রাজশাহী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

পাওনা টাকা পরিশোধ না করতে অপহরণের নাটক


প্রকাশিত:
২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৩:১৪

আপডেট:
২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৩:১৫

ছবি: গ্রেফতারকৃত আসামী

রাজশাহী মহানগরীতে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট হতে পাওনা টাকা পরিশোধ না করতে অপহরণ নাটক করে পরিবারের কাছে অর্থ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমান (২৬) রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার কাজীহাটা ধরমপুর গ্রামের এমারত আলীর ছেলে। সে নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার টুলটুলি পাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতো।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, মোঃ মিজানুর রহমান নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার টুলটুলি পাড়ার বাসা হতে নামাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। মিজানের আম্মা মোসাঃ মনিরা বেগম (৪৬) এর এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাশিয়াডাঙ্গা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী এন্ট্রি হয়।

রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মিজানকে উদ্ধারে তদন্ত শুরু করেন।

তদন্তকালে ডিবি পুলিশের ঐ টিম নিখোঁজ মিজানের পরিবারের মাধ্যমে জানতে পারেন, ৬-৭ জন ব্যক্তি তাকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় এলাকা হতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মাইক্রোবাসে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়েছে বলে মিজান তাদের জানিয়েছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে ম্যাসেজ ও মাঝে মধ্যে তার স্ত্রী, শ্বাশুড়ি, ভাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকে ফোন করে এবং জানায় যে, অপহরণকারীরা তার পিছনে অস্ত্র ধরে রেখেছে এবং মুক্তিপণ হিসেবে তার ডাচ বাংলা একাউন্টে প্রথমে ২০ লক্ষ এবং পরবর্তীতে ১০ লক্ষ ও সর্বশেষ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাবী করে এবং এই মুক্তিপণের টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলবে।

বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর হওয়ায় ডিবি পুলিশের ঐ টিম আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মিজানুরের অবস্থান নির্ণয়ের জোর চেষ্টা শুরু করে, কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তার অবস্থান কখনও ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট দেখায়। সবশেষ মঙ্গলবার তার অবস্থান নির্ণয়পূর্বক ঢাকা গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে উদ্ধার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিজানুর রহমান জানায়, অপহরণকারী চক্র তার অনলাইন একাউন্টে থাকা ৭৮ লক্ষ টাকা নিয়ে নিয়েছে এবং একটি মাইক্রোযোগে তাকে অর্ধ অচেতন অবস্থায় গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় ফেলে চলে যায়।

পরবর্তীতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে মিজানুর রহমান জানান, সে ২০১৪ সাল থেকে Foregin Exchange (Forex Fectory) অনলাইনে ব্যবসা শুরু করে। উক্ত অনলাইন ব্যবসা চালু রাখার লক্ষে সে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট হতে সর্বমোট ৩১ লক্ষ টাকা ঋণ করে। প্রথম দিকে লাভবান হলেও পরবর্তীতে লোকসান করে তার পুঁজি সব হারিয়ে যায়। ব্যবসায় পুজি হারিয়ে ফেলার কারণে পাওনাদারদের অর্থ পরিশোধ না করার কৌশল হিসেবে নিজেই আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণের নাটক তৈরী করে।

আত্মগোপনে গিয়ে নিজেই অপহরণকারী সেজে তার পরিবারের নিকট হইতে মুক্তিপণের জন্য প্রথমে ২০ লক্ষ এবং পরবর্তীতে ১০ লক্ষ ও ০৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাবী করে, অন্যথায় প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। মিজানুর রহমানের পরিকল্পনা, পরিবারের নিকট হইতে আদায়কৃত অর্থ দিয়ে পুনরায় Foregin Exchange (Forex Fectory) অনলাইন ব্যবসা করে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করবে এবং ততোদিন সে আত্মগোপনে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে কেউ তাকে অপহরণ করেনি বরং সে নিজেই অপহরণের নাটক মঞ্চস্থ করে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

 

আরপি/এসআর-১১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top