আটদিনে ছয় অভিযোগ, তবু প্রতিকার পাননি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার নির্বাচন। এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল বারী খান। নির্বাচনে তার প্রতীক ‘নারিকেল গাছ’। তার অভিযোগ, প্রচারণা শুরুর পর থেকেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কর্তৃক বিভিন্নভাবে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
ফেব্রুয়ারির ১ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্বাচনী প্রচারণা অফিস ভাঙা, ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ছয়টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন এবং জেলা প্রশাসকের কাছে। কিন্তু প্রতিকার পাননি।
মঙ্গলবার বিকেলে নওহাটায় নিজের নির্বাচনি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আবদুল বারী খান। তার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ মনোনীত ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী হাফিজুর রহমান হাফিজের পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে অংশ নিচ্ছেন প্রচারেও।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল বারী খান সাংবাদিকদের আটটি ছবির প্রিন্ট কপি দেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে এমপি আয়েন উদ্দিন নৌকার প্রার্থী হাফিজের নির্বাচনি সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল বারী গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রথম এমপি আয়েনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন জেলা প্রশাসক এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে। পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে তিনি আরেকটি অভিযোগ দেন এমপি আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে বলা হয়, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এমপি আয়েন নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিচ্ছেন।
৪ ফেব্রুয়ারি বারী আরেকটি অভিযোগ দেন জেলা প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশনে। এ অভিযোগে তিনি ১৯টি ভোটকেন্দ্রের জন্য ১৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেয়ার জন্যও অনুরোধ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ডাকযোগে একটি অভিযোগ পাঠান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে। ৭ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশনে দেয়া এক অভিযোগে বারী বলেছেন, সহকারী রিটার্নিং অফিসার নির্বাচনের জন্য প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু অনেকেই এমপি আয়েনের পছন্দের লোক না হওয়ায় তিনি সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে চাপ প্রয়োগ করে তালিকা পরিবর্তন করিয়েছেন।
সর্বশেষ ৮ ফেব্রুয়ারি বারী ডাকযোগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসককে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ অভিযোগে পরিবর্তন করে দেয়া সাতজন প্রিসাইডিং এবং সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রার্থী আবদুল বারী খান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তার কাছে তথ্য আছে- নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা কেন্দ্র দখল করার পরিকল্পনা করেছেন। কোথাও নারিকেল গাছ প্রতীকের পোস্টার টানাতে দেয়া হচ্ছে না। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি ছয়টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিকার পাননি। তাই তিনি এখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
জানতে চাইলে পবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, অভিযোগ করে প্রতিকার পাচ্ছেন না এ কথাটা ঠিক না। নওহাটা পৌর এলাকাটি তিনটি থানার মধ্যে পড়েছে। সব থানার ওসিদের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেয়ার বিষয়টি তাদের নজরে আসেনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নওহাটা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ মুকুল, আইন বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম, নওহাটা বাজার সমিটিতর সদস্য উমর আলী, নওহাটা ফাযিল মাদ্রাসার শিক্ষক মাহবুব রহমান সরকার, পৌর কৃষক লীগ সভাপতি শফিকুল ইসলাম সাফি প্রমুখ।
আরপি / এমবি-১২
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: