রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী সিটি হাট

ক্রেতা শুন্য মহিষের হাট


প্রকাশিত:
৬ জুলাই ২০২২ ০১:১০

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৩১

ঈদুল আজহার আর মাত্র ৬ দিন বাকী। সারাদেশে কোরবানির পশু কেনাবেচায় অনলাইন ও প্রচলিত পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট সিটি হাটেও গরু-মহিষের আমদানি হয়েছে বেশ। গত (৩ জুলাই) সিটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, গরু বেচাকেনা বেশ ভালো হলেও ক্রেতা শুন্য দেখা গেছে মহিষের হাট। সিলেট-চট্টগ্রাম থেকে ক্রেতা কম আসায় এমনটি হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

একলাইনে লট আকারে মহিষের দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন গোলাম সোস্তফা, ভোলাহাটের ফুটানিবাজার এলাকার হযরত বেলাল, আশরাফুল ইসলামসহ অন্তত ৮ জন। প্রত্যেকের কাছে একজোড়া মহিষ। মহিষগুলোর গড় ওজন ১২ থেকে ১৫ মণ। জানতে চাইলে তারা জানান, গতবারের তুলনায় এবার মহিষের ক্রেতা কম। যতটুকু ক্রেতা রয়েছে তার বিপরীতে আমদানি স্বাভাবিকের তুলনায় তিনগুণ। ফলে দাম কমেছে অস্বাভাবিকভাবে। ১২ মণ ওজনের একটা মহিষের দাম লাখ টাকা হাঁকছেন ক্রেতারা। বিপরীতে বিক্রেতারা দেড় লাখের কম দিতে রাজী নন।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি। এরমধ্যে ১৬ হাজার ৬৭৩ মহিষ রয়েছে। এছাড়া ষাঁড় গরু ১৬ লক্ষ ৪ হাজার ৬১৯, ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ছাগল এবং ২২ লাখ ৬ ভেড়া ৫৪৯। এসব পশুর ২০ শতাংশ অনলাইনে আর বাঁকি ৮০ শতাংশ গরু প্রচলিত হাটে বিক্রি হবে। আজ বিক্রি হয়েছে মহিষ আগের বছরের তুলনায় অনেক কম। গতবারের তুলনায় এবার অনলাইনে সাড়া পেলেও মানুষ সরাসরি হাটে গিয়ে পশু কেনা পছন্দ করেন।

চাঁপাইনবাগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে মহিষ বিক্রি করতে এসেছেন মো: ওসমান আলী। হাটে তার ১০টি মহিষ। বাজারের পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি জানান, গরুর বাজারে ক্রেতা থাকলেও মহিষের হাটে ক্রেতা নাই। দু’একজন আসছে মাঝে মাঝে তবে, দাম বলতেই চায়না। কেউ কেউ এমন দাম বলছে মনে হচ্ছে তারা মহিষ নিতে আসেনি। ১০ টা মহিষ নিয়ে এসেছি সকালে এখনো একটাও বিক্রি করতে পারিনি। কোনো ক্রেতা আসেনি। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে মহিষের দাম একটু বেশি চাওা হচ্ছে ঠিক কিন্তু ক্রেতা আসেনা। দাম বেশি চাওয়ার কারণ হলো সব কিছুরির দাম অনেক। আর মহিষে তুলনামূলক খায় বেশি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিলেটে সবচেয়ে বেশি মহিষ কুরবানি দেওয়া হয়। এবার সিলেট-সুনামগঞ্জ, ভৈরব, বরিশাল, হবিগঞ্জের ক্রেতারা আসেননি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বন্যার কারণে কোরবানির পশু কেনায় একটা বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। হাটে প্রায় ৬ হাজারের মতো মহিষ এসেছে –এমনই ধারণা করেন ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অবিক্রিত মহিষ কিংবা গরুর খুববেশি বিক্রি হবে না। ফলে অবিক্রিতই থেকে যাবে। অনেকে ৫ থেকে ১০ হাজার কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট সিটিহাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ঈদের আগে সাপ্তাহিক হাট হিসেবে মহিষের আমদানি চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এবারও মহিষের হাটে তেমন হাঁকডাক দেখছিনা। হাটে বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখনো সেইভাবে আসেনি। বন্যার কারণে সিলেট – চট্টগ্রাম থেকে ব্যাপারীরাও আসছেন না। স্থানীয় পর্যায়ের কিছু ক্রেতা দেখেশুনে গরু কিনছেন।

ঢাকার ক্রেতা আব্দুর রউফ বলেন, বাজারে মহিষের দাম গত বছরের তুলনায় একটু বেশি। মাঝারি সাইজের একটি মহিষের দাম বলছে দেড় লাখ টাকার উপরে চাচ্ছে, যা স্বাধ্যের বাইরে। এখনো কিনতে পারিনি। অন্য বছর আসার পর পর কেনা হয়ে যায়। আর এইবার ৪ থেকে ৫ ঘন্টা হয়ে গেলো একটাও কিনতে পারিনি। আমরা প্রত্যেকবার তুলনায় গবাদিপশুর খাদ্যর দাম বেশি হওয়াতে দাম বেশি হাকছে। আমি প্রতিবার মহিষ কোরবানি করি কারণ মহিষের মাংসে চর্বি কম থাকে। আর প্রেসারও বাড়েনা। সেই দিক থেকে সুস্বাদুও বটে। আমাদের এলাকায় বেশি মানুষ মহিষ কোরবানি দিয়ে থাকে।

মহিষ ব্যবসায়ী মস্তফা কামাল বলেন, এ বছর ব্যবসায়ীদের অনেক লোকসান গুনতে হবে। প্রতি মহিষে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে। কোরবানী উপলক্ষে এখন পর্যন্ত একটি মহিষ বিক্রি হচ্ছে না। যা বিক্রি হচ্ছে তাতে কোন লাভ হচ্ছে না। এখনো ২০ টা মহিষ নিয়ে বসে আছি। কিভাবে বিক্রি করবো এ নিয়ে বড় দুচিন্তায় আছি। বন্যার কারনে বাজারে প্রায় ক্রেতা শুন্য।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, রাজশাহীর ৯টি উপজেলা ও মেট্রা অঞ্চল মিলিয়ে মোট কোরবানির জন্য প্রস্তত ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৫২ টি গবাদি পশু।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন জানান, পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে ধারণা করছেন। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। যদি আমদানি বন্ধ করা যায় তবে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবেন। কৃষক ও খামারিরা যাতে কোরবানির পশুর ন্যায্য দাম পান সে জন্য রাজশাহী- চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজর থাকায় এবং প্রাণিসম্পদের নিষেধাজ্ঞায় বাইরের পশু আসেনি।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top