রাজশাহীতে অবিক্রিত ৫৮ হাজার কোরবানির পশু

রাজশাহীতে কোরবানির পশু ৭ লাখ ৩০ হাজার অবিক্রিত। কোরবানি হয়েছে ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ১২৮ টি পশু। শেষে অবিক্রিত রয়েছে ৭ লাখ ৩০ হাজার ৩৩২টি পশু।
জেলায় এবার কোরবানির উদ্দেশ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি পশু পালন করেন খামারি ও কৃষকরা। কোরবানি হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ২৪ হাজার পশু। ফলে এখনও অবিক্রিত থেকে গেছে ৫৮ হাজার ১১৮টি পশু। কিন্তু কোরবানি হওয়া পশুর মধ্যে সবেচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ছাগল-ভেড়া। যা সংখ্যায় ২ লাখ ৫২ হাজার।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের খামার শাখার উপপরিচালক জিনাত সুলতানা বলেন, রাজশাহী বিভাগে ৭ লাখ ৯ হাজার ২৪৩টি গরু-মহিষ ও ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৮৫ টি ছাগল-ভেড়াসহ মোট ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ১২৮ টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। অবিক্রিত রয়েছে ৭ লাখ ৩০ হাজার ৩৩২টি পশু।
রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি। এরমধ্যে ২০ হাজার ২৫২টি বলদ গরু। এছাড়া ১৬ হাজার ৬৭৩ মহিষ, ষাঁড় গরু ১৬ লক্ষ ৪ হাজার ৬১৯, ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ছাগল এবং ২২ লাখ ৬ ভেড়া ৫৪৯। এসব পশুর ২০ শতাংশ অনলাইনে আর বাঁকি ৮০ শতাংশ গরু প্রচলিত হাটে বিক্রি হবে জানিয়েছিল সরকারি এ দপ্তর। তবে, কতগুলো পশু কোরাবানি হয়েছে তার পরিসংখ্যান দিতে পারেনি দপ্তর।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ঈদ উপলক্ষে রাজশাহীর ৯টি উপজেলা ও একটি মেট্রো (বেয়ালিয়া) অঞ্চল মিলিয়ে মোট ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছিল। এরমধ্যে ৭৩ হাজার ৮৬৩টি ষাঁড় ও ২৪ হাজার ৪৬টি গাভী। অন্যান্য ছাগল ভেড়া ও বলদ। পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থেকেছে। মুসল্লিরাও কোরবানি করেছে স্বতফূর্তভাবে। মোট পশুর মধ্যে কোরবানি হয়েছে বলদ ও ষাঁড় গরু ৭২ হাজার এবং ২ লাখ ৫২ হাজার ছাগল-ভেড়া। শুধু ২ লাখের বেশি ছাগল কোরবানি হয়েছে।
করোনাকালে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজশাহীতে ৭৩ হাজার ১২৯টি পশু অবিক্রিত থেকে যায়। কোরবানি পরবর্তী সময়ে গরু ও মহিষ ৪০ হাজার ৮৪০টি এবং ছাগল ও ভেড়া ৩২ হাজার ২৮৯ অবিক্রিত পশু হিসেবে দেখানো হয়। সে বছর ২ লাখ ২৬ হাজার ১২৭টি ছাগল এবং ভেড়া কোরবানি হয় ১৯ হাজার ৬৬৩টি।
মহামারিকালেও কোরবানির উদ্দেশ্যে প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার ছাগল প্রস্তুত ছিল, যা বেশিরভাগই বিক্রি হয়। আর্থিক সংকটের পূর্বাভাসে সবচেয়ে বেশি অবিক্রিত রয়ে যায় মহিষ। বরাবরই রাজশাহীতে মহিষ কোরবানির সংখ্যাটা খুবই কম। ফলে লকডাউনে প্রস্ততকৃত ২ হাজার ৯৫৬টি মহিষের মধ্যে মাত্র ৩১৫টি মহিষ কোরবানি হয়েছে। বাইরে বিক্রির সুযোগ না থাকায় প্রায় সবগুলোই অবিক্রিত থাকে। আর ৩৫ হাজার ভেড়ার মধ্যে কোরবানি হয় প্রায় ২০ হাজার ৬৬৩টি। অবশিষ্টগুলো অবিক্রিত রয়ে যায়। কিন্তু করোনার কোন আভাস না থাকায় এবার সবগুলো পশু কোরবানির জন্য বিক্রি হয়ে যায়। চলে যায় চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এবার রাজশাহীতে বেশি দামে গরু বিক্রি করতে পেরে খুশি খামারিরা। গত তিন বছরের তুলনায় এবার লাভ ভালো হয়েছে। ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি ছিলো। তাই আগামীতে মাঝারি গরু পালনের প্রত্যাশা করছেন খামারিরা। খোঁজ নিয়ে খামারিদের সাথে কথা বলে তাই জানা গেছে।
রাজশাহী সদর, বাগমারা, তানোর, চারঘাট, পবা উপজেলার বেশ কিছু খামারির সঙ্গে কথা হলে জানা গেছে, কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম ভালো ছিলো। তাই বেশিরভাগ বিক্রেতায় কম বেশি লাভ করেছেন। উল্লেখযোগ্য পশু অবিক্রিত নেই বলেই দাবি খামারি ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: নজরুল ইসলাম বলেন, “ রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পশু নিয়ে যাওয়া হয়। কতগুলো পশু কোরবানি আর কতগুলো বিক্রি হয়ে বাইরে গেছে তা বলা অসম্ভব।”
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থেকেছে। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধ রাখার কারণে দাম ভালো পেয়েছেন। ভারত থেকে কোন পশু আমদানি করা হয়নি। কৃষক ও খামারিরা যাতে কোরবানির পশুর ন্যায্য দাম পান সে জন্য রাজশাহী- চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজর রেখেছে। সবমিলিয়ে রাজশাহীবাসীর জন্য কোরবানির পশু নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। বরাবরই রাজশাহীতে ছাগল বেশি কোরবানি হয়।
আরপি/এসএইচ
বিষয়: রাজশাহী কোরবানি রাজশাহী বিভাগীয়
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: