রাজশাহী সোমবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৫, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩২

জনবল সংকটে রাজশাহী প্রাণিসম্পদ দপ্তর, হাতুড়েদের দৌরাত্ম


প্রকাশিত:
২৪ জানুয়ারী ২০২১ ০১:১০

আপডেট:
২৪ জানুয়ারী ২০২১ ০৪:৪৫

ছবি: সংগৃহীত

জনবল সংকটে রাজশাহী জেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মাঠ পর্যায়ের ইউনিটগুলো। নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা সহায়ক উপরণ। ফলে ইচ্ছেমত খামার গড়ে বিপাকে পড়ছেন খামারিরা। সূত্র জানাচ্ছে, এমন প্রায় ১৪ হাজার গবাদিপশু খামার গড়ে উঠেছে জেলায়। যেগুলো চলছে ভুয়া কিংবা হাতুড়ে চিকিৎসকের পরামর্শে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের নেই পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় তারা নজরদারি করতে পারছেননা। দিতে পারছেননা খামারিদের চাহিদামত সেবা। সংকট কাটানোর চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাণিসম্পদ দপ্তরসূত্রে জানা গেছে, জেলায় সবমিলিয়ে ১১৮টি পদের মঞ্জুরি রয়েছে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ইউটিনগুলোতে। এর মধ্যে কর্মরত ৭৪ জন। বাকি ৪০ পদ শূণ্য দীর্ঘদিন ধরেই।

সূত্র জানাচ্ছে, জেলার তানোর উপজেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৬টি পদে জনবল নেই। একই চিত্র বাগমারা উপজেলায়। সেখানে ৭ পদে নেই জনবল। গোদাগাড়ী উপজেলায় ২টি পদে জনবল নেই। জেলার পবা, মোহনপুর, পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলায় ৪টি করে পদ শূণ্য দীঘদিন। এছাড়া চারঘাট উপজেলায় ৫টি পদ এখনো ফাকা। জেলা দপ্তরেও এই সঙ্কট। এখানে শূন্য রয়েছে ৪টি পদ।

তথ্যমতে, প্রতি উপজেলায় একটি করে মিনিল্যাব প্রয়োজন। সেখানে জেলা-উপজেলা মিলিয়ে গবাদিপ্রাণির পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ১টি মাইক্রোস্কোপ ছাড়া আর কিছুই নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন হাজার হাজার খামারি।

নাম প্রকাশ না করে প্রাণি সম্পদ দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, মূলত: এই সেক্টরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সঙ্কট চরমে। ফলে জেলার খামারগুলোর বেশিরভাগেই কৃত্রিম প্রজনন, টিকাদান ও চিকিৎসাসেবা চলে গেছে হাতুড়ে ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন ডাক্তারের কব্জায়। খামার ব্যবস্থাপনায় বাড়ছে ব্যয়। ভুল পরামর্শেও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন খামারিরা। এতে ব্যহত হচ্ছে কাংখিত উৎপাদন।

রাজশাহী নগরীর এক গো-খামারি আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আমার খামারে মোট ৭৩টি গরু রয়েছে। অসুস্থ হলে লাখ টাকার গরুকে তো আর ফেলে রাখে যায় না। তাই নিজে নিজে চিকিৎসা করাই। প্রাণিসম্পদে ফোন দিলে বিভিন্ন তথ্য ও চিকিৎসা বলে দেয়। সরাসরি খামারে তাঁরা আসেন না। যা করার আমি নিজেই করি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার পবা উপজেলার নওহাটার গো-খামারি আসগর উদ্দিন জানান, প্রায় সময়ই গরুর বিভিন্ন রোগবালাই ও অন্যান্য সমস্যা হলেও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না। দেখা মেলেনা সরকারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও। অধিকাংশ সময়ই দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় খামার মালিকদের। ফলে হাতের কাছে যাদের পাওয়া যায় তাদেরকে দিয়েই চিকিৎসা করান তারা।

জনবল সঙ্কট ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহা. ইসমাইল হক। তিনি বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে জনবল সঙ্কটের বিষয়টি জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় অফিস থেকে সঙ্কট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অশ্বাস দেয়া হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীর শূন্য পদগুলোয় পদায়নের বিষয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক উপজেলায় শূন্য পদে পদায়ন হলে সমস্যার সমাধান হবে। অনেকেই উচ্চ পদে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ায় এই সেক্টরে একটা গ্যাপ পড়েছে। ফলে জনবল কমে যাওয়ায় অল্প কর্মকর্তা-কর্মচারী আগের তুলনায় খামারিদের কাছে গিয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে চিকিৎসা দিতে পারছে না। প্রাণিস্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় ওষুধের বিক্রয় ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে মানুষকে সচেতন এবং জেলার সর্বত্র কঠোরভাবে প্রশাসনও মনিটরিং করছে।’

ড. মোহা. ইসমাইল হক জানান, জেলায় স্টেরয়েডসহ ক্ষতিকারক এবং রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার শূন্যের কোটায় নিয়ে আসার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া সরকারি ওষুধ অন্য কোথাও বিক্রি হওয়ার বিষয়ে প্রমাণ পেলে বা জানতে পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, জেলায় হাঁস, মুরগি, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, গাভীসহ গবাদিপ্রাণি ও পোল্ট্রির মোট ১৪ হাজার ২২০টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ৩৫৪টি গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার। অন্য গবাদিপশুর মধ্যে গাভীর ৩৩৯টি, ছাগলের ২৬২টি, ভেড়ার ১৯৬টি ও মহিষের ১১৯টি খামার রয়েছে। এছাড়া লেয়ার মুরগি ৪৪৪টি, ব্রয়লার ৮৫৭টি সোনালী মুরগির ৫১টি, কবুতরের এক হাজার ২২২টি, টার্কি ১৯৪টি, কোয়েলের ৪২টি এবং হ্যাচারি বা ব্রিডার ৮টি খামার রয়েছে।

তথ্যানুযায়ী, জেলায় হৃষ্টপুষ্ট গরু-মহিষের ১০ হাজার ৪৭৩টি খামারে দেশি গরুর সংখ্যা ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২১৬। আর শংকর জাতের গরু রয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৪২১। মহিষ রয়েছে ১১ হাজার ৩৪২। অন্যদিকে, ২৬২টি খামারে ১০ লাখ ১৮ হাজার ৪৮ ছাগল এবং ১৯৬টি খামারে ৮৫ হাজার ৭৯৪ ভেড়া পালন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ১২৭টি হাঁসের খামারে রয়েছে আট লাখ ২৪ হাজার ৭১৫ হাঁস। মুরগি আছে ৮৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭৯। এক হাজার ২২২টি খামারে আছে তিন লাখ ৭৬৬ কবুতর।

 

আরপি/এমবি-৩



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top