রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী উন্মুক্ত জলাশয় গিলে খেতে চায় প্রভাবশালীরা


প্রকাশিত:
৩০ মার্চ ২০২১ ০৪:১২

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৩৭

ছবি প্রতিনিধি

রাজশাহীর মোহনপুরে উন্মুক্ত প্রাকৃতিক জলাভুমিগুলিতে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কুনজর পড়েছে। তারা উন্মুক্ত জলাশয়ে বেড়ে উঠা মাছগুলি গিলে খেতে চাইছে। তারা প্রকৃত মৎস্যজীবিদের মাছ না ধরার জন্য নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছে। একারণে মৎস্যজীবিদের মাঝে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে যে কোন সময় উভয়ের মাঝে মারামারি ও সংঘর্ষ ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার ২১ জন। খাস জমির পরিমান ১৮৯৪.৫৬ একর। উন্মুক্ত জলাশয় ৬টি, প্লাবনভূমি ১২টি, নদী ২টি। পরিচয়পত্র প্রাপ্ত মৎস্যজীবি ১ হাজার ৮শত ৫৪ জন। মৎস্যজীবিগন বিভিন্ন উন্মুক্ত জলাশয় হতে মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তারা মাছ ধরে বিভিন্ন হাটে বাজারে বিক্রি করে পরিবার ও ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা করান।

গত এক বছর ধরে চলমান করোনাকালীন সময়ে সরকার মৎস্যচাষীদের প্রনোদনা প্যাকেজের আওতায় ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা ১৮ জন মৎস্যচাষীকে লোন দিলেও মৎস্যজীবিদের কপালে জোটেনি কোন সরকারী সহায়তা। এতদিন তারা প্রাকৃতিক জলাশয় বাকশিমইল ইউপির বিল কাটরা বিল, ধুরইল ইউপির বড় বিল ও কেশরহাট পৌর এলাকার ইচলাবাড়ি বিল হতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।

বর্তমানে সে বিলগুলি দখলে নিয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সাঙ্গপাঙ্গোরা। বিল দখলে নিয়ে তাবু খাটিয়ে নিয়মিত পাহারা বসিয়ে মৎস্যজীবিদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে জলাভূমি হতে মাছ ধরতে দিচ্ছেন না। সরকার জনগণের আমিষের চাহিদা পূরণ করতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য দপ্তরের উদ্দ্যেগে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিলে নানা প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করছেন। কিন্ত দলীয় নেতা কর্মীরা বলছেন তারা সরকারীভাবে উপজেলার বাকশিমইল ইউনিয়নের বিল কাটরা বিল ও ধুরইল ইউনিয়নের বড় বিল ও কেশরহাট পৌর এলাকার ইচলাবাড়িসহ উন্মুক্ত জলাশয়গুলিতে মাছ ছেড়েছেন ও জলাশয়গুলি সরকারিভাবে লীজ নিয়েছেন।

অথচ উপজেলা ভূমি অফিস সুত্র বলছে জলাশয়গুলি লীজ দেওয়া হয়নি। এবিষয়ে উভয়ের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। জলাভূমি হতে মৎস্যজীবিদের মাছ ধরতে বাঁধা দেওয়ার কারণে যে কোন সময় উভয়ের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা জানান।

এ ঘটনায় ভূক্তভোগী মৎস্যজীবি আবু সাইদ, রুস্তম, শফিকুল, ইয়াকুব, রবিউল,জুনাবসহ ৫৮জন স্বাক্ষরিত রাজশাহী জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগে সুত্রে জানা গেছে, ধুরইল ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের সমসেরের ছেলে আওয়ামীলীগকর্মী শহিদুল ইসলাম, কফিলের ছেলে টিপু, অহির উদ্দিনের ছেলে বিএনপি নেতা আজিম,আতাবের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন, মৃত জিল্লুর রহমানের ছেলে মুকুল, সিদ্দিকের ছেলে আলিম উদ্দিনসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র প্রাকৃতিক জলাভূমি হতে মাছ ধরতে বাঁধা প্রদান করে আসছেন। তারা জলাভূমির পাশে তাবু খাটিয়ে পাহারা বসিয়েছেন যাতে কেউ উক্ত জলাভূমি হতে মাছ ধরতে না পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সাবধান করা হলেও দলীয় শক্তির বলে তারা মৎস্যজীবিদের হুমকি ধামকি অব্যাহত রেখেছে।

অভিযোগ কারীরা বলছেন, তারা আদিকাল থেকে জলাশয়গুলি হতে মাছ ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। অথচ একটি সংঘবদ্ধ চক্র তাদের মাছ শিকারতো দুরের কথা এর কাছে না যেতে নানা রকম হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। বর্তমানে রবি মৌসুমে বোরো ধানে পানি সেচ দিতে এ জলাশয়গুলি থেকে কৃষকদের পানি উঠাতে দেওয়া হচ্ছেনা। প্রতিবাদ জানালে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মৎস্যজীবি আবু সাইদ, রুস্তম আলী, ইয়াকুব, মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, আমরা জন্মের পর থেকে বিল কাটরা ও বড়বিলসহ বিভিন্ন বিলে মাছ ধরে আসছি। এখান থেকে মাছ ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা আমাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। সরকার আমাদের মৎস্যজীবি কার্ড করে দিয়েছেন সে জন্য আমরা গর্বিত। কিন্তু হঠাৎ করে স্থানীয় একটি চক্র সরকারের দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট করতে আমাদের মাছ ধরতে বাঁধা দিচ্ছেন। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের নাম ভাঙ্গিয়ে আমাদেরকে বলছেন এমপি সাহেব আমাদেরকে জলাভূমি হতে মাছ ধরার অনুমতি দিয়েছেন। যদি তাই হয় আমরা গরিব মানুষ মাছ ধরে তা হাটে বেচে জীবিকা নির্বাহ করি। মাছ ধরতে না পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে খাবো কি?

ধুরইল বড়বিল নিয়ে খোঁজ নিলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধুরইল ইউনিয়নের একাধিক কৃষক ও মৎসজীবি বলেন, তারা রবি মৌসুমে বোরো ধান রোপন করেছেন ধানে পানি সেচ দিতে বড় বিলের খাল হতে পানি তুলতে গেলে স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগ নেতার নির্দেশে জিনু, আবজাল, সোহেল, মিনারুল, মালেক, ছইফুল, চৌকিদার খোরশেদসহ ২০/২৫ জন পানি তুলতে দিচ্ছেনা এবং আমাদের সাথে মারমুখী আচরণ করেন। তারা তাবু খাটিয়ে খাল পাহারা দিচ্ছেন যাতে খাল থেকে কেউ মাছ ধরতে না পারে। তারা স্থানীয় মৎস্যজীবিদের খাল হতে মাছ ধরতে দিচ্ছেনা। বর্তমানে এ খালে কয়েক লাখ টাকার মাছ রয়েছে।

এবিষয়ে মোহনপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রাকৃতিক জলাভূমি হতে মৎস্যজীবিদের বৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরার অগ্রাধিকার রয়েছে। এছাড়াও যে কেউ মাছ ধরতে পারবে। বিশেষ কোন গোষ্ঠী বা দল মাছ ধরতে কোন প্রকার বাঁধা নিষেধ করতে পারেননা।

এবিষয়ে ইউএনও মো.সানওয়ার হোসেন বলেন, জলাশয়গুলি ইজারা দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে বাঁধাদানকারীদের নিষেধ করা হয়েছে। কথা না শুনলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরপি/ এসআই-৭



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top