রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


প্রতিবেশীর হক: কী বলে ইসলাম?


প্রকাশিত:
২০ নভেম্বর ২০২০ ১৬:৪১

আপডেট:
২০ নভেম্বর ২০২০ ১৭:৩২

প্রতিকী ছবি

ইসলামে প্রতিবেশীর হক ও অধিকারকে পিতামাতার ও আত্মীয়-স্বজনের অধিকারের পাশেই স্থান দিয়েছে। নির্দেশ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার। সমাজবদ্ধ এ পৃথিবীতে মানুষ একা বাস করতে পারে না। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ ও দুঃখ ভাগাভাগি করেই মানুষকে বাঁচতে হয়। আসতে হয় একে অপরের প্রয়োজনে। তবে গ্রামে প্রতিবেশীদের সঙ্গে একে অপরের সম্পর্ক থাকলেও শহরের চিত্র ভিন্ন। ফলে এখানে কেউ তেমন প্রতিবেশরি হক আদায় করে না।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। কোনও কিছুকে তার সঙ্গে শরিক করো না। পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিন, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৬)

হজরত আবু শুরাইহ (রা.) বলেন, ‘আমার দুই কান শ্রবণ করেছে, আমার দুই চক্ষু প্রত্যক্ষ করেছে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং আখেরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন স্বীয় প্রতিবেশীকে সম্মান করে।, (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)

অন্যত্র বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৫)

আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৩)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট পুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। (আদুবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১২)

পবিত্র কোরআনে ‘ছাকার’ নামের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে দরিদ্রদের খানা না খাওয়ানোকে অন্যতম গণ্য করা হয়েছে। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, (জাহান্নামীকে জিজ্ঞেস করা হবে) ‘কোন বিষয়টি তোমাদের ‘ছাকার’ নামের জাহান্নামে ঠেলে দিয়েছে? (তারা বলবে) ‘আমরা নামাজ পড়তাম না এবং দরিদ্রকে খানা খাওয়াতাম না।’ (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত : ৪২-৪৪)

পারস্পরিক সুসম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে হাদিয়ার আদান-প্রদান খুবই কার্যকর। এতে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হাদিয়া আদান-প্রদান কর। এর মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে হৃদ্যতা সৃষ্টি হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৪)

উপরের হাদিসে হাদিয়া বলতে শুধু অর্থ নয়, অন্য কিছুও হাদিয়া স্বরূপ দেয়া যেতে পারে। এক হাদিসে আছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) হযরত আবু জর (রা.) কে বললেন, হে আবু জর, তুমি ঝোল (তরকারি) রান্না করলে তার ঝোল বাড়িয়ে দিয়ো এবং তোমার প্রতিবেশীকে তাতে শরিক করো। (মুসলিম, হাদিস : ২৬২৫)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীদেরকে প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিতে সংকোচ করতে নিষেধ করেছেন। ‘হে মুসলিম নারীগণ! তোমাদের কেউ যেন প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিতে সংকোচবোধ না করে। যদিও তা বকরির খুরের মতো নগণ্য বস্তুও হয়। (বুখারি, হাদিস : ৬০১৭)

উল্লেখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে বুঝা গেল প্রতিবেশীর হক আদায় করা কতটা জরুরি। আমাদের সবার ‍উচিত প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখা। প্রয়োজনে প্রতিবেশীকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। সর্বোপরি প্রতিবেশীর হক আদায় করার তৌফিক যেন আল্লাহ আমাদের দেন। আমিন। 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top