রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

বর্তমান মেয়র দুদুকে

সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ


প্রকাশিত:
১৯ নভেম্বর ২০২১ ০৭:০৩

আপডেট:
১৯ নভেম্বর ২০২১ ০৭:২০

প্রতীকী ছবি

রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন, রাজশাহীর উপপরিচালক বরাবর রাজস্ব ফাঁকি, এডিপি ও বিশেষ বরাদ্দের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পাওয়া, সিএনজি, ট্যাম্পু ও টেক্সি ষ্ট্যান্ড এবং হাট বাজার ইজারার অনাদায়ী টাকাসহ পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দের ব্যয়ের আয়কর ও ভ্যাটের সমুদয় চালানের কপি না পাওয়াসহ বিপুল পরিমান আয়কর ও ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা না দেওযার লিখিত অভিযোগ করেছেন পৌরসভার বর্তমান মেয়র আব্দুর রাজ্জাক।

গত ১১ নভেম্বর মেয়র আব্দুর রাজ্জাকের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), রাজশাহীর উপপরিচালক বরাবর দেওয়া হয়েছেন বলে জানান তিনি। অভিযোগের সেই কপি স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীদেরও সরবরাহ করেছেন আব্দুর রাজ্জাক।

এদিকে, বাঘা পৌরসভার বর্তমান মেয়রের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্য, টাকা আত্মসাৎ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা না দেওয়াসহ পাহাড় সমান অভিযোগ উঠে বাঘা পৌরসভার বর্তমান মেয়রের বিরুদ্ধে।

'ক' শ্রেণির এই পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মালি ছাড়া অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের বিধান না থাকলেও অর্থের বিনিময়ে বারবার কর্মচারী নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন মেয়র আবদুর রাজ্জাক। তার বিরুদ্ধে এমন বহু অনিয়মের পরিেেপ্রক্ষিতে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে গত ১১ অক্টোবর লিখিত অভিযোগ করেছেন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম।

অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত ২৮ অক্টোবর তদন্ত এবং সংশ্নিষ্ট নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন। এই অভিযোগের তদন্ত শেষ না হতেই সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির ঘটনাসহ আরও অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়েছে।

বর্তমান মেয়র আব্দুর রাজ্জাক দুদুকে দাখিলকৃত তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন,২০০৬ সালের ৪ মে হতে ২০১৮ সালের ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আক্কাছ আলী। তার দায়িত্ব কালিন সময়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি হয়েছে।

যার মধ্যে পৌরসভার বিভিন্ন কাজের আয়কর ও ভ্যাটের ১০০ খানা চেক সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান না করে সরকারের ১৫ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা ক্ষতি করেছে। ২০১৩ -২০১৪ সার হতে ২০১৬-২০১৭ সাল পর্যন্ত এডিবি ও বিশেষ বরাদ্দের চেক রেজিষ্টারের মাধ্যমে ব্যয়িত সর্ব মোট ৫ কোটি,১২ লক্ষ ৪০ হাজার ২০৯ টাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নাই।

২০০৬-২০০৭ সাল হতে ২০১২-২০১৩ পর্যন্ত সময়ের এডিপি এবং বিশেষ বরাদ্দের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নাই। বাংলা ১৪২৩ সনের সিএনজি,ট্যাম্পু ও টেক্সি ষ্ট্যান্ড ইজারার ১০ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা এবং অন্যান্য হাট বাজার ইজারার ১০ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা অনাদায়ী রয়েছে।

পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যয়ের আয়কর ও ভ্যাটের সমদয় চালানের কপি নাই। বিগত ২০০৬ সারের মে মাস হতে২০১৮ সালের ৩১ আগষ্ট মাস পর্যন্ত বিপুল পরিমান আয়কর ও ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেন নাই।

দায়িত্ব গ্রহনের প্রায় ৪ বছর পর এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আব্দুর রাজ্জাক বলেন,মানবিক কারণে বিষয়গুলো সেই সময় খতিয়ে দেখেননি। আমি কোন অনিয়ম দুর্নীতি করিনি,তারপরেও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক মেয়র অক্কাছ আলী বলেন, রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় আমি জড়িত নয়। সেইসব টাকা জমা দেওয়ার দায়িত্ব প্রধান হিসাব রক্ষকের। সে কি করেছে তা আমার জানা নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে কোন টাকা বকেয়া থাকলে পরবর্তী মেয়র সেই টাকা আদায় করতে পারেন। এছাড়াও নির্বাচিত হওয়ার পর মামলার কারণে আমি দুইবার হাজতে ছিলাম।

সে সময় ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্যানেল মেয়র। আমার দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার অডিট হয়েছে। কিন্ত কোন অনিয়ম ধরা পড়েনি। পৌর সভার নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। তাই আমার জনপ্রিয়তা হ্রাস করার ষড়যন্ত্রে অহেতুক অভিযোগ করা হয়েছে। তবে অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পেলে বিধান মোতাবেক ব্যবস্থা নিবে,তাতে আমার কোন সমস্যা নাই।

পৌরসভার প্রধান হিসাব রক্ষক হাসান আলী বলেন,আমি হুকুমের গোলাম। মেয়র যা বরেন আমাকে তাই করতে হয়। পান্ডে টাকা না থাকলে আমি কিভাবে জমা দিবো। অভিযোগের বিষয় জানার জন্য দূর্নীতি দমন কমিশন,রাজশাহীর উপপরিচালকের সরকারি টেলিফোনে যোগাযোগ করলে ষ্টাফ মজিবুল হক জানান,স্যার বিশেষ কাজে বাইরে আছেন। অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে স্যারই জানে। তবে, অভিযোগ দিয়ে থাকলে নিয়ম মাফিক ব্যবস্থা গ্রহনের বিধান রয়েছে।

উল্লেখ্য ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আক্কাছ আলীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বার্চিত হন আব্দুল রাজ্জাক। এর আগে ২০০৬ সালে আব্দুর রাজ্জাককে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আক্কাছ আলী। সীমানা জটিলতার কারণে প্রায় ১১ বছর পর আটকে ছিল বাঘা পৌরসভার নির্বাচন।

 

আরপি/ এমএএইচ-০১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top