রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষার দাবিতে ব্যতিক্রমী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা


প্রকাশিত:
২৪ জানুয়ারী ২০২২ ০৯:২০

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৮

ছবি: প্রতীকী পরীক্ষা

ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১১ টা। সবার হাতে কোর্ট ফাইল। ভিতরে কলম, পেন্সিল, স্কেল, প্রবেশপত্রসহ পরীক্ষার সকল উপকরণ। পরীক্ষার্থীর বেশে সাড়িবদ্ধভাবে সকলে দন্ডায়মান রাজশাহীর নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে। একটু পরেই রাজপথে সামাজিক দূরত্ব মেনে সাড়ি সাড়ি বসেছে শিক্ষার্থীরা। নির্দিষ্ট সময় পরে শুরু হয় এই প্রতীকী পরীক্ষা।

রোববার সকাল ১০টায় নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে আয়োজিত মানববন্ধন শেষে এই প্রতীকী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় চলমান ও সূচী প্রকাশ হওয়া সকল পরীক্ষা চালু করতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয় শিক্ষার্থীরা।

সারা বিশ্বে করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও ক্রমেই বাড়তে থাকে করোনার সংক্রমণ। চলতি বছরের শুরু থেকে প্রতিদিনই আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা। তাই করোনার সংক্রমণ রোধে ২ সপ্তাহের জন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

গত শুক্রবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করে মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে সকল পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে।

বন্ধ হয়ে যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের চলমান পরীক্ষা। সপ্তাহ খানেক পরেই যারা নতুন কর্মে যুক্ত হতো তাদের ভাগ্যে নেমে আসে কালো আধার। অতীতের মতো আবারও দীর্ঘায়িত হয় কি না এমন চিন্তায় শঙ্কিত তারা। অনিশ্চয়তায় রয়েছে তাদের চাকরি জীবন। তাই দ্বিতীয় দিনের মতো পরীক্ষা চালুর দাবিতে রাজপথে নামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

এসময় চলমান পরীক্ষার দাবিতে করা আন্দোলনের আহ্বায়ক ও রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী আব্দুল হাই বলেন, আমরা ২০২০ সাল থেকে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আর এক সপ্তাহ পরেই চাকরি জীবনে যাওয়ার প্রস্ততি নিতে পারতাম। অনেকের পারিবারিক অবস্থা খুবই দুর্বিষহ। পরিবারের কাছে কিভাবে মুখ দেখাবো?

নিউ ডিগ্রী কলেজের শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত সাগর বলেন, এর আগেও করোনার কারণে একেকটি বর্ষের শিক্ষার্থীরা তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত সেশন জটে পড়েছে। এবার যে দুই সপ্তাহ পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে সেটা নিয়েও আমরা আশা দেখছি না।

নিউ ডিগ্রী কলেজের শেষ বর্ষের আরেক পরীক্ষার্থী আব্দুর রহিম বলেন, আমরা পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়রানিতে আমরা অতিষ্ট। অবিলম্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সকল কোর্সের চলমান ও সূচি প্রকাশ হওয়া পরীক্ষাগুলোর সূচী প্রকাশ করা হোক।

প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ টেনে রাজশাহী কলেজের শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী রুহানা তাসকিয়া বলেন, দেশের সকল প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশরীরে ও অনলাইন পরীক্ষা নিলেও আমাদের ক্ষেত্রে এসব কেউ ভাবেই না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু চললেও পরীক্ষা কেন নয়- প্রশ্ন রাখেন এই শিক্ষার্থী।

রাজশাহী কলেজের ২য় বর্ষের পরীক্ষার্থী ফেরদৌস রহমান জয় বলেন, আমরা ২০১৯ সাল থেকে অনার্স ২য় বর্ষে আছি। ২য় বর্ষেই যদি চার বছর লাগে অনার্স শেষ করতে কত বছর লাগবে? সমবয়সীদের অনেকে প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সের গন্ডি শেষ করেছে বা শেষ পর্যায়ে। অথচ আমরা ২য় বর্ষেই পড়ে থাকতে বাধ্য হয়েছি।

পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আহ্বায়ক আব্দুল হাদি বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি চলমান ও সূচি প্রকাশ হওয়া সকল পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না আসলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক অফিস ঘেরাও করা হবে। সংশ্লিষ্টরা আমাদের দু:খ দুর্দশার কথা ভেবে জরুরি সিদ্ধান্ত নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এসময় রাজশাহী কলেজ, নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজ, সিটি কলেজ ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top