রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

চারঘাটে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা, ফার্মেসিতেও ওষুধের সংকট


প্রকাশিত:
৩০ জুন ২০২১ ০৩:১৯

আপডেট:
৩০ জুন ২০২১ ০৩:১৯

ছবি: উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চারঘাট সদর ইউনিয়নের রাওথা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ডাক্তার তাকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার কথা বলেন।

কিন্তু অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ আসায় স্বস্তি পান রবিউল ইসলাম। এতে ডাক্তার তাকে এজিথ-৫০০ ও নাপা এক্সট্রা প্রেসক্রাইব করেন। কিন্তু এলাকার ৮টি ফার্মেসি ঘুরে কোথাও এজিথ-৫০০ পাননি রবিউল। পরে ডাক্তারের পরামর্শে একই গ্রুপের (ভিন্ন কোম্পানির) জিম্যাক্স-৫০০ কেনেন। আর নাপা এক্সট্রা পেলেও দাম নেওয়া হয় দ্বিগুণ।

একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান ভায়ালক্ষীপুর ইউনিয়নের রায়পুর এলাকার বাসিন্দা আলতাফ হোসেন। তিনি জানান, নাপা ট্যাবলেট আগে ৮ টাকা পাতা (১০টি) ছিল। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়ার পর থেকে প্রতি পাতার দাম দ্বিগুণ হারে নেওয়া হচ্ছে ১৬ টাকা। আর নাপা এক্সট্রা প্রতি পাতা (১২টি) ৩০ টাকার বদলে দাম নেওয়া হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা। এছাড়া সাধারণ সি-ভিটের দামও বেশি নেওয়া হচ্ছে। আবার অনেক দোকানে ভালো কোনো কোম্পানির সি-ভিট মিলছেও না, নতুন অখ্যাত কিছু কোম্পানির সি-ভিট ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে চারঘাট উপজেলায় বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ। তবে আগে শুধু উপজেলা সদরে এ সংক্রমণের হার বেশি থাকলেও বর্তমানে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে এ ভাইরাস। ফার্মেসিতে মিলছে না প্রয়োজনীয় ওষুধ। এতে জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। এরপরও বিধিনিষেধ মানছেন না তারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে চারঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনজন ডাক্তার, তিনজন নার্সসহ ১১ জন স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় সংক্রমণের শুরু থেকে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪শ ১৮ জনের। উপজেলার পৌরসভা, সরদহ ও ভায়ালক্ষীপুর এলাকায় সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি।

মঙ্গলবার সরেজমিন চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের উপচে পড়া ভীড়। হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের মধ্যে গ্রামাঞ্চলের মানুষই বেশি। তবে সামাজিক বিড়ম্বনার ভয়ে উপসর্গ থাকার পরও অনেকে করোনা পরীক্ষা করাতে চাচ্ছেন না। ডাক্তারের কাছে থেকে পরামর্শ নিয়ে জ্বর-সর্দির ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। অনেকে গ্রাম্য ডাক্তারের কাছেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে ফার্মেসি গুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট থাকায় বেকায়দায় পড়েছে রোগীরা। তাদের অভিযোগ ফার্মেসিতে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বাড়ানো হয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের নাপা, অ্যাজিথ্রোমাইসিন ও প্যারাসিটামল ওষুধের দাম। টাকা দিয়েও ওষুধ না পেয়ে ভোগান্তি আর বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন এলাকার মানুষ।

ওষুধের দাম নিয়ে অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন ফার্মেসির মালিকরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসি মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনার কারণে বিভিন্ন কোম্পানি নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ দিচ্ছে না। সর্দি-জ্বরসংক্রান্ত ওষুধের অর্ডার দিয়েও সময়মতো সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কিছু ওষুধের দাম কোম্পানি থেকেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর করোনার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওষুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। এজন্য বাধ্য হয়ে কিছু ওষুধের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা ড্রাগ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি মাহাবুব আলম মোহন বলেন, বেক্সিমকোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা ওষুধ না দেয়ার কারণে নাপা ও নাপা এক্সট্রা ফার্মেসিতে নেই। তবে অন্য কোম্পানির ওষুধ রয়েছে। এছাড়া কোনো ফার্মেসিতে কেউ ওষুধ বেশি দামে বিক্রি করছে না।

এ বিষয়ে বেক্সিমকো কোম্পানির চারঘাট প্রতিনিধি ফয়সাল হোসেন বলেন, গত ১০ দিন যাবত চারঘাটে নাপা ও নাপা এক্সট্রা জাতীয় ওষুধ সরবারহ নেই। এজন্য ফার্মেসি গুলোতে সংকট দেখা দিয়েছে।তবে আশা করা স্বাভাবিক হবে।’

চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, কিছু কোম্পানির জ্বর-সর্দির কিছু ওষুধ ফার্মেসিতে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ সরবারহ রয়েছে। ডাক্তার পরামর্শ দিলেও জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত লোকজন করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ নেই। তারা পরীক্ষা না করে বিভিন্ন ফার্মেসিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে করোনার উপসর্গ উপজেলার গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়েছে।’

 

 

আরপি/এসআর-২০



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top