রাজশাহী শুক্রবার, ১১ই এপ্রিল ২০২৫, ২৮শে চৈত্র ১৪৩১

বাঘা-চারঘাটে বস্তা ভর্তি ধান নিয়ে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে শ্রমিক দল


প্রকাশিত:
১৮ মে ২০২০ ১৭:২৫

আপডেট:
১১ এপ্রিল ২০২৫ ০০:১০

 

ধান নিয়ে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে শ্রমিকের দল। এর আগে কৃষি অফিস থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে নিজ উপজেলার বাইরে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এবার ধান কাটতে গেছেন, রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট উপজেলার ১৯ হাজার ৫০০ শ্রমিক। জেলার বাঘা উপজেলা থেকে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক এলাকার বাইরে গিয়েছে ধান কাটতে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চারঘাট উপজেলায়।

কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা, পারিশ্রমিক হিসেবে তারা যে ধান নিয়ে আসবেন তার চালের মূল্য হবে প্রায় ৩০কোটি টাকা। তবে মাঠ পর্যায়ে খবর নিয়ে জানা গেছে, কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন নামানোর কারণে এবার শ্রমিকেরা ওই পরিমান ধান কাটার সুযোগ পাচ্ছেন না।

গত রোববার (১৭মে) বস্তা ভর্তি ধান নিয়ে নিজ এলাকায় ফিরেছেন আরিফপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম। ৩ সপ্তাহ আগে ১৫ জনের একটি দল নিয়ে নাটোরের সিংড়া এলাকায় থেকে ধান কাটতে গিয়েছিলেন। শ্রমের মূল্যে হিসেবে প্রত্যেকে ধান পাবেন প্রায় ১৮ মণ করে। আত্রাই থেকে ইতিমধ্যে ধান কেটে ফিরেছেন বাঘার পীরগাছা গ্রামের শ্রমিক আব্দুর রহিম।

তার দলে ১৫ জন শ্রমিক ছিলেন। তিনি বলেন, মেশিন নেমে মাঠ সাফ করে দিয়েছে। মাত্র পাঁচ মণ করে ধান নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, যাওয়ার সময় চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সনদ নিতে ২০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এখন গাড়ি-মহিষ নিয়ে গিয়ে তারা ফিরে এলেন। চলবেন কী করে তাই নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

নাটোরের নলডাঙ্গা থানায় ১৬ জনের একটি দল নিয়ে ধান কাটছেন বাঘার শ্রমিক লালন প্রামাণিক। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এখানে বাতাসে ধান পড়ে গেছে। মেশিনের এ ধান কাটা যাবে না। তারাই কাটছেন। তারা প্রায় ১৪/১৫ মণ করে ধান নিয়ে আসতে পারবেন।

১৫ জন শ্রমিক নিয়ে নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় রয়েছেন বাঘা উপজেলার শ্রমিক হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, তারা যে মালিকের ধান কাটছেন তার ৪৫ বিঘা ধান রয়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত আট বিঘা জমির ধান কেটেছেন। তাতে তারা তিন মণ করে ধান পেয়েছেন। সব ধান কাটা হলে প্রায় ১৩ মণ করে পারিশ্রমিক পাবেন। একই এলাকায় ১৬ জনের দল নিয়ে ধান কাটছেন বাঘার শ্রমিক মফিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, তার মালিকের ৫০ বিঘা ধান রয়েছে। বৃষ্টিতে ধান পড়ে গেছে। কাটতে কষ্ট হচ্ছে। এই ধান মেশিনে কাটতে পারবে না। তারা ১৪ থেকে ১৫ মণ ধান পেতে পারেন বলে আশা করছেন। নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় রয়েছেন বাঘার শ্রমিক শাহজাহাল আলী। তার দলে ৯ জন শ্রমিক রয়েছেন। তিনি বলেন, এখন জিরা ধান কাটছেন। তার মালিকের ২৫ বিঘা জমিতে এই ধান আছে।

এই ধান কেটে তারা চলে যাবেন। ব্রি-২৯ জাতের ধান পরে পাকবে। ওই ধান মেশিনে কাটবে। তারা এবার প্রায় ১০ মণ করে ধান পারিশ্রমিক হিসেবে পাবেন। তবে একই গ্রামের শ্রমিক রেজাউল করিম নওগাঁর রানিনগরে ধান কাটছেন। তার দলে ১২ জন শ্রমিক রয়েছে। তার দাবি তারা এবার প্রায় ২০ মণ করে ধান নিয়ে আসতে পারবেন।

বাঘা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই মৌসুমে বোরো ধান কাটার জন্য জেলার বাঘা উপজেলা থেকে ১২ হাজার ৫০০ শ্রমিককে ধান কাটতে যাওয়ার জন্য প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে চারঘাট উপজেলা থেকে ৭ হাজার শ্রমিককে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ সুলতান দাবি করেছেন, একজন শ্রমিক ধান কাটার পারিশ্রমিক হিসেবে অন্তত ১৫ মণ ধান নিয়ে আসবেন। এতে ১০ মণ চাল হবে। ৪০ টাকা কেজি হিসেবে ধরলে একজনের চালের দাম হবে ১৬ হাজার টাকা। এই হিসেবে ১৯ হাজার ৫০০ শ্রমিকের চালের মূল্য হয় ৩১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রমিকদের পাশাপাশি এবার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনও নামানো হয়েছে। এই মেশিন এক ঘণ্টায় এক একর জমির ধান কেটে বস্তায় ভরতে পারে। এতে সাড়ে আট লিটার ডিজেল ও চালকের পারিশ্রমিক মূল খরচ। মেশিনগুলো সরকারের খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প থেকে ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। ২৮ লাখ টাকার মেশিনে সরকার ১৪ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। নিজের ধান কাটার পাশাপাশি কৃষকেরা এই মেশিন দিয়ে ভাড়ায় অন্যের ধান কাটছে।

যোগাযোগ করা হলে বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান জানান, তার উপজেলায় ২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রথমে নিজ এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখানে শ্রমিকদের পাশাপাশি ২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ধান কাটছে। তবে তিনি মনে করেন তার উপজেলায় যে পরিমাণ ধান হয়েছে তাতে এই মেশিনে শ্রমিকদের ২০ ভাগের এক ভাগ ধান কাটা সম্ভব হবে। তবে শুকনা ও সমতল জমিতে মেশিন দিয়ে যতটা ধান কাটা যাবে, নরম ও অসমতল জমিতে ওইভাবে কাটা যাবে না।

 

আরপি/এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top