রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


নাট্যকার ও নির্মাতা রাজা ফকির পেলেন 'আলোক কুমার রায়’ পদক


প্রকাশিত:
২৩ মার্চ ২০২২ ০৯:১৫

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ২২:০৬

ছবি: পদক প্রদান

ঢাকা জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার ২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছর 'আলোক কুমার রায় পদক' প্রদান করে থাকে। এবারেও তিন ৩ জন ব্যক্তিকে সম্মানিত করেছেন। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন মুক্ত মঞ্চে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার নাট্য উৎসবে অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে, গত ৬ই মার্চ জনপ্রিয় নাট্যশিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার ও ৯ই মার্চ লেখক, ক্রিটিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এই পদক প্রাপ্ত হয়েছেন। এই দুজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি গত ৭ই মার্চ বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার চৌপাশ নাট্যাঞ্চল এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাট্যকার ও নির্মাতা রাজা ফকিরকে 'আলোক কুমার রায় পদক' প্রদান করা হয়।

রাজা ফকির এর হাতে পদক তুলে দেন অধ্যাপক ইউসুফ হাসান অর্ক, নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের প্রথম আহবায়ক জাহেদুল আলম হিটো। ২০১৬ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার আলোক কুমার রায় পদক চালু করে এবং তরুণ নাট্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে ১ জনকে সম্মাননা দেয়া শুরু করে।

এ পর্যন্ত এই পদক পেয়েছেন ২০১৬- রাজন নন্দী, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়ার সিডনিতে কবিতা বিকেল সংগঠনের সাথে যুক্ত। ২০১৭- বাকার বকুল, প্রাচ্যনাট, ঢাকা, ২০১৮- সামিনা লুৎফা নিত্রা, বটতলা। ২০১৯-জ্যোতি সিনহা, মনিপুরী থিয়েটার, ২০২০- সম্বিত সাহা সেতু, দিনাজপুর, ২০২১ সালে করোনার কারণে উৎসব হয়নি। ২০২২- রাজা ফকির, চৌপাশ নাট্যাঞ্চল, বগুড়ার সান্তাহার।

রাজা ফকির ১৭ অক্টোবর, ১৯৮২ সালে জন্ম , নওগাঁ জেলার চকরামপুর গ্রামে নানীর বাড়িতে। দাদার বাড়ি বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলায় সান্তাহার ইউনিয়নের কায়েতপাড়া গ্রামে। বাবা এফ,এম,এ রাজ্জাক এবং মা আনোয়ারা বেগম। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাজা ফকির কনিষ্ঠ। সান্তাহারেই শৈশব, কৈশোর এর লেখা পড়া হয় শুরু। প্রথমে সান্তাহার মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর ক্রমান্বয়ে সান্তাহার বি,পি উচ্চবিদ্যালয়, সান্তাহার সরকারি কলেজ এবং সবশেষে ঢাকা তিতুমীর কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

সান্তাহারের নাট্যব্যক্তিত্ব আলম খান বলেন, তরুন নাট্যকার ও নির্মাতা রাজা ফকির এ যাবৎ ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ২৮ টি নাটক তার রচনায়, নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মৌলিক নাটক 'খোয়াব এ শাহাদাত' চুপকথার গল্প' সালাম বাংলাদেশ' সূর্য গ্রাসী চাঁদ' উইপোকা' ইত্যাদি। তার প্রতিটি প্রযোজনা দর্শনীর বিনিময়ে নিয়মিত মঞ্চস্থ করে থাকে চৌপাশ নাট্যাঞ্চল। বিখ্যাত নাট্যকার আব্দল্লাহ-আল-মামুন এর 'এখন দুঃসময়' নাটকটি ভিন্ননীরিক্ষায় মঞ্চস্থ করে ব্যাপক প্রশংসিত হন। নিজ দলের বাইরে যেমন- নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমি, বগুড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি, বগুড়া সংসপ্তক সহ ভিভিন্ন দলে তিনি তার নাটকের নির্দেশনার কাজ করে থাকেন নিয়মিত ভাবে।

নাট্যব্যক্তিত্ব তৌফিকুর রহমান বলেন, চৌপাশ নাট্যাঞ্চলের রাজা ফকির নিয়মিত কাজের স্বকৃতিস্বরুপ ২০১৭ সালে সি আর আই (সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন, তথ্য ও গবেষণা কেন্দ্র) কর্তৃক 'জয়বাংলা ইয়ুথ আওয়ার্ড' অর্জন করে। মঞ্চনাটকের পাশাপাশি টেলিলিভিশন নাটকের স্ক্রিপ্ট, বিজ্ঞাপন এবং শর্টফিল্মও তিনি নির্মান করেন নিয়মিত ভাবে। রবীন্দ্রনাথের শেষ ছোট গল্প 'মুসলমানীর গল্প' অবলম্বনে 'দ্য রিলিজিয়াস' শর্টফিল্মটি আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালে একাধিক এওয়ার্ড অর্জন করে। এর মধ্যে ইউরোপ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে 'বেস্ট মুভি এওয়ার্ড ' এবং ইন্ডি সিনে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে 'বেস্ট মুভি মেকার' এওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য।

এ বিষয়ে রাজা ফকির বলেন, ছোট বেলা থেকেই মায়ের অনুপ্রেরণায় কবিতা, গল্প লেখা শুরু করি। ২০০০ সালে বগুড়া জেলার সান্তাহারে নিজ এলাকায় বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রথম একটি পথ নাটক লিখে তা নির্দেশনা দেয়ার মাধ্যমেই হয় নাট্যচর্চার সূচনা করি। এরপর লেখাপড়ার সূত্রে ঢাকায় এসে যুক্ত হন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে ২০০৮ সালে। নাট্যগুরু প্রয়াত আলী যাকের এর নির্দেশনায় আন্তন চেখভের' নাটক 'দ্য চেরি অর্চাড' অবলম্বনে 'কাঁঠাল বাগান' এর মধ্য দিয়ে জাতীয় নাট্যশালায় প্রথম নাটক করা শুরু করি।

এরপর একে একে অংশ গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ এর অচলায়তন। বিজয় টেন্ডুলকারের 'ঘাসিরাম কোতোয়াল'। উৎপল দত্তের 'ছায়ানট' সহ বেশ কিছু নাটকে। কিন্তু হঠাৎ করে পিতার অসুস্থতার কারনে বাড়ি চলে আসি। সেখানে আমার এলাকা সান্তাহারে ২০১৩ সালে ২৭ মার্চ 'চৌপাশ নাট্যাঞ্চল' নামের একটি থিয়েটার গড়ে তুলে নাট্যচর্চা অব্যাহত রাখি।

 

 

আরপি/এসআর-০৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top