রাজশাহী শুক্রবার, ১০ই মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১

জিকিরে করোনা তাড়াতে গিয়ে আক্রান্ত সন্দেহের তালিকায় ১৮ জন


প্রকাশিত:
১২ জুন ২০২০ ০৫:৫৮

আপডেট:
১০ মে ২০২৪ ০২:৩০

প্রতিকী ছবি

রাজশাহীর বাগমারার গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে করোনাভাইরাস তাড়ানোর জন্য বাড়িতে মারফত মতাদর্শী ব্যক্তিদের ডেকে নিয়ে জিকির ও ভোজের আয়োজন করার কারণে দুইজনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে।

করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসায় তাঁদের শরীরে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। রোগীর সংর্স্পশে আসা অন্যদের নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়াও গাজীপুরফেরত ঝিকড়া ইউনিয়ন এলাকার আরেক নারী পোশাক শ্রমিকের শরীরেও কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে।

বুধবার (১০ জুন) রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস উপজেলার নতুন করে তিনজনের কোভিডে আক্রান্তের বিষয় নিশ্চিত করেছেন। এনিয়ে উপজেলায় আটজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো। এর মধ্যে চারজন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী জানান, গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের গাজীপুরফেরত দম্পতির শরীরে গত ৩ জুন করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়।

করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর গত ৩০ মে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহীর ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। এর পর থেকে তাঁদের বাড়িটি লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন এমন আশংকায় গত ১ জুন রাতে মারিফত মতাদর্শী ব্যক্তিদের বাড়িতে ডেকে জিকির করার পর তাঁদের আপ্যায়ন করা হয়। এখানে প্রায় ২০জন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

পরের দিন গাজীপুরফেরত ওই নারীর স্বামী (৩০) চাকরিতে চলে যান। বিষয়টি একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানার পর গত ৪ জুন উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন রোগীর বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত ও এর সত্যতা পান।

এর পর প্রশাসনের পক্ষে করোনা আক্রান্ত পোশাক শ্রমিকের স্ত্রী (২৫) এবং তাঁর ১০ বছরের শিশু সন্তানসহ শাশুড়িকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে নেওয়া হয়। প্রশাসনের পক্ষে চাকরিতে চলে যাওয়া ওই যুবককে ফেরাতে এবং নিরাপদে রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে গত শনিবার ওই পোশাক শ্রমিক চাকরি থেকে ফিরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে ঢুকে পড়েন।


এদিকে করোনা তাড়ানোর জন্য বাড়িতে ভোজ ও জিকিরের বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পর ওইদিনের আয়োজনে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে আয়োজনের নেতৃত্ব দেওয়া স্থানীয় মারিফত নেতা এবং আক্রান্ত নারীর বড়ভাইয়ের (৪৫) নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহীর ল্যাবে পাঠানো হয়। তাঁদের দুইজনের শরীরেই করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ওইদিনের আয়োজনে উপস্থিত থাকা ১৮জনের নাম গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামি শুক্রবার ও শনিবার তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তবে এই যুগেও এই ধরণের ঘটনা প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরে করতে হয়েছে। করোনারোগীর সংর্স্পশে আসার কারণে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন।

স্থানীয় গোবিন্দপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বিজন কুমার সরকার বলেন, নতুন আক্রান্ত ওই ব্যক্তিরা রোগীর বাড়িতে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেছেন। তাঁরা একটি তরিকার মতাদর্শী বলে জানান।

অপরদিকে একই দিনে রাজশাহীর ল্যাবে গাজীপুরফেরত ঝিকড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের এক নারীর (৪৫) শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খবর দিলে গত মঙ্গলবার (৯জুন) নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে তাঁর শরীরে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। তবে এলাকার লোকজন আগ থেকেই ওই নারীর বাড়ি লকডাউন করে রেখেছেন।

এ নিয়ে বাগমারায় নয় জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হলো। এর মধ্যে চারজন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন।  

 

আরপি/ এএন-৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top