করোনা পরিস্থিতিতে খামার ব্যবস্থাপনা ও খামারিদের করণীয়

রাজশাহীতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে গবাদি পশুর খামার ব্যবস্থাপনা ও খামারিদের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সাথে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারসেপ্ট এগ্রোভেট’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বার্ষিক সম্মেলন।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই আলোচনা ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাণিসম্পদের সাথে সম্পৃক্ত সকল পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরীর লক্ষ্যেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বলে জানান আয়োজকরা।
ইন্টারসেপ্ট এগ্রোভেট প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেনর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ ইসমাইল হক।
এ সময় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ভেটেরিনারী এন্ড এনিমেল সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার, বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ড. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অব.) কৃষিবিদ মো. আমিরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ ইসমাইল হক তার বক্তব্যে বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান প্রদেশে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস আমাদের সদ্য উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের উদীয়মান কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র প্রাণিসম্পদের সাথে যুক্ত খামারিরা এরই মধ্যে বিরাট আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ২৪ ঘন্টার একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আমন্ত্রিত অতিথি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ভেটেরিনারী এন্ড এনিমেল সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার গবাদি পশুর খামার ব্যবস্থাপনার উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন ও প্রজনন কর্মসূচির আওতায় জীবিকা নির্বাহ করে। তাই কোভিড পরিস্থিতিতে খামার ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লকডাউনের শুরুতে প্রথমেই ধাক্কা খায় ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনকারী খাত। লকডাউনে ভোক্তা হারায় পোল্ট্রি শিল্প। ব্রয়লার পচনশীল ও সংরক্ষণ করা সহজ নয় বলে স্থানীয় পর্যায়ে অতি অল্প মূল্যে এবং বড় অঙ্কের ক্ষতিতে বিক্রি করতে বাধ্য হয় খামারিরা।
বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ড. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ বলেন, এই শিল্পের সাথে যুক্ত খামারীদের জন্য করোনার উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কাজ করছে, গবাদি পশুর খামার ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্তদেও এগিয়ে আসমার আহ্বান জানান।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অব.) কৃষিবিদ মো. আমিরুল ইসলাম ও প্রাণিসম্পদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ।
এসময় বক্তারা আরো বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সামনে আসছে অর্থনৈতিক মহাদুর্যোগ, যাতে প্রথম আঘাত আসবে খাদ্য নিরাপত্তায়। সরকার যেমন একা পারবে না এটি মোকাবেলা করতে, তেমনি বেসরকারি খাতও এ যুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে না সরকারের সহায়তা ছাড়া। তাই এখনই সময় কৌশল নির্ধারণের, যাতে এই খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।
আলোচনায় দেশের গবাদি পশু ও পোল্ট্রি খামারিদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের প্রতিটি খামারের বিপরীতে সরকারিভাবে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান বক্তারা। পশুর খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রীর মূল্য কৃষকদের খামারীদের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার জন্য ভর্তুকি প্রদানের কথাও বলেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতায় কৃষক, খামারিদের উৎপাদিত প্রাণিজ পণ্য বাজারজাতকরণে সহায়তা করার জন্য বিপণন বিভাগ চালু করা প্রয়োজন বলেও তুলে ধরেন বক্তারা।
বার্ষিক এই আলোচনা ও সম্মেলনে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের মাঝে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়।
আরপি/টিএস-০৯
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: