার আলী জানান, বৃষ্টির অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আউশ লাগাতে পারেন নি। পরে গভীর নলকূপের ভরসায় দেরি করে আমন লাগিয়ে ছিলেন। লাগানোর একদিন পরপর সেচ দিতে হয়েছে। এপর্যন্ত শুধু সেচ দিতেই ২ হাজার টাকা উপরে খরচ হয়েছে এক বিঘা জমিতে। এখন বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা স্বস্থি ফিরেছে।

পবা উপজেলার কৃষক উজ্জ¦ল আলী জানান, তার এবার ১৮ কাঠা মতো জমিতে পাট ছিলো। ২০ দিন আগেই পাট কাটার উপযোগী হয়েছে। কিন্তু জাগ দেয়ার জায়গা ছিলো না। একারণে কাটতেও পারছিলেন না। তবে এখন পুকুরে পানি এসেছে। এখণ দ্রুত পাট কেটে জাগ দিবেন। আমন আবাদের প্রস্তুতিও নিবেন। এছাড়া তিনি দেড় বিঘা মতো কপির আবাদ করেছেন। সেখানেও বৃষ্টির প্রয়োজন ছিলো।

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার রহমান জানান, বৃষ্টির কারণে আবাদে কিছুটা পিছিয়েছি এটা ঠিক। প্রায় ১৫-২০ দিন মতো পিছিয়ে গেছি। রাজশাহীতে আমন ও আউশ মৌসুম কাছাকাছি। আউশের লক্ষ্যমাত্রা এবার ৬ হাজার ৬৯০ হেক্টর কম হয়েছে। তবে সেটা আমনের মধ্যে শিফট হয়ে যাবে। এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার হেক্টর।

তিনি আরও জানান, এদিন (সোমবার) সকাল থেকে তিনি কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখেছেন। কৃষকদের মাঝে স্বস্থির হাসি দেখতে পেয়েছেন। বিশেষ করে অনেক চাষী বৃষ্টির কারণে পাট কাটতে পারছিলেন না। সোমবার অনেককেই তিনি পাট কাটতে দেখেছেন। এই বৃষ্টি সকল আবাদের জন্য আর্শীবাদ হয়ে এসেছে।

উল্লেখ্য, রাজশাহীতে ৩১ জুলাই রাত ৮ টা থেকে ১ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

 

আরপি/ এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top