রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


ঘুরে দাঁড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ নারী উদ্যোক্তাদের


প্রকাশিত:
৫ নভেম্বর ২০২১ ১৮:২৯

আপডেট:
৫ নভেম্বর ২০২১ ১৯:০৬

ফাইল ছবি

বৈশ্বিক মহামারী করোনার থাবায় থমকে ছিল পুরো বিশ্ব। অদৃশ্য ভাইরাসের সংক্রমণে যান্ত্রিক পৃথিবী স্তদ্ধ ছিল দীর্ঘ প্রায় ১৯ মাস। করোনার ভয়াবহতা কমলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না কেউ। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে রাজশাহী নগরীর নারী উদ্যোক্তারা। দীর্ঘ মহামারী পাড়ি দিয়ে মহাসংকটে পড়েছেন তারা।

গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে পুরো করোনাকালজুড়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে বেশির ভাগ নারী উদ্যোক্তা। সীমিত আকারে চলা লকডাউনের সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল বন্ধ। নিরূপায় হয়ে পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেক উদ্যোক্তাই।

গত এক দশকে নগরীর নারী উদ্যোক্তারা রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। বেকারত্ব রোধ করে কর্মসংস্থানের আওতায় এনেছে অসংখ্য নারীকে। সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই নিজেদের ব্যবসা দাঁড় করেছেন তারা। কিন্তু করোনা পরবর্তীতে কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরীতে একসময় বিউটি পার্লার ও টেইলারিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল নারীদের ব্যবসা উদ্যোগ। বর্তমানে কৃষি থেকে কন্সট্রাকশন সব ক্ষেত্রেই সুনামের সাথে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন তারা। রয়েছে টেইলারিং, বুটিকস হাউস, বাটিক, স্কিন প্রিন্ট, রাসায়নিক শিল্প, খাদ্য, রেশম, প্রযুক্তি, কাপড়ের দোকান, জুয়েলার্স, কারুশিল্প, ফ্যাশন হাউস, ক্যাটারিং, কন্সট্রাকশন, ফার্মেসি, মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট সাপ্লাই ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবসা। আগ্রহ বাড়ছে ঘরে বসে নানা রকম অনলাইন ব্যবসারও। ওয়েব’র তথ্যমতে, রাজশাহী নগরীতে নারী উদ্যোক্তাদের ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তন্মধ্যে ওয়েব’র সদস্য রয়েছেন ১০০ জন।

নারী উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনার এ ধাক্কা সামলাতে যেখানে বড় বড় ব্যবসায়ীদেরই হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেখানে সামান্য পুঁজির নারী উদ্যোক্তারা টিকে থাকা অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এবিষয়ে রুকু’স কর্ণারের স্বত্বাধিকারী রুকাইয়া ইসলাম বলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম শুরুর প্রধান প্রতিবন্ধকতাই হচ্ছে ঋণ জটিলতা। ব্যবসার অতীত অভিজ্ঞতার সময়সীমা পূরণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। রাজশাহী অঞ্চলে শিল্প উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে যদি সহজ শর্তে ও সুদবিহীন ঋণ ব্যবস্থা চালু করলে নারীরা আরও বেশি অংশগ্রহণ করতে পারতো।

অপরাজিতা’র কর্ণধার সাঈদা রায়হানা বলেন, এ অঞ্চলের নারী উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশই মেলা বা প্রদর্শনী নির্ভর। করোনায় এসব বন্ধ থাকায় ঈদ-পার্বনেও বিক্রি প্রায় শুন্যের কোঠায়। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না থাকায় পুঁজি কর্মীদের মজুরি দিতেও হিমশিম খেতে হয়েছে বলেও জানান এই নারী উদ্যোক্তা। সাম্প্রতিক সময়ের অনলাইন ব্যবসার নেতিবাচক ভূমিকার কথা বলে দিপা’স গ্যালারীর দিপা রহমান বলেন, অনলাইন বেচা-কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের বিশ্বস্ততা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া ঐশানী’র প্রধান জয়শ্রী রানী সরকার বৃষ্টি বলেন, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি জুয়েলারী নিয়ে যারা কাজ করে তাদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা দরকার। সরকারি বা বেসরকারিভাবে আমাদের যদি সহায়তার ব্যবস্থা থাকলে অফিস চালু করাও সম্ভব হতো।

এ অবস্থায় নারী উদ্যোক্তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সবচেয়ে বেশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করেন উইমেন এন্টারপ্রিনিয়ার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব) রাজশাহী শাখার সভাপতি আঞ্জুমান আক্তার লিপি। তিনি বলেন, সরকারি প্রণোদনা ও সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ ছাড়া নতুন করে ব্যবসা দাঁড় করানো অসম্ভব। করোনাকালীন সময়ে আনুমানিক আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা যা নিয়েছে তা কোনোদিন পূরণ হবে না।

ব্যাংক ঋণের জটিলতার বিষয়ে এই সংগঠক বলেন, ব্যবসায়িক পুঁজির জন্য ব্যাংক ঋণ নিতে অতীত অভিজ্ঞতা চায়। নতুন উদ্যোক্তারা এই শর্ত পূরণ করতে না পারায় ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। ন্যূনতম ২ বছরের ব্যবসার অতীত অভিজ্ঞতার সময়সীমা কমানো হলে নতুনদের সুবিধা হতো।

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top