রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


সাত দফা দাবিতে আমরণ অনশনে ১০ রাবি শিক্ষার্থী


প্রকাশিত:
১৩ মার্চ ২০২৩ ০২:৫৮

আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৩ ০৩:১৩

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনার পর ৭ দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষার্থী।

রোববার (১২ মার্চ) বিকেল ৫টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন তারা।

অনশনকারী শিক্ষার্থীরা হলেন, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, সোহাইব খান ও ফয়সাল আহমেদ, দর্শন বিভাগের শাহাদাৎ হোসেন ও রাবেয়া মুহিব, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের রিমি আক্তার ও রাবিয়া জান্নাত রাইসা এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাত হাওলাদার।

অনশনরত শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ হচ্ছে

১) শনিবারের ঘটনার জন্য প্রক্টরের পদত্যাগ ও প্রশাসনের জবাবদিহি।

২) ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার।

৩) আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ভার প্রশাসনকে নিতে হবে।

৪) বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিক করতে হবে এবং এ বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।

৫) পাসকার্ড ব্যতীত ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।

৬) ক্যাম্পাসের রিকশা ভাড়া, ডায়নিং ও খাবার হোটেলগুলোয় খাবারের দাম নির্ধারণ ও মান নিশ্চিতকরণ।

৭) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেল স্টেশন পুনরায় চালু করতে হবে।

এ বিষয়ে অনশনরত দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া মুহিব বলেন, আমরা ৭টি দাবি নিয়ে এখানে অবস্থান নিয়েছি। আমরা প্রশাসনের মুখের কথায় আশ্বস্ত হতে চাই না। আমরা দাবির বাস্তবায়ন চাই। আমাদের দাবিসমূহ মেনে নেওয়া না হলে আমরা আমাদের অনশন চালিয়ে যাব।

অনশনরত হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রাবিয়া জান্নাত রাইসা বলেন, আমাদের দাবি নিরাপদ ক্যাম্পাস। গতকাল যে ঘটনাটা ঘটছে তার কোনো পদক্ষেপের প্রথমে প্রশাসন নেয়নি। আমরা এর বিচার চাই। আমাদের যে ছয় দফা আছে সেটা অবিলম্বে প্রশাসনকে মেনে নিতে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে।

এর আগে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বাসের ভেতর এক রাবি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জের ধরে সহপাঠীরা বিনোদপুর বাজারে চালক ও হেলপারকে মারধর করেন। বাস থেকে পেটাতে পেটাতে চালককে নামিয়ে মারধর করা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এতে বাধা দিলে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিরোধ লেগে যায়। এরপর রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের ইট-পাটকেলে অন্তত ২শ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই ঘটনায় আজ সকালেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারকে অবরুদ্ধ করে তারা বিক্ষোভ করেছেন।

দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও এখনও উত্তেজনা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ বেশ কিছু দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছুসংখ্যক এলাকাবাসীর যে অপ্রীতিকর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মর্মাহত। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।

এতে উল্লেখ করা হয়, শনিবার সন্ধ্যায় বিনোদপুর গেট সংলগ্ন স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এবং এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। ঘটনার এক পর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করার ফলে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এলাকাবাসী ও পুলিশের কতিপয় সদস্যের এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের কাছে যেসব দাবি উত্থাপন করেছে, সে বিষয়ে উপাচার্য সংবেদনশীল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে স্থানীয় মতিহার থানায় এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল শিক্ষার্থী বিনোদপুর ও আশপাশের মেসে অবস্থান করছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর আছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাবি প্রশাসন মেস মালিক ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। কর্তৃপক্ষ মনে করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। তাদের পরামর্শ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। অতীতে এ রকম পরিস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের শান্ত থেকে এবং সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো রাবি প্রশাসন।

 

 

আরপি/এসআর


বিষয়: অনশন রাবি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top