রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় চলছে আম পাড়া উৎসব, নেই উৎসবের আমেজ


প্রকাশিত:
২২ মে ২০২১ ০৩:৪৫

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ০৭:০৮

আম পাড়া উৎসব

বছর ঘুরে জ্যৈষ্ঠ মাস এলেও আমচাষিদের ঘরে উঁকি দিচ্ছে না নতুন স্বপ্ন। এর পরিবর্তে তাদের চোখে-মুখে রাজ্যের দুশ্চিন্তা। করোনাকালে গাছ থেকে আম পাড়া ও বাজারজাতকরণ নিয়ে আমের রাজ্য রাজশাহীর চারঘাটে কেবলই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বাজারে আমের দামও গত বছরের তুলনায় কম।

মধুমাস জ্যৈষ্ঠের আজ (২২ মে) ৮ম দিন। ৭ দিন আগে ১৫ থেকে রাজশাহীর চারঘাটে শুরু হয়েছে ফলের ‘রাজা’ আম পাড়ার উৎসব। তবে এবার আগের মতো ‘উৎসবের আমেজ’ নেই।

আমচাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আম পাড়া এবং তা বাজারজাত করাটা এবার বড় চ্যালেঞ্জ। লকডাউন শিথিলে দেশের বাজারে সরবরাহের সম্ভাবনা উঁকি দিলেও ইউরোপসহ আমের বিশ্ববাজার হারানোর শঙ্কায় চাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশবাসীকে রাজশাহীর রাসায়নিকমুক্ত আম খাওয়ার সুযোগ করে দিতে বিগত চার বছর ধরে গাছ থেকে আম পাড়ার সময়সীমা বেঁধে দিচ্ছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। গত ১২ মে এবারও প্রশাসন বিভিন্ন জাতের আম পাড়ার সময় ঘোষণা করে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুঁটি আম নামানো শুরু করেছেন চাষিরা। আর গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) থেকে আমচাষিরা গাছ থেকে বাজারে তুলেছেন আমের রাজা গোপালভোগ। রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা ২৫ মে, হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ১৫ জুন এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা এবং বারি আম-৪।

চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষীপুর গ্রামের আমচাষি আব্দুস সামাদ বলেন, আমার নিজের বাগান সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে। পাশের গ্রামে ইজারা নিয়েছি আরও তিন বিঘা বাগান। বাগানে গোপালভোগ, খিরসাপাত আর ল্যাংড়া আম রয়েছে।

তিনি বলেন, আম পাড়ব কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছি। এবার আমের বাজারদর তেমন ভাল না। কিন্তু গোপালভোগ আম পাকা শুরু হয়েছে। না নামালে গাছে পাকতে শুরু করবে। গাছে পাকা আম কেনার খদ্দের খুব কম। কী করব, তা ঠিকই করতে পারিনি। বাজারে আমের দামও কম। খুব বিপদে আছি, রাতের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে।

উপজেলার পরানপুর গ্রামের আমচাষি শরীফুল ইসলাম বলেন, খুব কষ্টে এবার আম পরিচর্যা করেছি। শ্রমিক পাইনি, কীটনাশকও কিনতেও বেগ পোহাতে হয়েছে। এখন বাজারে আমের দাম না থাকলে সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়বে।

তবে দেশের বাজারে আমের দাম ভালো থাকবে বলে মনে করছেন চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার। তিনি বলেন, দেশের বাজারে আমের ক্রেতা নিয়ে সমস্যা হবে বলে মনে করছি না।চলতি মৌসুমে চারঘাট উপজেলায় আমবাগান রয়েছে ৩ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে। অনাবৃষ্টি ও তাপদাহে আমের ক্ষতি হলেও এখনো গাছে পর্যাপ্ত আম রয়েছে। চাষীরা ঠিকমত বাজারজাত করতে পারলে লাভবান হবেন।

চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা জানান, মুজিববর্ষে চারঘাটের বিষমুক্ত আম সারাদেশে যাবে।করোনাকালেও অপরিপক্ব আম বাজারজাত ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে আছে প্রশাসন। সুষ্ঠুভাবে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়েই আম নামানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, কৃষিপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কীভাবে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আমের কেনাবেচা নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে কাজ চলছে। চারঘাটসহ রাজশাহীর আম কম খরচে ঢাকায় পাঠানোর জন্য চালু হয়েছে বিশেষ ট্রেন 'ম্যাংগো স্পেশাল'।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে (পশ্চিমাঞ্চল) ডিসিও নাসির উদ্দীন বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে গত বছর থেকে আম ব্যবসায়ীদের সহায়তায় শুধুমাত্র আমের মৌসুমে সরকার বিশেষ পার্সেল ট্রেন চালু করেছে। চলতি আমের মৌসুমে এই ট্রেন চালু হবে যাতে আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা কম খরচে ঢাকায় আম নিয়ে যেতে পারে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৫শে মে থেকে এই বিশেষ স্পেশাল ট্রেন চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে চারঘাটের সরদহ রোড ষ্টেশন থেকে আম পরিবহন শুরু করবে।

আরপি / এমবি-৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top