রাজশাহী মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১


উদ্বেগ বাড়াচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ; সংক্রমণ ঝুঁকিতে রাজশাহী


প্রকাশিত:
২৪ মে ২০২১ ২২:১২

আপডেট:
২৪ মে ২০২১ ২২:১৩

প্রতীকি ছবি

 

উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। রামেক হাসপাতালে আজ মঙ্গলবার ১০ জন মৃত্যুবরণ করেছে। এদের সবাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের।

কিন্তু সীমান্তবর্তী প্রান্তিক এলাকাগুলোতে করোনার টেস্ট কিংবা স্বাস্থ্য সচেতনার প্রতি সাধারণ মানুষের গুরুত্ব কমই দেখা গেছে। শিবগঞ্জের অধিকাংশ মানুষের মাঝে জ্বর, সর্দি, কাশির মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অথচ যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের চিকিৎসার পর্যান্ত ব্যবস্থাও নেই ওই জেলাতে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিকাংশ রোগিই রাজশাহী মেডিকেলে কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। রামেক হাসপাতালে করোনা রোগির অধিকাংশই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকার। এমন অবস্থায় রাজশাহীতে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে।

সংক্রমন যেন ছড়িয়ে না পড়ে সে লক্ষে কঠোর লকডাউন দিয়ে সেই জেলাতেই চিকিৎসা করানোর কথা বলছেন-চিকিৎসক, রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

টেস্টে ধরা না পরলেও করোনার লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে এটি ভারতের ভ্যারিয়েন্ট কি না? এমন শঙ্কাও প্রকাশ করছেন চিকিৎসকরা। এরইমধ্যে নমুনা সংগ্রহ করে সরকারের রাগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রামেক হাসপাতালে ১৪৬ জন করোনা রোগি ভর্তি ছিলো। এরমধ্যে ৮৮ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের। এদের অধিকাংশই জেলার প্রান্তিক এলাকাগুলো থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

৮৮ জনের মধ্যে মাত্র ২০ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা পজেটিভ হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। বাকি সবাই রামেক হাসপাতালে লক্ষণ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। পরে করোনা ধরা পড়েছে। আবার অনেকের করোনা টেস্টে নেগেটিভ আসলেও এক্সরে, সিটি স্ক্যানসহ অন্যান্য রিপোর্টে করোনার লক্ষণ থাকছে।

এছাড়া এদিন রামেক হাসপাতলের ৯ টি আইসিইউতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগি ভর্তি ছিলো। এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।  

জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এসব রোগিদের সঙ্গে আসছেন একাধিক স্বজন। তারা হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করছে। এতে রাজশাহী শহরে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে। অথচ চিকিৎসা নিতে এসে মেডিকেলেও তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। একাধিক স্বজন ইচ্ছে মতো আসা যাওয়া করছে হাসপাতালে।


সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, বর্তমানে ভারতে করোনার প্রকোপ বেশি। সেখানে বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ বিভিন্ন সময় ভারতে অবৈধ প্রবেশ করেও থাকতে পারে। এছাড়া কয়েক দফায় ভারতে আটকে পড়া বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।

এভাবে হয়তো ভারতের ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ হতে পারে।


চিকিৎসকরা বলছেন, সেখানে যদি ভারতের ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ে তবে পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যেতে পারে। সুতরাং এখনি সেখানকার ক্যাপাসিটির ডেভলপ করতে হবে। 


রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি তাদেরকে ভাবাচ্ছে। হাসপাতালে কোভিড রোগিদের অধিকাংশই চাঁপাইনবাবগঞ্জের। সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় তারা এখানে রের্ফার করছে।

আবার অনেকেই উন্নত চিকিৎসার আশায় সরাসরি এখানে আসছেন। এতে হাসপাতালে আবারো করোনা রোগির সংখ্যা বাড়ছে। এমন অবস্থায় তারা শঙ্কার মধ্যে আছেন তারা। এছাড়া এটি ভারতের ভ্যারিয়েন্ট কি না? এ বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। কেননা এটি ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে। এজন্য জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিভিল সার্জনসহ বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। 

সেখানে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করে সেখানেই চিকিৎসা ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয় নি। সেখানে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নেই আইসিইউ সুবিধা।

সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সুবিধা থাকলেও তা পর্যান্ত নয়। সর্বোচ্চ ২০ জনের বেশি রোগিকে অক্সিজেন সুবিধা দেয়া সম্ভব হয় না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, জেলায় বর্তমানে ১৯৩ জন করোনা রোগি আছেন। যাদের ১৮ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিরা বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

যাদের কার্যকর আইসোলেশনে থাকা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার তেমন কাজেই আসছে না। এছাড়া রামেক হাসপাতালে কতজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগি চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন কোন হিসেবও নেই তাদের কাছে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন জানান, ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারতের ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এজন্য নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

তবে তিনি মনে করেন, ইদের আগে অনেক মানুষ চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসেছেন। সে সময় হয়তো করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে গেছে হয়তো। আর তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তারা তাদের যে সুযোগ-সুবিধা সেটা নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।

 

আরপি/ এমআই 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top